সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান পিপিএম বার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি মনে করি, সাংবাদিক পুলিশ ভাই ভাই। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবর্ধনা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। সভায় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিভিন্ন সাংবাদিকসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওসির নেতৃত্বে ২ বছরে ক্লু-লেস হত্যা মামলাসহ মোট ২৪টি মামলা দায়ের হয় থানায়। তার মধ্যে ২২টি মামলার রহস্য উদঘাটন করে ৩৯ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৫ জন আসামী বিজ্ঞ আদালতে ১শ’ ৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এছাড়া দু’বছরে ৬টি ডাকাতি মামলা দায়ের হয় থানায়। এরমধ্যে ৫টি মামলার রহস্য উদঘাটন করে ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ ২৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১০ জন আসামী আদালতে ১শ’ ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ১শ’ ৪৭টি মাদক মামলায় ৩শ’ ১৫ জন আসামীসহ ১০ হাজার ১শ’ ১৫ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭২ কেজি ৫শ’ গ্রাম গাঁজা, ৮শ’ ২০ বোতল ফেনিসিডিল, ৪০ বোতল বিদেশী মদ ও ৩শ’ ২৫ পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তাছাড়া বর্তমান সময়ের আলোচিত অপরাধী কিশোরগ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৬৮ জনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ৭৫ জন কিশোরগ্যাং সদস্যের অভিভাবকের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করে পুলিশ। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ৭শ’ ২৫টি জিআর, ৬শ’ ৮৩টি সিজার, ৮৯টি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী এবং দীর্ঘদিন যাবত পলাতক থাকা মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১ আসামী এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া ৩আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭শ’ ৭৩টি ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্তসন্ত্রাসী ৪ জন, অবৈধ অস্ত্রধারী ৫ জন, চাঁদাবাজ ২৩ জন, ছিনতাইকারী ৭৬ জন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্য ১০ জন, পুলিশ আইন মামলার ১শ’ ১৫ জন, ৫৪ ধারায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম বিতরণ ৩ হাজার ১শ’ ৯৪টি, ৯শ’ ৯৯ এর ৬ হাজার ৬শ’ ৬০টি কল রিসিভ করে ৬ হাজার ৫শ’ ১৫টির ব্যবস্থা গ্রহণ করে নারী, শিশু, বয়স্কসহ মোট ৭ হাজার ৭শ’ ২০ জনকে সেবা দেওয়া হয়। বিভিন্ন মসজিদভিত্তিকসহ নানা জনসচেতনতা সভায় যোগদান করে ২শ’ ২৪টি এলাকার মোট ২৮ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ৩৬ জন কিশোর অপরাধীকে আত্মসমর্পণ করানোর মাধ্যমে থানায় হাজিরা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সহায়তা করে ওসি মশিউর। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার বিভিন্ন ঘটনায় ১শ’ ৬৫টি নন এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল এবং অপরিচিত আগন্তুকের মতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য সর্বমোট ২৫ হাজার ৮শ’ ২০টি বি-রোল ইস্যু করা হয়েছে।ডাকাত দলের হাতে ডাকাতি হওয়া ক্লু-লেস অপরাধের তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ড্যানিশ কোম্পনীর ২৫ লাখ টাকার মালামাল এবং টিসিবির ৩০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে পুলিশ। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ দেশের আলোচিত ঘটনা জামায়াত ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ওসি মশিউরের নেতৃত্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অল্পসময়ের মধ্যে কোন ধরণের প্রাণহানী ছাড়াই গ্যাস সেল ২শ’ ৪৪টি, রাবার ২ হাজার ৫শ’ ৯৩টি, সিসা ১ হাজার ৩শ’ ৯টি, চায়না রাইফেল ৪৭ রাউন্ড ও এসএমজি ১৭ রাউন্ড গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন আইনে ৮টি মামলা করা হয় এবং ১০ জুন এসআই আজিজুর রহমানকে বিহারী কলোনী বড় মসজিদে মারপিটের ঘটনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এজাহারনামীয় আসামীদের অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বিহারী, ক্যাম্প হইতে ২ থেকে ৩শ’ পুরুষ ও মহিলা আন্দোলন নেমে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ ও টায়ার পুড়িয়ে আটককৃত আসামীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোন ধরণের প্রাণহানী ও হতাহত ছাড়াই গ্যাস সেল ৪৭টি, ৩শ’ ৫০ রাউন্ডরাবার বুলেট করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। ১৫ নভেম্বর জেলা পুলিশ কার্যালয়ে তৃতীয় বারের মতো শ্রেষ্ট ওসি হন মশিউর রহমান। এরআগে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর মশিউর রহমান নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন। একই বছর ২২ নভেম্বর ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে ডিআইজি হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের এ পুরস্কার গ্রহণ করেন ওসি মশিউর রহমান।এছাড়া তিনি চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পুণরায় ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ ওসি হন। তাছাড়াও তিনি কয়েকবার জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার পেয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মো. মশিউর রহমান বলেন, দু’বছর যাবত আমি এ থানায় কর্মরত আছি। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমি ভূমিকা রেখেছি। বিশেষ করে, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক, কিশোরগ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ ইত্যাদি। আসলে কিশোর আর মাদকের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, মাদকসেবীরা পরিবার কাছে মাদক টাকা না পাওয়ায় নানা রকম অপরাধ করে থাকে। মূলত মাদক সেবনের জন্যই কিশোরগ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাই আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। কোনো স্থানে এমন দৃশ্য দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ওসি বলেন, আমি মনে করি, সাংবাদিক পুলিশ ভাই ভাই। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করে সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা সর্বদা সমাজের অন্যায়গুলো তুলে ধরেন। তাদের সহযোগিতাইআমি যতদিন আছি মাদক, কিশোরগ্যাংসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে চাই।