শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর
বর্জ্য দূষণ ও দখলে বিপর্ণ কর্ণফুলী নদী। কালের খবর

বর্জ্য দূষণ ও দখলে বিপর্ণ কর্ণফুলী নদী। কালের খবর

দূষণ ও দখলের মুখে রয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কর্ণফুলী। নদী রক্ষায় নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্দেশনা এসেছে আদালত থেকেও। এছাড়াও, এটি দখল ও দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন। এসবের জেরে কর্ণফুলীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এখনও বাস্তবায়িত হয়নি ওইসব প্রতিশ্রুতি ও মহাপরিকল্পনা। আর এ সুযোগেই নির্বিঘ্নে নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য এবং দখল করা হচ্ছে নদীর জমি। ফলে দূষণ ও দখল হুমকির মুখেই রয়েছে কর্ণফুলী।

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৬টি খাল ও নালা দিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ টন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৫২টি খাল ও নালার মুখ রয়েছে কর্ণফুলী নদী অভিমুখে। এর অনেকগুলো দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে ৩৬টির মোটামুটি অস্তিত্ব রয়েছে। মানব ও কঠিন বর্জ্য কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এতে করে কর্ণফুলী নদীতে কঠিন বর্জ্য হিসেবে পলিথিন, বোতল, কাপড়সহ অন্যান্য পদার্থের একটি শক্ত স্তর হচ্ছে। একইভাবে অপরিশোধিত তরল বর্জ্যের কারণে নদীতে দূষণের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকলে বহু আগেই এটি বুড়িগঙ্গার ন্যায় দূষণে পতিত হতো।

চট্টগ্রাম মহানগরীর খাল পুনঃখনন ও সংস্কার মূলত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) করে থাকে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিলুপ্ত খাল, নালা খনন, সংস্কার এবং দেওয়াল নির্মাণকাজ চলছে। নগরীর বাসাবাড়ির কঠিন বর্জ্য অপসারণসহ এগুলো ডাম্পিং সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ করে থাকে। নগরবাসীর পানির সমস্যা নিরসনে সুপেয় পানি সরবরাহের দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার।

একইভাবে মানব বর্জ্য পরিশোধনের দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার। ওয়াসা নগরীতে পানি সরবরাহ করলেও সুয়ারেজ কার্যক্রম নেই। যদিও সম্প্রতি সুয়ারেজ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনকার নগরবাসীর মনুষ্য বর্জ্যের শেষ ঠিকানা হচ্ছে নালা-নর্দমা-খালের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী।

’৯০-এর দশকের প্রথম দিকে নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের নিচ দিয়ে বিশাল আকারের বক্স কালভার্ট দেয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত স্থাপন করা হয়। ঐ বক্স কালভার্টের মুখ পড়েছে বন্দরের ১ নম্বর জেটি বরাবর কর্ণফুলী নদীতে। ফলে নগরীর বিশাল অংশের সব ধরনের ময়লা আবর্জনা ঐ কালভার্ট দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। সে সময় কালভার্ট নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কালভার্টের নদী মুখে সিলটেপ স্থাপন করা হবে যাতে প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। ফলে প্রায় ৩০ বছর ধরে সব ধরনের বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে।

একইভাবে চাক্তাই খালসহ বেশ কয়েকটি বড় খাল-নালা দিয়ে বিপুল পরিমাণ কঠিন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। তবে প্রতিদিন জোয়ার ভাটার কারণে কর্ণফুলী নদীতে পড়া ঐ সব ময়লা আবর্জনার বিরাট অংশ সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। এরপরও একটা অংশ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রতিদিন জমা হচ্ছে যার বিরাট অংশ পলিথিন, পেট বোতল, কাপড়সহ অন্যান্য কঠিন বর্জ্য। এর ফলে বর্তমানে বুয়েটের তথ্যানুযায়ী কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে উজানে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত এলাকায় ২ মিটার থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত কঠিন বর্জ্যের স্তর পড়েছে। এর ফলে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ঐ এলাকায় দুই দফায় বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কর্ণফুলী নদীর নাব্য রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরকে প্রধান ভূমিকা রাখার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে নগরীর সব খাল, নালা-নর্দমার মুখে পলিথিনসহ কঠিন বর্জ্য আটকানোর জন্য নেট স্থাপন চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব উদ্যোগে করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। বাকিগুলো উচ্ছেদের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আবারও তারা অভিযান পরিচালনা করবেন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com