শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন । আরজেএফ’র উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। কালের খবর মসজিদ উন্নয়নের কাজে অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর সাতক্ষীরায় ভারত থেকে অবৈধ পথে ফেরার সময় চার বাংলাদেশী আটক। কালের শেখ হাসিনার গাড়িবহরে মামলার সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার। কালের খবর পূর্বগ্রাম ব্লাড ডোনার গ্রুপের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর ব্রয়লারের চেয়ে চাহিদা বেশি বাউ মুরগির, খুশি খামারিরা নবীনগরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই সহোদর চাচাতো বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু। কালের খবর প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ। অটো মালিক, শ্রমিক সমিতির চেক বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর
দালাল ছাড়া হালাল হয় না কিছুই। কালের খবর

দালাল ছাড়া হালাল হয় না কিছুই। কালের খবর

এই দেশে দালাল ছাড়া কোনো কিছুই হালাল করা যায় না। দালাল শব্দটা গালি টাইপের। কিন্তু এতে দালালের কিছু যায় আসে না। কারণ দালাল জানে মানুষ তাকে যতই গালি দিক না কেন শেষ পর্যন্ত তাকেই (দালালকে) কাজে লাগবে। আর তাই দালাল সব সময়ই বেপরোয়া ও উচ্চকিত আচরণ করে।

দালাল ছাড়া হালাল হয় না কিছুই
রেজানুর রহমান,

কয়েকদিন আগে সারা দেশে বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কয়েকশ ব্যক্তিকে ‘দালাল’ হিসেবে শনাক্ত করার পর জরিমানা করা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, এ ঘটনার পর দেশে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘দালালমুক্ত’ হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

ব্যাপারটা অনেকটা পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতো। ভরা পুকুরে ঢিল দিলে গোল পানির ঢেউ দ্রুত সরে যায়। পরক্ষণেই আবার ঢেউগুলো ঢিল দেওয়ার জায়গায় এসে মিশে যায়। দেখে মনে হবে এর আগে পুকুরে কোনো ঢিলই পড়েনি।

দেশের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশের অবস্থা পুকুরের ঢিলের মতো। মাঝে মাঝেই এভাবে দালাল ধরার অভিযান হয়। ধর ধর বলে একটা শোরগোল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই অবস্থা বেশিক্ষণ থাকে না। অভিযান শেষ। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দালালরা আবার স্বগৌরবে ফিরে আসেন।

আসাদ চৌধুরীর কবিতার মতো, ঝাঁকের কই আবার ঝাঁকে মিশে যায়। কেন ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে? এখানে একটা স্বার্থ আছে। দেনা-পাওনার স্বার্থ! দালালদের বেড়ে ওঠার পিছনে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে কারও না কারও যোগসূত্র আছে। যে কাজ স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাওয়ার কথা। সেই কাজেও অহেতুক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। আর তখনই ‘দালাল’ নামের ব্যক্তিটি সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মাঝখানে সুচতুরভাবে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করে ফেলে। ‘কিছু টাকা খরচ করেন। দ্রুত আপনার কাজ হয়ে যাবে।

এটাকে ‘বকশিস’ নাম দেওয়া হয়েছে। এই বকশিসের ভাগ শুধু দালাল একা পায় না। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মচারী থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় অফিসাররাও পান। ফলে অধিকাংশ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ‘দালাল’ খুবই গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি। কখনও কখনও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই কেউ কেউ সেবা গ্রহীতাকে ‘দালাল’ ধরার পরামর্শ দেন! কারণ দালাল কাজটা নিয়ে এলে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারও কারও চোখ-মুখ আনন্দে নেচে ওঠে। আহা! কী আনন্দ! কী আনন্দ!

পাসপোর্ট। দেশের নাগরিকের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র। নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। তথ্যপ্রযু্িক্তর এই বিস্ময়কর যুগে ঘরে বসেই নির্ধারিত ঠিকানায় ব্যক্তির তথ্য পৌছে দেওয়া যায় সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়। কাজেই এক্ষেত্রে তো দালাল এর প্রয়োজন নেই। অথচ পার্সপোর্ট অফিসেও দালালের দৌরাত্ম্য কমেনি। দেশের যে কোনো পার্সপোর্ট অফিসে গেলে যে দৃশ্যটি চোখে পড়বে  তা হলো- একদল লোক আপনার কাছে এগিয়ে আসবে। দ্রুত পার্সপোর্ট করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে। প্রকাশ্যে এ জন্য বকশিসের নামে টাকা চাইবে!

ভিড় এড়ানো, নানান ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পার্সপোর্ট দালালদের মিষ্টিকথায় মোহিত হয়ে যান। যে কাজ নিজে করা সম্ভব, সেই কাজ দালালের ওপর ছেড়ে দেন! ভাবেন, ‘কয়েক হাজার টাকাই তো! তার জন্য এত ঝাক্কি ঝামেলায় গিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।’ সেবা গ্রহীতার এ মানসিকতাই দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে দেয়। দালাল প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকলেও দালালের দৌরাত্ম্য কমে না মোটেও।

সরকারি অফিস থেকে কোনো কাজের ফাইল বের করে নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দালাল ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই কেউ না কেউ দালালের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। অথবা বাইরের কোনো ব্যক্তি দালাল হিসেবে আবিভর্‚ত হয়। ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’ এই আদর্শকেই নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান উভয় পক্ষ। ফলে সরকারি অফিসের ফাইল বের করে আনার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দালালই হর্তাকর্তা বিধাতা হয়ে ওঠে।

ভূমি অফিসের ‘দালাল’ আরও মারাত্মক। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এমনকি শহরাঞ্চলেরও অধিকাংশ মানুষ জমিজমার বিষয়ে তেমন একটা জ্ঞান রাখে না। ফলে জমি সংক্রান্ত বিরোধ খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে দালালদের ভূমিকা খুবই উদ্বেগজনক। এমনও দেখা যায়, একই জমির বিরোধ নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে একজন দালালই বাদী বিরাদী উভয় পক্ষের হয়ে টাকা খায়। আশার কথা, ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে ‘ভূমি ভবন’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন থেকে নাকি এ ভবনেই কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের ভূমি ব্যবস্থার দেখভাল করা হবে। ভবনটির উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষ যেন অযথা হয়রানীর শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকারি হাসপাতালে ‘দালাল’দের দৌরাত্ম্য আরও ভয়াবহ প্রসঙ্গ। মারাত্মক অসুস্থ রোগী। হাসপাতালের বেড দরকার। সোজা পথে বেড পাওয়া মুশকিল হবে। দালালের স্মরণাপন্ন হলেই বেড পাবেন সহজেই। দালাল সাথে থাকলে সুচিকিৎসাও পাবেন এটা নিশ্চিত।

যুগ পাল্টেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নিজেদের বদলে ফেলেছে। শুধু বদল হয়নি দালালের দৌরাত্ম্য। এক্ষেত্রে একটা মজার গল্প বললেন আমার এক বন্ধু। গল্পটা এরকম- পেনশনের টাকার ব্যাপারে এক সরকারি দফতরে গেছেন এক ভদ্রলোক। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই তার পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র চ‚ড়ান্ত হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। কিন্তু ভদ্রলোককে প্রতিদিনই আজ না কাল বলে ঘোরানো হচ্ছে। ক্লান্ত-শ্রান্ত ওই ভদ্রলোককে একদিন একজন দালাল বললেন- স্যার এভাবে তো হবে না। কিছু দ্যান। আমি দুই একদিনের মধ্যেই আপনার ফাইল বের করে  দেব। বাসায় ফিরে পরিবারের সাথে কথা বলে পরের দিন দালাল ধরলেন ভদ্রলোক। এর পরের দিনই তার ফাইলে সই হলো!

এবার বোঝা গেল দালাল’ এর কী শক্তি? তবে আধুনিক সমাজ কাঠামোর উন্নয়নে দালালরা মোটেই ভালো লোক নন এটা যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। দালালদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, প্লিজ…

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক আনন্দ আলো।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com