সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন
টাঙ্গাইল থেকে আহমেদ সাজু, কালের খবর : টাঙ্গাইলের সখীপুরে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সংরক্ষিত বন দখল করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস করছেন। ১৯২৭ সালের বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশাধিকার নিষেধ’ থাকলেও সখীপুরে অবাধে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান। উজাড় হচ্ছে শাল ও গজারি গাছ। ট্রাকে করে দিন-রাত দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে এসব মূল্যবান গাছ। এতে বিলুপ্তির পথে শাল-গজারি ও সংরক্ষিত বনভূমি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল বন বিভাগের সখীপুর উপজেলার চারটি রেঞ্জের ১৪টি বিটের আওতাধীন সংরক্ষিত শাল-গজারি বনের ভেতর দখল করে অবৈধভাবে স্থায়ী বসবাস করছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বনভূমি এসব জমি উদ্ধারে সম্প্রতি দখলকারীদের বিরুদ্ধে দুই হাজারের বেশি উচ্ছেদ মামলা করেছে । বন কর্মকর্তারা দখলকারীদের চিহ্নিত করে এ তালিকা প্রণয়ন করেছেন বলে স্থানীয় ও টাঙ্গাইল বিভাগীয় বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন কর্মকর্তা ও বন সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় রাজনৈতিক, স্থানীয় প্রভাবশালী, ভূমিদস্যু ও স্থানীয় দালাল চক্রের যোগসাজশে প্রতিনিয়তই সংরক্ষিত শাল-গজারির বন উজাড় হচ্ছে। বনদস্যুরা দিন-রাত সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি কেটে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। ওইসব গাছ কেটে স্থানীয় করাতকলগুলোতে চেরাই করে কাঠ পাচার করা হচ্ছে। উজাড় হওয়া ওইসব বনভূমিও পর্যায়ক্রমে দখলে চলে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে বসতবাড়ি, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, দোকানপাট, মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির ও খেলার মাঠ। এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ।সরেজমিন উপজেলার হতেয়া, বহেড়াতৈল, বাঁশতৈল ও ধলাপাড়া রেঞ্জের বিভিন্ন বিট কার্যালয় ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য ও চিত্র পাওয়া গেছে। বহেড়াতৈল রেঞ্জের ডিবি গজারিয়া বিটের দেওবাড়ী মৌজায় বনের ভেতর অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাড়ির মালিক ইয়ার মাহমুদ জানান, বনের লোকজনকে ম্যানেজ করেই বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমার মতো অনেকেই এভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে।
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাল খান জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪০ বছরের বিভিন্ন সময়ে এসব বনভূমি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে। বনভূমি রক্ষায় দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াতে বর্তমানে এ রেঞ্জে নানা প্রজাতির ৫ লাখ চারা নতুন করে রোপণ করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ইউএনও চিত্রা শিকারী জানান, দীর্ঘদিনে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিশাল অংশের জমি জবরদখলে চলে গেছে। দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করছি।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মুহাম্মদ জহিরুল হক জানান, দখলকারীদের উচ্ছেদ তালিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।