সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বৃহত্তম নওগাঁ হাটের তিন বছরের ব্যবধানে ইজারা মূল্য বেড়েছে এক কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হু-হু করে বাড়িয়েছে হাটের মূল্য।
এদিকে খাজনা আদায়ের সরকারি বিধি বিধান আগের মতই রয়ে গেছে। কিন্তু হাটের ইজারাদার আকবার আলী ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, হাটের প্রান্ত জায়গার বাইরের যে সব দোকানী ও হাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে কাঠ, স্টীলসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করে আসছেন তাদের থেকেও জোরপূর্বক খাজনা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঐ ইজারাদারের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এ কর্তা ব্যক্তি জানিয়েছেন, (১৩ জুন) রবিবারের মধ্যে ইজারাদরকে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মোয়াখাড়া গ্রামের আমজাদ ব্যাপারী বলেন, দুই যুগ কালেরও অধিক সময় ধরে তিনি নওগাঁ হাটে গবাদিপশু বেঁচা-কেনা করেন। কিন্তু কখনো এত বেশী টাকা খাজনা দিতে হয়নি। ১টি গরুতে ৬০০ টাকা খাজনা নিচ্ছেন ইজারাদার। ছাগল প্রতি খাজনা দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। আবার বিক্রেতাদের কাছ থেকেও খাজনা নেওয়া হচ্ছে। গরু বিক্রি করলে ১০০ টাকা ও ছাগল বিক্রি করলে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। অনুরুপ অভিযোগ করেন ব্যাপারী আব্দুস ছাত্তার, শাহেদ আলী, আলতাব হোসেন সহ বেশ কয়েকজন। তারা আরো বলেন, এভাবে মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলে তারা নওগাঁ হাট ছেড়ে ব্যবসার জন্য অন্য হাট বেছে নেবেন।
লিখিত অভিযোগে জসিম উদ্দীন, ছাইফুল ইসলাম, সেরাজুল ইসলাম, এনছাব আলী, মোবারক হোসেন ও আছাদুল হকসহ অর্ধ শতাধিকেরও অধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা হাটের জায়গার বাইরে মালিকানাধীন নওগাঁ মৌজার ৯৫৮-৯৬৫ সাবেক দাগের ভূমিতে বাড়িঘড় নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তাদের সবার বাড়ির সামনে নিজেদের জায়গাতেই বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে। অথচ সম্পূর্ণ নিয়ম বহি:র্ভুতভাবে সেসব দোকানের মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার হাটের দিন দেখা গেছে, ইজারাদারের লোকজন হাটের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে টেবিল বসিয়ে খাজনা আদায় করছেন। অভিযোগকারী দোকানীদের ব্যক্তিমালিকানা জায়গাতেও টেবিল বসিয়ে কয়েকজন খাজনা তুলছেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়। তারা খাজনা আদায়ের রশিদে টাকার অংক ফাঁকা রেখে শুধুমাত্র ক্রেতা-বিক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোট মূল্য লিখে দিচ্ছেন। খাজনা আদায়ের তালিকা হাটের কোথাও নেই।
উপজেলা হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটি সূত্র মোতাবেক সরকার নির্ধারিত খাজনা গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাটের পেরিফেরির বাইরে থেকে কোনো খাজনা আদায় করা যাবেনা। নওগাঁ হাটের ইজারাদার আকবার আলী বলেছেন, অনেক বেশী পরিমাণে টাকা মূল্য দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছেন। তাকে প্রতি হাটে ৭ লাখ করে টাকা খাজনা আদায় করতেই হবে। নয়তো নিশ্চিত লোকসান গুণতে হবে। যে কারণে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম করতে হচ্ছে। তাতে কিছুই করার নেই!
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. মেজবাউল করিম বলেন, সরকারি বিধি বিধানের বাইরে খাজনা নেওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে ইজারাদারকে এসবের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।