সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিলদহর বাজারে নির্ধারিত খাজনা ছাড়া কয়েক গুণ বেশি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। এই অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের প্রমাণ লোপাট করতে খাজনার রশিদে টাকার পরিমাণ না লিখে পরিশোধ লেখা হচ্ছে। ইজারাদারদের কারণে হাটটিতে ক্রেতা বিক্রেতা কমতে শুরু করেছে। হাটে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য।
সাধারণ কৃষক, বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্যের বিখ্যাত একটি হাট সিংড়া উপজেলার বিলদহর হাট। যা এক সময় একান্নবিঘা হাট নামে পরিচিত।
সপ্তাহে বৃহস্পতি ও রবিবার এখানে হাট বসে। এ হাটে ধান, ভুট্টা, সবজি, বাঁশসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়।
এই হাটে পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলা, চামারী, কলম, ডাহিয়া ও হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে আসে। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করে দেশের নানা প্রান্তে পাঠিয়ে থাকে।
এছাড়া দৈনিক বাজারে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। কিন্তু হাটে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কয়েকগুন অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন হাট ইজারাদার। সরকার নির্ধারিত খাজনার তালিকা প্রদর্শন করার নিয়ম থাকলেও এ হাটে কোথাও তা প্রদর্শিত হতে দেখা যায়নি ।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বিলদহর হাট বাজারে ব্যবসায়ীদের সরকার–নির্ধারিত খাজনার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। ইজারাদারের চাহিদামতো খাজনা না দিলে ব্যবসায়ীদের মারধর করা হচ্ছে।
দূরদূরান্ত থেকে আসা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক হারে টাকা তোলা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হয়নি।
বেশ কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ী জানান,বাজারের খাজনা আদায়ের কোনো নিয়মকানুন নেই। ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে কর্দমাক্ত মাটিতে বসে ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু খাজনায় কোনো মাফ নেই। মাংসের দোকান প্রতি সরকারী খাজনা ৩০ টাকা আদায় করার কথা থাকলেই ৪০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে । সরকার –নির্ধারিত খাজনার চেয়ে ১৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি আদায় করা হয়। এমনকি গ্রামের বাড়ির গাছ বিক্রি করলেও ইজারাদারের খাজনা দিতে হয়। হাসান আতিক নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, ১০০০ টাকায় বাঁশ কিনে ১০০ টাকা খাজনা দিলাম। কিন্তু আমাকে ১০ টাকার খাজনার রশিদ দিয়েছে।
আলম নামে একজন জানান, বিলদহর বাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় খাট কিনে ৭০০ টাকা খাজনা দিয়েছি। অথচ সরকারি নীতিমালায় ১৬ টাকা খাজনা। আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়া হচ্ছে। আমরা বাজারে সরকার–নির্ধারিত খাজনার চার্ট টাঙিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু খারাপ ব্যবহার ছাড়া আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি।
হাটের ইজারাদার বেলাল হোসেন সরদার বলেন, সবকিছুই কি নিয়ম মেনে চলে? নিয়মের বাহিরেও চলতে হয়। তবে অভিযোগগুলো সত্য নয়। আগের মতোই খাজনা আদায় করছি। সরকারী খাজনার তালিকা নিয়ে আমরা ডিজিটাল সাইনবোর্ড বানাতে দিয়েছি।
তিনি স্বীকার করেন, আলহাজ্ব শাহাদাৎ হোসেন তার নামে হাটটি ইজারারা নিয়েছেন। তার সাথে কথা বলুন। তার নির্দেশ মেনে সেভাবেই রশিদ লেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত আছেন।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় এবং হাটে আগত জনসাধারণের সচেনতার জন্য মাইকিংয়ের নির্দেশনা থাকলেও ইজারাদার তার কিছুই করেননি।
চামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমরা সুনামের জন্য হাটটি নিয়েছি। আমরা নেওয়ার পর অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না । বরং আমরা কৃষকের কাছ থেকে খাজনা নেই না। এসব মিথ্যা অভিযোগ।
হাট বাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, খাজনার সরকারি মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে তারপরে হাট বসানোর কথা বলা হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সরকার নির্ধারিত হারের বেশি খাজনা আদায়ের প্রমাণ পেলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।