যশোরের শার্শা উপজেলার ৬ নম্বর গোগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মাদক ব্যবসা ও সালিসের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নিজে ও তার দুই ছেলেসহ সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইউপি সদস্য বাবুল হোসেনকে জনসম্মুখে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছেন।
স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাবুল মেম্বারকে হাসপাতালে পাঠাতে চাইলেও তারা পাঠাতে দেয়নি। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে তাকে উদ্ধার করে যশোর কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
এলাকার লোকজন জানান, গোগা ইউনিয়নপরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ এর ছেলে সম্রাট হোসেন মাদক ব্যবসা সহ নানাবিধ অপকর্মে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জের ধরে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে গোগা বাজারে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
সুত্রে জানা গেছে, রশিদ চেয়ারম্যানের ছেলে সম্রাট হোসেনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের মেম্বার বাবুল মিয়ার মধ্যে বিভিন্ন অপকর্মের ভাগ বাটোয়ারার সম্পর্ক থাকলেও সম্রাট হোসেনের একটি ফেনসিডিলের চালান আটকের জের ধরে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে ঠান্ডা লড়াই ও শত্রুতা চলে আসছিল।
ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডভুক্ত হরিশ চন্দ্রপুর গ্রামের বিভিন্ন সালিস, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে হাতিয়ে নেওয়া মোটা টাকা বাবুল মেম্বার ও সম্রাটের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হতো। এ সকল অপকর্মে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত রশিদ চেয়ারম্যানের কাছে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে তারা ভয়ে সম্রাট হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।
অভিযোগ পেয়ে রশিদ চেয়ারম্যান বাবুল মেম্বারকে বিভিন্নভাবে নেওয়া এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলে। তখন বাবুল মেম্বার বলে টাকা পয়সা আমি একা নেয়নি। আপনার ছেলে সম্রাটও আমার সঙ্গে নিয়মিত সমান ভাগ নিয়েছে। টাকার ব্যাপারে অব্যাহত চাপের মুখে বাবুল মিয়া রশিদ চেয়ারম্যানকে এক লাখ টাকা প্রদান করে এবং বাকি টাকা পরে দেবে বলে জানায়।
এদিকে নির্বাচনের আগে রশিদ চেয়ারম্যান বাবুল মেম্বারের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার করেছিলেন। বাবুল মেম্বার সেই টাকা ফেরত চান। এমনকি এই টাকার বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিকে অবহিত করেন। সংসদ সদস্য রশিদ চেযারম্যানকে এই টাকা ফেরত দিতে বলেন। এরপরই রশিদ চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
সে বাবুল মেম্বারকে বলেন, এই টাকা তো তোর নমিনেশন বাবদ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তুই বিনা ভোটে মেম্বার হয়েছিলি। তুই আবার ঋণ হিসাবে এটা দাবি করছিস কেন? এরকম কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রশিদ চেয়ারম্যান তার ছেলে সম্রাটকে মোবাইল ফোনে বাজারে আসতে বলে। সম্রাট তার আরেক সহোদর সুমন হোসেনসহ বেশ কয়জন সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে আসেন।
এরপরই রশিদ চেয়ারম্যান নিজেই বাবুল মেম্বারকে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে শত শত লোকের সামনে চড় থাপ্পড় লাথি মারতে থাকে। চেয়ারম্যানের ছেলে সম্রাট সুমনও সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় বাবুল মেম্বার মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বহনকারী ইজিবাইক থেকে সন্ত্রাসী রশিদ বাহিনী তাকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে আসে। এরপর স্থানীয় লোকজন অনেক চেষ্টা করে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনা জানতে পেরে শার্শা উপজেলা আাওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাস্থলে যান এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
গোগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, ইউপি সদস্য তবিবার রহমান ও স্থানীয় গ্রামবাসি লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রশিদ চেয়ারম্যানের ছেলে সম্রাট একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে মাদক ব্যবসার মামলাও আছে শার্শা থানায়।
এসব বিষয়ে আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে তবে আমরা সেটা পরিষদে বসে মিটমাট করার চেষ্টা করছি।
এদিকে বাবুল মেম্বার এর স্ত্রী রাজিয়া খাতুন অভিযোগে জানান, আমার স্বামীর মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের কারণে যশোর কুইন্স হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করার পর যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।