সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
ডেমরা প্রতিনিধি ,কালের খবর :
রাজধানীর ডেমরায় করোনাভাইরাস আতঙ্কে এখানকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছেনা বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে এ ধরনের রোগী আসলেই টালবাহানা শুরু করছেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ডাক্তার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে রোগীদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দু’একটি হাসপাতালে কিছুটা সেবা মিললেও জ্বর, সর্দি বা কাশির সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীকে চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা।
অভিযোগ, জ্বর অথবা সর্দি-কাশির রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলে চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসের ভয়ে এ ধরনের উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না। হাসপাতালে প্রবেশের আগেই রোগীর উপসর্গ জ্বর ও সর্দি-কাশি থাকলেই অন্য কোথাও যেতে বলে দেয়া হচ্ছে। এভাবে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা নানা কষ্টের মধ্যে পড়ছেন।
সরেজমিন রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ডাক্তার সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে বাঁশেরপুল একটি হাসাপাতালে গিয়ে কোন ডাক্তার পাওয়া যায়নি, রোগীরা এসে ফিড়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। বাশেরপুল মেডি হেল্থ কেয়ার ও মাতুয়াইল মুসলিম নগরে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে কোনমতে চিকিৎসাসেবা চলছে। তবে সর্দি-কাশি রোগীর বেশিরভাগ ফিড়ে যাচ্ছেন। ওই দু’টি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাক্তার এম.জি ফেরদৌস করোনা আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই ডাক্তার সংকটসহ নানা সমস্যায় রোগী দেখা বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া ডাক্তার সংকটে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গের রোগীরা যথাযোগ্যভাবে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেনা ডেমরার সারুলিয়া জেনারেল হাসপাতাল, আল-রাফি হাসপাতাল, হাজীনগর এলাকায় হলি এইড হাসপাতাল, মুরগির ফার্ম এলাকায় ইসলামিয়া হাসপাতাল, আল নূর হাসপাতাল, বামৈল এলাকার রেনোভা হাসপাতাল, কোনাপাড়া এলাকার মেডি হোপ হাসপাতালে কোনমতে চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও তা আশানুরুপ নয়। এছাড়া এখানকার হোসেনা আরা ক্লিনিক, ইসলামিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও মেডি কেয়ার হাসপাতালে ঠান্ডা, কাশি, জ¦র ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীরা সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেনা।
কোনাপাড়ায় ঠান্ডা, হালকা জ্বর ও কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বড়ভাঙ্গা এলাকায় বসবাসরত প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ কালের খবরকে বলেন, এ সময়টায় গরম-ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছরই জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি হয়। কিন্তু করোনার ভয়ে কোন হাসপাতালেই ডাক্তার দেখাতে পারছিনা।
আরেক রোগী আনজুম আরা নামে এক ভদ্র মহিলা কালের খবরকে বলেন, আমরা থাকি ডগাইর এলাকায়। কয়েকটি হাসপাতাল কোনাপাড়ায় রয়েছে বলে ছোট দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাই জ্বর ও কাশির ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে দেখানে না পেরে অনেক ঘুরে হাজীনগর এলাকায় গিয়ে ডাত্তার দেখাতে পেরেছি। তাও ভয়ে ছিলাম ওখানকার প্রধান ডাক্তার করোনা আক্রান্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস.এইচ.এস হাসপাতালে প্রধান চেম্বার ডাক্তার শওকত হোসেন সুমন কালের খবরকে বলেন, ডাক্তার সংকট ও করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থার কমতি থাকাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ডেমরায় হাসপাতালগুলোতে প্রকৃতভাবে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গের রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেননা। তবে মোটামুটি আকারে সর্বত্রই চিকিৎসা মিলছে বলে জানি। তবে আমাদের হাসপাতালে প্রতিনিয়ত ৩ জন চেম্বার ডাক্তারসহ ডিউটি ডাক্তার থাকেন। প্রতিদিনই ৫০/৬০ রোগীও দেখছি। করোনা উপসর্গ দেখলে রোগীদের আইসোলেশনসহ চিকিৎসা পদ্ধতিও জানিয়ে দিচ্ছি। রোগী দেখতে দেখতে আমি নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছি। দুই রোগীকে প্লাজমা দান করেছি। তবে এখানকার রোগীদের কথা চিন্তা করে এ হাসপাতালে করোনা ইউনিট করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।