সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
মুক্তিযোদ্ধা আম্বর আলীর এখন বয়স ৭০ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধে যান সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের এই বাসিন্দা। তখন তিনি ২৫ বছরের যুবক।
রণাঙ্গনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আটজনকে একাই গুলি করে হত্যা এবং একজনকে জীবিত ধরে নিয়ে আসেন তিনি। আর এখন হুইল চেয়ার তার নিত্যসঙ্গী।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বার্ধক্যজনিত কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করেন। ছোট ছেলে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয়বর্ষে পড়ে। বড় ছেলের বেতনের টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় চলে আম্বর আলীর চিকিৎসা এবং সংসার।
গেরিলাযোদ্ধা আম্বর আলীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আম্বর আলী বলেন, যুদ্ধে ভারতের বালাটে মৌলাম ক্যাম্প ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হন। পরে মেঘালয় রাজ্যে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের শিলং নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে তাকে অস্ত্র ও গুলি দেওয়া হয়।
যুদ্ধের স্মৃতি উল্লেখ করে আম্বর আলী বলেন, সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বেড়িগাঁও, কৃষ্ণনগর, ষোলঘর, হালুয়ারঘাট ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন তিনি। বিশেষ করে মেজর মোতালেব কৃষ্ণনগরে পাক বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য আম্বর আলীকে দায়িত্ব দেন। তার সঙ্গে গোদিগাঁও গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, চিনাউড়ার গ্রামের আকবর আলী ও ইউসুফ আলীসহ অন্যরা এই যুদ্ধে অংশ নেন। মেজর মোতালিব ‘আল্লাহ বাঁচিয়ে আনলে দেখা হবে’- বলে বিদায় জানান।
কৃষ্ণনগরে গেরিলা আক্রমণে আম্বর আলী একাই আটজন পাক সেনাকে গুলি করে হত্যা করেন। একজনকে জীবিত ধরে নিয়ে আসেন। এই বীরত্বে মেজর মোতালিব তাকে মেডেল উপহার দেন। সেই আম্বর আলী এখন অভাব-অনাটনে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।
বড় ছেলে নাজমুল হোসেন বলেন, ডাক্তার বাবার ঘাড়ে অপারেশন করাতে বলেছেন কিন্তু টাকার অভাবে করা সম্ভব হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, বাবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
তিনি জানান, অপারেশন করার জন্য লক্ষাধিক টাকা লাগবে। কিন্তু টাকা না থাকায় চিকিৎসা হয়নি।