রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ: ডেমরায় নতুন করে শুরু হয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিড়িক। গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে ছুটে চলছে গ্যাস বিতরণকারী স্থানীয় দালালচক্রের কাছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর সংযোগগুলোর পুণ:সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানা পুলিশের সহযোগীতায় সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। আর এই সুযোগে ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে রাতের আঁধারে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় দালালচক্র। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় স্থানীয় দালাল ও ঠিকাদারদের মাধ্যমে রাতভর বাসাবাড়িতে অবৈধ ওই গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডেমরায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে ৯ গ্রামের সহ্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ৭ কোটি টাকা টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ক্ষমতাতাসীন দলের নেতাকর্মী, থানা পুলিশ, চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি এবং তিতাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের সহায়তায় প্রতি সংযোগের জন্য ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে এসব অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সংশিষ্টরা তাদের বৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলেই ঠিকাদার ও তিতাস কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংযোগ দিয়ে আমাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কয়েকবার অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ। অভিযানের পরপরই তারা বিচ্ছিন্ন সংযোগগুলো পুণরায় টাকার বিনিময়ে সংযোগ স্থাপন করে দেয় ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ডেমরায় গতবছর ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আহম্মেদ এর নেতৃত্বে মেন্দিপুর ও দুর্গাপুর এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরন অভিযান পরিচালনা করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ।২ টি বিতরন লাইনের প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ১২শ’ মিটার অবৈধ বিতরন পাইপ জব্দ করে তিতাস।
জানা যায়, ২০১৪ সালে বছরের শুরুতে ডেমরার কোনাপাড়া-ধার্মিকপাড়া, শূন্যা টেংরা, পাইটি, আমুলিয়া, মেন্দিপুর, দূর্গাপুর, ধীৎপুর, নলছাটা, খলাপাড়া বাজার এলাকাসহ মোট ৯ টি গ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। সংযোগ প্রদানের দু’মাস পরেই শুরু হয় তিতাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান। ঐ বছর মার্চের শুরুতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ প্রথম অভিযান চালায় পাইটি ও আমুলিয়া আতিক মার্কেট এলাকায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেহানুল হকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি বিশেষ টিম উক্ত ২ এলাকার ৩ টি বিতরন লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্নকরে প্রায় ২ শ’ মিটার পাইপ উপড়ে ফেলে। এর মাস খানেক পর আবার মেন্দিপুর-দূর্গাপুর সড়ক ও আমুলিয়া আতিক মার্কেটের ২ টি বিতরন লাইন বিচ্ছিন্ন করে পাইপ উপড়ে ফেলা হয়। গত বছরের ৬ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট কাজী মাহবুব-উর-রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি বিশেষ টিম ডেমরার বালু ধীৎপুর, নলছাটা ও খলাপাড়া বাজার এলাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে ৩ টি বিতরন লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোট পাঁচ হাজার ৪ শত ফিট পাইপের প্রায় ৮ শত ফিট অতি নিম্নমানের পাইপ উপড়ে ফেলে। ৮ আগষ্ট ফের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট কাজী মাহবুব-উর-রহমানের নেতৃত্বে ডেমরার কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ১ টি বিতরন লাইনের প্রায় ৮ হাজার মিটার ৪ ইঞ্চি, ৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি পাইপের অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করে প্রায় ১ হাজার মিটার পাইপ উপরে ফেলা হয়। ১১ নভেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর মো. আজীম এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি বিশেষ টিম সংশ্লিষ্ট তিতাস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ডেমরার পাইটি ওয়াসা রোড এলাকায় দ্বিতীয়বারের মত সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে অবৈধ সংযোগের ১ টি বিতরন লাইনের সাড়ে ৪’শত মিটার ২ ইঞ্চি পাইপ এবং ২’শত ৫০ মিটার ১ ইঞ্চি পাইপ সংযোগ বিছিন্ন করে উপড়ে ফেলা হয়। বরাবরের মতো বিচ্ছিন্ন অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট ও তিতাস কর্মকর্তাদের কাছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
বর্তমানে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও স্থানীয় দালালচক্র এক দিনের মধ্যে গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি বাড়ি থেকে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। যারা বেশি টাকা দিচ্ছে তাদের বাড়িতে আগে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংযোগ প্রদানকারীরা।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাওয়া বাড়ির মালিকরা বলেন, আমাদের গ্যাসের দরকার, গ্যাস পেয়েছি। ওই গ্যাস বৈধ না অবৈধ তা জানি না। তবে যখন বৈধ করার দরকার হবে, তখন বৈধ করে দিবে ঠিকাদাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নলছাটা এলাকাবাসি বলেন, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মদদে তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও স্থানীয় দালালচক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিজেরাই মূল গ্যাস লাইন ছিদ্র করে বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে।
তিতাসের টিকাটুলি শাখার ডিজিএম রুহুল আমীন বলেন, আমরা কয়েকবার ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় এধরনের অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করেছি কিন্তু বিচ্ছিন্নের কিছুদিন পরই কোননা কোন ভাবে এলাকাবাসী পুণরায় সংযোগ স্থাপন করে। আমরা কয়েকবার এলাকাবাসীদের কাছ থেকে তিতাসের কোন কোন কর্মকর্তার কাছে টাকা প্রদান করে সংযোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এবং কোন নামও বলতে পারেননি।