শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতা : কালের খবর খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। কালের খবর জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন। কালের খবর জিগীষা মানবিক পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। কালের খবর জরুরী বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা বিএনপি নেতা বাবর১৭ বছর পর কারামুক্ত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর বিশেষ মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান। কালের খবর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যুবদল নেতার নেতৃত্বে ২ কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। কালের খবর গুমতি‌ বিকে উচ্চ বিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব২০২৫ এসো‌‌ দেশ বদলাই,পৃথিবী বদলাই। কালের খবর
ঘরে বছর ধরে হাশেম শিকলবন্দি

ঘরে বছর ধরে হাশেম শিকলবন্দি

ঘরে বছর ধরে হাশেম শিকলবন্দি

মো. আব্দুল হালিম, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)

জানালাবিহীন ছোট্ট খুপরি, চারদিকে মাটির প্রলেপ দেওয়া বেড়া। এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানেই থাকছেন আবুল হাশেম।

দীর্ঘ এই সময় ধরে তাঁর চুল, দাড়ি, গোঁফ, হাতের নখ কোনোটাই কাটা হয়নি। দিনে এক-দুইবার খাবার দেওয়া হয়। মলমূত্র ত্যাগ করেন এখানেই। মানুষ দেখলে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে আবার উত্তেজিতও হয়ে ওঠেন।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিদ্যানন্দ গ্রামের আবুল হাশেমের পরিবারে দারিদ্র্য থাকলেও আর সব কিছু গ্রামের অন্য দশজনের মতোই ছিল। অভাব-অনটনের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কয়েক বছর আগে তিনি চলে যান গাজীপুরে।

স্বামী-স্ত্রী গার্মেন্টে চাকরি নেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর ২০১৫ সালে আবুল হাশেম হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় স্ত্রী শরীফা খাতুন স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। পরের বছর স্বামী ও দুই সন্তানকে রেখে ছোট ছেলে শরীফ হোসেনকে নিয়ে শরীফা ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টে চাকরি নেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে হাশেম অদ্ভুত আচরণ শুরু করেন। গ্রামের মানুষদের মারধর-গালাগাল করেন। তখন গ্রামের মানুষের চাপে তাঁর ভিক্ষুক বাবা তাঁকে বাড়ির পাশে একটি গাছে বেঁধে রাখেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই ঘরেই শিকলবন্দি আছেন।
সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের খামের সঙ্গে তাঁর এক পা শিকলে বাঁধা। ফর্সা শরীর শুকিয়ে অনেকটা কালো হয়ে গেছে। এরই মধ্যে আসে তাঁর ছেলে ১০ বছরের আবদুল হান্নান। শিশুটির চোখে-মুখে দারিদ্র্যপীড়িত কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। আব্দুল হান্নান বিদ্যানন্দন উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। অন্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলেও সন্তানদের সঙ্গে তেমন কিছু করেন না। ঢাকায় থাকা মা মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ছেলের খোঁজখবর নেন।

এলাকাবাসী জানায়, ভিক্ষাবৃত্তি আর স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাতি সুমি আক্তারকে দুই বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন আক্তার আলী। অসুস্থতার কারণে তিনি একদিন ভিক্ষা করতে না পারলে পরদিন পুরো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়। আবুল হাশেমের বৃদ্ধ মা হাসিনা খাতুন এ প্রতিবেদকে বারবার বলেন, ‘আমার পাগলা পুলাডারে ইট্টু ডাক্তর দেহার ব্যবস্থা কইরা দেইন। ডাক্তর দেহাইয়া ওষুধ খাওয়াইলে ভালা অইয়া যাইব।’

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক চাচা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘হাশেম একসময় ভালো ছিল, মানুষের বাড়িতে কাজ করত। নিজে সংসার করেছে। হঠাৎ সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষ টাকা তুলে একবার চিকিৎসা করাতে পাঠিয়েছিলাম; কিন্তু পর্যাপ্ত টাকার অভাবে পরে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি।’

আক্তার আলী বলেন, ‘বড় আশা লইয়া পুলারে বড় করছিলাম। বিয়া করাইছি, কামাই করবে, আমগরে খাওয়াব। অহন শেষ বয়সে ভিক্ষা কইরা পুলারে, নাতিগরে খাওয়াইতে অইতাছে। ভালা পুলাডা আমার পাগলা অইয়া গেছে। ছিকল দিয়া বাইন্দা থুইছি। কী করমু, টেহার লিগা ডাক্তরের বুগল নিবার পাই না। ডাক্তর দেহাবার পাইলে পুলাডা ভালা অইত মনে অয়।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘একজন মানুষকে অন্ধকার ঘরে শিকলবন্দি করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমি গিয়ে তাকে শিকলবন্দি থেকে মুক্ত করে ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লীরা তরফদার বলেন, প্রাথমিকভাবে দুজন চিকিৎসক পাঠিয়ে ওই যুবকের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হবে। তাঁদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com