সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
নবীনগর প্রতিনিধি, কালের খবর :
বাজারে কসাইখানা না থাকার কারণ যেখানে সেখানে ডাক্তারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন স্থানে রাতের আধাঁরে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র জবাই করা হচ্ছে রোগাক্রান্ত, দুর্বল দুগ্ধদানকারী, গর্ভবতী পশু। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে মাংস।
কোন কোন সময় সড়কের উপরও নদীর পাড়ে জবাই করা হয় এসব গবাদি পশু, আর এই অবস্থায় গবাদিপশু জবাই করে নির্ধিদায় বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি হুমকিতে পড়তে হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
বাজার থেকে গরুর মাংস নামে মহিষ, ষাঁড় নাকি গাভী, রোগমুক্ত, নাকি রোগাক্রান্ত গরুর মাংস, মাপে সঠিক নাকি কম, এ সংশয়ে ভোগেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
এসব প্রশ্নের মাঝেই সলিমগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন স্থানে রাতের আধাঁরে নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র জবাই করা হচ্ছে রোগাক্রান্ত,দুর্বল দুগ্ধদানকারী, গর্ভবতী পশু। রাঁতের আধাঁরে গাভী জবাই করে সকালে বাজারে ষাঁড় বলে ক্রেতা সাধারনকে ঠকিয়ে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি মাংস বিক্রী চলছে হরহামেশাই।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের ২/১ জন কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজেসে এবং তাদের ম্যানেজ করেই প্রতিদিন ৮টি দোকানে কসাই ও মাংস বিক্রেতারা হরহামেশাই এ অনিয়ম করে যাচ্ছে।
অথচ সরকারি বিধান মতে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে কোন পশু জবাই করতে হলে সেটি জবাই করার আগে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত কিনা এবং মাংস স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা একজন সরকারি পশু ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। পরীক্ষা করা পশু জবাই ও খাওয়ার উপযোগী বিবেচিত হলে তবেই সেটি অনুমোদিত কোন কসাইখানায় নিয়ে জবাই করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম মোতাবেক মাংসের উপর সীল মেরে তা বাজারে বিক্রির অনুমতি প্রধান করবে, কিন্তু সলিমগঞ্জ বাজার কোথাও এর কোনটিই মানা হচ্ছে না।
এ ছাড়া বাছুর, চাষাবাদযোগ্য বলদ ও দুধেল গাভী জবাই না করার নির্দেশও উপেক্ষা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, স্থানীয়দের মতে,এ সব দেখার কাজে নিয়োজিতরা নিয়মিত মাংস বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলায় সবই বিধিবাম। আর তাই এরা গবাদি পশু জবাইয়ের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকাই পালন করে থাকে। সরকারি বিধি মোতাবেক যারা মাংস বিক্রয় করবে তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সনদপত্র নেওয়ার কথা থাকলেও দেখা গেছে তাদের ক্ষেত্রে সব নিয়মেই অধরা।
সলিমগঞ্জ বাজারের মাংসের দোকানে সরজমিনে গিয়ে বিক্রেতাদের সাথে স্বাস্থ্যসনদ সর্ম্পকে কথা বলে জানা যায়,কোন মাংস বিক্রেতাই ‘স্বাস্থ্য সনদ’ নেওয়ার বিষয়ে জ্ঞাত নয়। এমনকি জবাইয়ের আগে পশু পরীক্ষা করিয়ে নেয়ার বিষয়টিও অনেকেরই অজানা। গবাদি পশু জবাই এবং মাংস কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের আগে জীবানুমুক্ত করা,খোলা মাংস বিক্রি না করা এবং মাংসের দোকানে স্যানিটেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজারের কোন মাংস দোকানেই তা মানা হচ্ছেনা।
বরং সকালে জবাই করা পশুর মাংস সারাদিন উন্মুক্তস্থানে নোংরা পরিবেশে ঝুলিয়ে রেখে বিক্রি করা হয় বিকাল পর্যন্ত। সরকারি নিয়মমাফিক পশু জবাই হচ্ছে কিনা, জবাইকৃত পশুটি খাওয়ার উপযোগী কিনা তা তদারকি করার জন্য প্রতিটি এলাকায় একজন করে পশু ডাক্তার, একজন করে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এবং চামড়ার মান দেখার জন্য একজন অভিজ্ঞ কিউরেটর নিয়োগের নিয়ম থাকলেও সলিমগঞ্জ কোথাও এদের দেখা পাওয়া যায়না।
এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে মাংস ক্রেতারা, পশু জবাই ও মাংস বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাগজে কলমে থাকা আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজারে যত্রতত্র, রোগাক্রান্ত ও স্বাস্থ্যহীন গবাদিপশু গরু জবাই করা হচ্ছে, ফলে শুধুমাত্র পরিবেশ বিপর্যয় নয় মানুষের শরীরেও রোগব্যাধি বেড়েই চলেছে।
এ সবের প্রতিকার ও প্রতিরোধ চেয়ে রোগমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পশু জবাই,মাপে সঠিক ও বাজার মুল্য নির্ধারন করার দাবী করেছেন ভোক্তারা
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ সায়েমুল হুদা ও সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ নাজমুল হক বলেন, প্রাণী গুলো থেকে এনথাক্স ও স্টেরয়েড, এর মতো মারাত্বক রোগ আসতে পারে, এর মধ্যে কিছু রোগ আছে তাতে মুত্যুও হতে পারে। এই রোগগুলো থেকে বাঁচতে হলে প্রাণীগুলোকে ডাক্তারী পরীক্ষা-নিরীক্ষা আনতে হবে।
এ ব্যাপারে সলিমগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি মো.খোরশেদ আলম চেয়ারম্যান বলেন, জবাইখানা না থাকার কারনে যাচাই বাছাই করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অতি তাড়াতাড়ি জবাইখানা নির্ধারিত করবো। জবাইখানা হয়ে গেলে পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া কোন পশু জবাই করতে দেওয়া হবেনা। কেউ করতে পারবেনা।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলার পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইউসুফ আল হাবিব জানান, মৌখিক অভিযোগ আমিও শুনেছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।