সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার কালের খবর : পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার জেলা শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আড়াইশ শয্যার সরকারি হাসপাতালটিতে গত তিন দিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালটিতে কর্মরত কর্মকর্তা পর্যায়ের চিকিৎসকগণ রোগীর স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম চলছে বলে দাবি করলেও আজ রবিবার সন্ধ্যায় বাস্তবে সরেজমিন দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র।
বলতে গেলে হাসপাতালটিই প্রায় রোগি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। আজ রবিবার একদিনেই চিকিৎসার অভাবে তিন জন রোগী মারা গেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। দেখা যাক কি করা যায়। ‘ অপরদিকে সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক ডাঃ বিধান পাল বলেছেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সহ সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। ‘ অথচ সরেজমিনে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখা গেছে সম্পূর্ণ বিপরীত।
গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) হাসপাতালে একজন রোগির ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে একটানা ৩ দিন হাসপাতালটি অচল হয়ে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি হচ্ছে, রোগী মারা যাবার পর আত্মীয়-স্বজনরা কর্তব্যরত একজন চিকিৎসককে মারধর ও হাসপাতালে ভাংচুর করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকগণ চিকৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনে নামেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর এবং ভাংচুরের প্রতিবাদে শুক্রবার ইন্টার্ন চিকিৎসক সহ কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ মানব বন্ধন কর্মসুচি পালন করে। কর্মসুচিতে গত বৃহস্পতিবার ‘ভুল চিকিৎসা’য় রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত ডাঃ ফাহিমকে মারধর ও হাসপাতালের ওয়ার্ড ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় হাসপাতাল অঙ্গনে পুলিশ বক্স স্থাপনের দাবি জানানো হয়।
হাসপাতালের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আবসার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান সহ চিকিৎসকগনের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্টিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আবসার এ প্রসঙ্গে জানান, চিকিৎসকগনের দাবি অনুযায়ি হামলাকারিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রুজু করা হয়। পুলিশ যথারীতি আসামী গ্রেফতারের জন্য অভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও চিকিৎসকদের দাবি হচ্ছে, আগে আসামী গ্রেপ্তার হোক তারপরই ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ চিকিৎসা কাজে যোগ দিবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেন, থানায় মামলা হলেতো একজন আসামি গ্রেফতারের জন্য বসে থাকে না। তবে পুলিশ যথারীতি আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আজ সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জেলা সদরের হাসপাতালটি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়-ওয়ার্ডগুলোর সিট শূন্য রয়েছে। গাইনি ওয়ার্ডে ৩১ জন রোগি থাকার তথ্য হাসপাতালের তত্বাবধায়কের কক্ষের বোর্ডে লেখা থাকলেও সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, একজন রোগিও নেই। এসময় জান্নাতুল নাঈম (২৩) নামের এক তরুণী গৃহবধূ সন্তান প্রসবের জন্য গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এই গৃহবধূ জানান, তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের স্ত্রী।
গাইনি ওয়ার্ডে এসময় কোন চিকিৎসক ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত জান্নাতুল নাঈম নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা কামনা করেন। বিষয়টি হাসপাতালের তত্বাবধায়কের কক্ষে বসা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ হাসান শাহরিয়ার কবীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোন লাভ হয়নি। বিনা চিকিৎসায় প্রসব বেদনা নিয়ে সেই গৃহবধূ শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। সরেজমিন দেখা গেছে, মহেশখালী দ্বীপ থেকে ৫ মাসের দুগ্ধ পোষ্য সন্তান সাইফুলকে নিয়ে আসা হতভাগা মিজান চিকিৎসা না পেয়ে চট্টগ্রামে ছুটছেন।
হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, কক্সবাজার দেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। এখানে দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটলেও একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির পরিস্থিতি গত ৩ দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম না থাকায় রোগি ভর্তিও বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, আমার সামনেই মহেশখালীর মাতারবাড়ি দ্বীপ থেকে আসা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুকে পেয়েছি। শিশুটির হতভাগা পিতা চিকিৎসা সংকটে ভুগছিলেন। আমি তাকে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ৮ হাজার টাকায় একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চট্টগ্রাম পাঠিয়েছি।
আজ সন্ধ্যায় শিশু ওয়ার্ডে দেখা গেছে, মাত্র ১০ জন রোগি রয়েছে। এর আগে সকালে চিকিৎসা না পেয়ে ১৬ জন শিশু রোগি অন্যত্র চলে গেছে। পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ৩১ জন রোগি থাকার তথ্য চিকিৎসকরা জানালেও বাস্তবে রয়েছে ২২ জন এবং মহিলা ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ১৪ জন।