রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদকের ছড়াছড়িটা একটু বেশিই ছিল। পুলিশের কাছে থাকা এ উপজেলার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকাটাও দীর্ঘ। তবে বর্তমান (ওসি) নজরুল ইসলামের তৎপরতায় অনেকটাই দমে গেছেন দৌলতপুর উপজেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে পুলিশের সাথে ত্রিমুখি বন্দুকযুদ্ধে ২ ডাকাত নিহত হয়েছেন। তালিকাভুক্ত বেশকিছু সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী কে আটক করেছে দৌলতপুর থানা পুলিশ । ডাকাত নিহতের ঘটনায় ও সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী আটকের ঘটনায় বাকি সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা রয়েছে আতঙ্কে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর (ওসি) হিসেবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাতে যোগদান করেন নজরুল ইসলাম। যোগদানের পরপরই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন তিনি। দৌলতপুরে মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দিন শেষ – এমন ঘোষণাও আসে ওসি নজরুল ইসলাম এর মুখ থেকে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ততি হিসেবে প্রথমে ওসি নজরুল ইসলাম বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মাদক ও সন্ত্রাশ বিরোধী সভা করেন। এসব সভায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে সকলকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে মাদক প্রতিরোধের আহ্বান জানান তিনি। ওসি আরো জানান আগামী ২৪ শে-মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে থানা এলাকা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তারি অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থানা এলাকায় পেট্রলিং জোরদার করা হয়েছে।
ওসি আরো জানান ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর (ওসি) হিসেবে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানাতে আমি যোগদান করি। যোগদানের পরে আমি আমার অফিসার ফোর্সদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে ১৪৮ টিরও বেশী মাদক আইনে মামলা দিয়েছি। এই মামলায় ১৯৪ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। ১০০ পিস ইয়াবাসহ প্রইভেটকার আটক করেছি। মাদক উদ্ধার করেছি, ফেন্সিডিল ৫২৪ বোতল,২ টি গাজার গাছ, ৩৮ কেজি গাজা,ইয়াবা ট্যাবলেট ২৩১৪ পিচ,দেশী মদ ২ বোতল , তরল মদ ১০০ লিটার ,হেরোইন ২৫ গ্রাম। অস্ত্র উদ্ধার করেছি ১ টি বিদেশী পিস্তর, ২ রাউন্ড গুলি,্একটি ম্যাগজিন, ৫ টি এলজি গান ও ৬ রাউন্ড গুলি,বিষ্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করেছি ২৫ টি ককটেল ও ১৬ টি পেট্রোল বোমা,২ টি চোরাই গরু ও ২ টি মহিষ। মামলা নিষ্পত্তি করেছি ২২৪ টি। গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করেছি ২৮৪ টি জি আর, জি আর সাজা ২৭ টি , সি আর ২৩৩ টি , সিআর সাজা ৭৭ টি এবং নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করেছি ৫১৫ জন আসামী।
অপর দিকে কিছু দিন আগে তিন সেরার থানা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর।
৪শ’ ৬১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দৌলতপুর থানা থেকে ১৯৮৩ সালে রূপ পায় উপজেলায়। কুষ্টিয়া জেলার পশ্চিমে ৪৭ কিলোমিটার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর। উত্তরে বাঘা ও লালপুর, দক্ষিণে গাংনী ও মিরপুর, পূর্বে ভেড়ামারা ও মিরপুরের কিছু অংশ এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। আয়তন, জনসংখ্যা এবং ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলা। পুলিশে সম্প্রতি যোগ হয়েছে বাড়তি মাত্রা , দৌলতপুর থানা পুলিশের বর্তমান ওসি নজরুল ইসলাম পেয়েছেন কুষ্টিয়া জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি’র সম্মান, দৌলতপুর পুলিশ ছাড়েনি অন্য পদের সম্মাননা গুলোও। এস আই সাইফুল ইসলাম ঘরে তুলেছেন জেলার দিত্বীয় এস আইয়ের স্বীকৃতি। থেমে থাকেনি এ এস আই নাসির উদ্দিন মোল্লা,তিনি পেয়েছেন জেলার শ্রেষ্ঠ ক্যাম্প ইনচার্জ হিসাবে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান।
কাকতালীয় হলেও সত্য যে, তিন ক্যাটাগরিতে তিন পুরষ্কারই এখন দৌলতপুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সম্মাননা প্রাপ্তী ব্যাক্তিত্বের সাথে দায়িত্ব এবং পেশাদারিত্বের বাঁধন শক্ত করে বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
দৌলতপুর থানায় পর্যাপ্ত ফোর্স আর যানবাহনের ঘাটতি বেশ পুরনো কথা; আর বাল্যবিবাহ,মাদকের মতো অপরাধ জড়িয়ে দৌলতপুরের পরতে পরতে। এই আবহে পুলিশি দায়িত্ব যে মোটা দাগেই শক্ত! সে কথা বলা বাহুল্য।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ‘পারফর্মেন্স এ্যাওয়ার্ড জানুয়ারি ২০১৯’ প্রদান করা হয় গত ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং সেবা প্রদানের বিবেচনায় দেয়া এই এ্যাওয়ার্ডের তিনটিই দৌলতপুর থানায় আসাতে অনেকটাই উচ্ছসিত এলাকাবাসী। পাশাপাশি অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দিয়ে দৌলতপুরের আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নতি প্রত্যাশা করছেন সচেতন সমাজ।
কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলার ৭টি থানায় নানা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেয়া হয় এধরনের পুরষ্কার।
ওসি নজরুল ইসলাম তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৩ সালে ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় কাজ করেন লম্বা সময়। ২০১৩ সালে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানায় প্রথম যোগ দেন ওসি পদে। একই জেলার ডিবি পুলিশে কাটানোর পর আবার ফিরে যান রাজধানীর মেট্রোপলিটন পুলিশে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে আসেন অফিসার ইনচার্জ দৌলতপুর হিসেবে।
এস আই সাইফুল ইসলাম ২০১৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। ক্যারিয়ার শুরুর পদ ছিলো এসআই,থানা কুষ্টিয়ার কুমারখালী। দেশের কয়েকটি থানায় দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে রয়েছেন দৌলতপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এর দায়িত্বে।
এএসআই, নাসির উদ্দিন মোল্যা কন্সটেবল পদে চাকরী শুরু করেন ১৯৮৪ –তে যশোরের একটি প্রত্যন্ত থানায়। নড়াইল-চুয়াডাঙ্গা-বান্দরবানসহ বেশ কয়েকটি থানায় কাজ করা কন্সটেবল নাসির উদ্দিনের পদন্নোতি হয় ১৯৯২ সালে ডিবি –তে, এ এস আই পদে। কিছু পরে দশর্নার সীমান্ত চেক পোস্টে দায়িত্বশীল পদে থাকেন এই এ এস আই। ক্যারিয়ারের প্রায় তিন যুগ সময়ে অনেকগুলো জেলায় কাজের ধারাবাহিকতায় তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আসেন ২০১৭ সালে। এখানে, দৌলতপুর থানায় বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে রয়েছেন তেকালা ক্যাম্প ইনচার্জ হিসাবে।
সেরার সম্মাননা বারবারই আসুক দৌলতপুরে, সাথে শৃঙ্খলার শৃঙ্খল থাকুক গণবান্ধব পুলিশিংয়ে, এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।