শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যৌথ বাহিনীর অভিযান: থানচি-রুমা-রোয়াংছড়ি ভ্রমণে বারণ সাতক্ষীরার দেবহাটায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সহ আহত পাঁচ। কালের খবর সাপাহারে রাতের অন্ধকারে ফলন্ত আম গাছ কাটল দূর্বৃত্তরা। কালের খবর বাঘারপাড়ায় হাঙ্গার প্রজেক্টের সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার’র মতবিনিময়। কালের খবর রায়পুরায় মরহুম ডাঃরোস্তাম আলীর ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ইফতার ও দোয়া মাহফিল। কালের খবর ভাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করতে রায়পুরাতে দোয়া ও ইফতার। কালের খবর রিয়াদে বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের ইফতার মাহফিলে প্রবাসীদের মিলন মেলা। কালের খবর ঢাকা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসে গুনীজনদের আলোচনা সভা সম্পন্ন। কালের খবর আরজেএফ’র উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। কালের খবর সাতক্ষীরার সুন্দরবন রেঞ্জে ২৪ জন হরিন শিকারীর আত্মসমর্পণ। কালের খবর
আপনাকে মামলায় ঢুকায়া দেব, চেনেন আমারে ?’ -চিকিৎসককে ওসির হুমকি। কালের খবর

আপনাকে মামলায় ঢুকায়া দেব, চেনেন আমারে ?’ -চিকিৎসককে ওসির হুমকি। কালের খবর

আপনাকে মামলায় ঢুকায়া দেব, চেনেন আমারে ?’ –চিকিৎসককে ওসির হুমকি
কালের খবর রিপোর্ট, নাটোর  :

শিশু ধর্ষণের রিপোর্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেনাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসককে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ওই থানার ওসি। হুমকিদেয়ার ওই অডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদের সঙ্গে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখের মঙ্গলবার বিকালের ওই কথোপকথনের রেকর্ড তার ব্যাচের চিকিৎসকরা ফেসবুকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

ওসির হুমকি দেয়া আলোচিত ওই অডিও ক্লিপটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে।

এদিকে দুপুরের দিকে বাগাতিপাড়া থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদের কাছে জানতে চান তারা কি রিপোর্ট দিয়েছেন, ধর্ষণ নাকি ধর্ষণ চেষ্টা? ওই সময় মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাকে জানান তিনি এই মুহূর্তে দায়িত্বে নেই।

তিনি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে সরকারি নাম্বারে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওসি ফোন না কেটে বরং ওই চিকিৎসকের সঙ্গেই উচ্চবাচ্য করতে থাকেন।এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওসি ওই চিকিৎসককেমামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। এ ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ওসির আচরণে ভার্চুয়ালবাসীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে চিকিৎসক মহল এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের দাবি, একজন বিসিএস কর্মকর্তার সঙ্গে নন ক্যাডারের কোনোকর্মকর্তা কখনও এমন অশোভন আচরণ করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ সরকারি আচরণবিধির লংঘন।

তাদের মতে, কথোপকথন জুড়ে ওসির অভিব্যক্তি ছিলো ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অশোভনীয় এবং ভদ্রতা বিবর্জিত। দাগী অপরাধীর সঙ্গেও এই সুরে কোন পুলিশ সদস্য কথা বলতে পারেন না।

চিকিৎসকরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। অপরদিকে, নন ক্যাডার কর্মকর্তা ওসি, ২য় শ্রেণি থেকে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি পেয়ে ১ম শ্রেণিতে উন্নীত হন। তাই ওসির পক্ষ থেকে এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর সুস্পষ্ট লংঘন।

ফেসবুকে তারা আরও মন্তব্য করেছেন,আপাতদৃষ্টিতে এ ঘটনাটি ছোট মনে হলেও এ রকম ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই সারা দেশে ঘটছে।গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু শাহাদাৎ মাহফুজের সঙ্গেও থানার এসআই এবং ওসি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

এ ব্যাপারে বিসিএস ৩৫তম ব্যাচের চিকিৎসক ডা. নাজিরুম মুবিন বলেন, প্রতিটা সার্ভিসেই এরকম গুটিকয়েক অভদ্র থাকে। এদের জন্যই পুরো সার্ভিসের বদনাম হয়। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী এদেরকে শাস্তির আওতায় না আনলে অভদ্রদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

অভিযুক্তওসির বক্তব্য

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, ‘ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমিই একটু ভুল বুঝেছিলাম। তাই একটু রাগারাগি হয়েছিল। পরে আমরা দুই ভাই বসে সব ঠিক করে নিয়েছি’।

ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বক্তব্য

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভুক্তভোগী ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আর এখন আমাদের দুইজনের মধ্যে নেই। এখন এ ঘটনা আমাদেরকমিউনিটির বিষয় হয়ে গেছে। উনি উপজেলার সব কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের সামনে বসে একজন ডাক্তারকে বিনা দোষে অপমান করবেন, হুমকি দেবেন আর গোপনে মীমাংসা হয়ে যাবে এটা ঠিক না। এ ধরনের ঘটনাকে দেশের সব ডাক্তারকেই অপমান করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা মোছাঃ নাছরিন বানু যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনাটি আমি শুনেছি। ঘটনারসময় আমরা একটা বেডমিন্টন টুর্নামেন্টে ছিলাম। তখন কার সঙ্গে (ওসি) কথা বলছেন তা বুঝতে পারিনি। পরে শুনলাম ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে তিনি (ওসি) এসব কথা বলছেন।এ ঘটনাটি দুঃখজনক। একজন বিসিএস কর্মকর্তার সঙ্গে (ওসির) এ রকম আচরণ কখনই কাঙ্ক্ষিত নয়। তবেচিকিৎসকরা এবিষয়ে তারকাছে কোনো অভিযোগ দেননি বলে জানান এউপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা।

চিকিৎসকের সঙ্গে ওসিআলোচিত সেই কথোপকথন

ওসি: আসসালামু আলাইকুম

চিকিৎসক: ওয়ালাইকুমুস সালাম

ওসি: ডক্টর আবদুল্লাহ সাহেব বলছেন?

চিকিৎসক: জ্বী বলছি, বলুন?

ওসি: আমি থানা থেকে ওসি বলছি

চিকিৎসক: জ্বী, আপনার নাম্বার সেভ আছে।

ওসি: আচ্ছা, শুনেন, রেপ না অ্যাটেম্প টু রেপ? এটা কী বুঝবো? কী লেখছেন আপনি?

চিকিৎসক: না, আমি তো কিছু লিখি নাই!

ওসি: এই যে বাচ্চা মেয়ে গেল না? (রাগতস্বরে)

চিকিৎসক: কোনটার কথা বলতেছেন আপনি?

ওসি: এই যে একটু আগে (গিয়েছিল)

চিকিৎসক: আমি তো ডিউটিতেই নাই। আপনি আমাকে এভাবে বলতেছেন কেন?

ওসি: তাহলে আপনাকে কোনভাবে বলবো?

চিকিৎসক: আপনি অফিসিয়াল (হাসপাতালের) নাম্বারে ফোন দেন।

ওসি: আপনাকে কোনভাবে বলবো? আপনি এখন দায়িত্বে আছেন না?

চিকিৎসক: না। এখন আমি দায়িত্বে আছি না। আপনাকে বলছি, অফিসিয়াল একটা নাম্বার আছে, হাসপাতালের নাম্বার। ওই নাম্বারে ফোন দেন।

ওসি: ঠিক আছে। আপনি গরম হইয়া কথা বইলেন না। বুঝতে পারছেন?

চিকিৎসক: না না। আপনিই তো গরম হয়ে কথা বলছেন।

ওসি: আপনারা যদি কোনো কিছু গোপন রাখেন, কোনো কিছু করেন তাহলে আপনাকে সুদ্ধা (সহ) মামলায় ঢুকায়া দেবো। চেনেন আমারে?

চিকিৎসক: নো.. নো…

ওসি: চেনেন আমারে…

চিকিৎসক: আপনি এভাবে কথা বলতেছেন কেন?

ওসি: আপনি চেনেন আমাকে? কে আমি?

চিকিৎসক: আপনি কেন এভাবে কথা বলতেছেন?

ওসি: (অস্পষ্ট)

যে ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে ওসির হুমকি

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটিকে বাড়ির পাশের একটি গম ক্ষেতে নিয়ে ওই দুই বখাটে যুবক সিমন ও ফাহিম পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অভিযোগের পর চিকিৎসক ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলমত পেয়েছেন ।

ধর্ষণের শিকার শিশুটির চাচা জানান, এ বছর শিশুটিকে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে। মঙ্গলবার ছুটির কারণে শিশুটি বাড়িতে ছিল। তার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটিকে দুই বখাটে বাড়ির পাশের গম ক্ষেতে টেনে নিয়ে যায়। বখাটে সিমন ও ফাহিম সেখানে ওই শিশুটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আহতাবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার রাসেল বলেন, পরিবারের লোকজন শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেতাকে পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নাটোর জেলা সদরের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com