মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক :
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে এবং নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে আগামীকাল ২৩ ডিসেম্বর, সোমবার থেকে মাঠে নামছেন সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) সদস্যরা।
সে হিসেবে আজ রবিবার মধ্যরাতের পর থেকেই স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের।
নির্দেশনা পেয়েই সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর কবির এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাচনে ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর এ সদস্যরা। তারা জেলা/উপজেলা/মহানগর এলাকার সংযোগস্থলে ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবেন। তারা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে-নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তারা সহায়তা করবেন।
পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন।
যে কোনো অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে, তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। সেই অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন।
জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন।
যে কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটার আশঙ্কায় সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।
এরআগে, গত ১৩ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ওইদিন তিনি বলেন, ‘ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি এখন মাঠে কাজ করছে।
ইসি সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের পরই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আদলে এবারও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন।
এরআগে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিন মাঠে ছিল সেনাবাহিনী। তারা সাধারণ এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন এলাকায় একজন কমিশনারের অধীনে দায়িত্ব পালন করে। ওই নির্বাচনে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় একটি ব্যাটালিয়ন (৭৪০ সদস্য) ও প্রতিটি উপজেলায় এক প্লাটুন (৩৫ জন) সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন।