মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রেলের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতি। কালের খবর দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন সাঞ্জু রায়। কালের খবর প্রবীণ সাংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া আর নেই। কালের খবর ছবি তোলার অপরাধে সাংবাদিক গ্রেফতার, অত:পর মুক্তি। কালের খবর মুরাদনগরে তীব্র গরমে একই বিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ। কালের খবর ফায়ার ও পরিবেশ ছাড়পত্র জানতে চাওয়াতে ম্যানেজার সাকিল, সাংবাদিকের সাথে অশুভ আচরণ। কালের খবর সাতক্ষীরার আলীপুরে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আব্দুর রউফ বিজয়ী। কালের খবর মুরাদনগরে বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ১জন নিহত। কালের খবর স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জরুরি। কালের খবর সাতক্ষীরায় চার পিচ স্বর্ণের বার সহ আটক এক। কালের খবর
ঈদ ঘিরে পণ্য হয়ে উঠেছে নতুন টাকা। নতুন টাকার রমরমা ব্যবসা এখন রাজধানীর গুলিস্তানে। কালের খবর

ঈদ ঘিরে পণ্য হয়ে উঠেছে নতুন টাকা। নতুন টাকার রমরমা ব্যবসা এখন রাজধানীর গুলিস্তানে। কালের খবর

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর  : ঈদে নতুন জামা-জুতার পাশাপাশি সালামি দেওয়ার জন্য চাই নতুন টাকা। ব্যাংক থেকে নতুন টাকা বদলে নিতে পারেননি এমন অনেকেই এখন নতুন টাকার খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন গুলিস্তান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস পর্যন্ত।

গতকাল বুধবার ব্যাংকসহ সরকারি সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় এর চাহিদা আরো বেড়ে যায়। পণ্য কেনাবেচা করার জন্য টাকার প্রচলন করা হলেও এই সময়ে নতুৃন টাকাই একটি পণ্যে পরিণত হয়।
জানা গেছে, নতুন ৫ টাকার দাম সবচেয়ে বেশি। ৫ টাকার একটি নতুন নোটের দাম পড়ছে সাড়ে ৬ টাকা। ৫ টাকার ১০০টি নোটের একটি প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা। দুই টাকার ১০০ নোটের প্যাকেট মিলছে ২৮০ টাকায়। ১০ টাকার প্যাকেট (১০০ নোট) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকায়। ৫০ ও ১০০ টাকার নোটের প্যাকেটে ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে।

রাজধানীর গুলিস্তান নতুন টাকা বেচাকেনার সবচেয়ে বড় জায়গা।
গতকাল দুপুরে গুলিস্তান গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি ছোট আকারের টেবিলে থরে থরে নতুন নোট সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রির জন্য। বছরের অন্য সময়ে পুরনো বা ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলের ব্যবসা করেন তাঁরা। ঈদের সময় নতুন টাকা বিক্রিই তাঁদের প্রধান ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায়।
টাকা বিক্রি আইনসিদ্ধ নয়। তবু রাস্তার পাশেই চোখে পড়ে টাকার দোকান, ছোট ছোট টুলে কড়কড়ে নতুন টাকা সাজানো। ব্যাংকে যাওয়া ঝামেলার কাজ, তাই আসা-যাওয়ার পথে পুরনো টাকা বদলে নিচ্ছে মানুষ, ঈদ সালামির জন্য কিনে নিচ্ছে নতুন নোটের তাড়া।

এসব ব্যবসায়ীর কারো কারো কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে নতুন টাকার ব্যবসায়। তবে এ বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ীই কোনো তথ্য দিতে রাজি নয়। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভাই নাম বলা যাবে না। নতুন টাকার ব্যবসা করার অনুমতি নাই। পুলিশে ধরবো। ’

গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে আসা গার্মেন্টকর্মী আবুল বাসার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি একটি গার্মেন্টে কাটিং ম্যানেজারের কাজ করি। বাড়ি মাদারীপুর। ৫ টাকার নোট কিনলাম ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে (১০০ নোটের এক প্যাকেট)।

ব্যাংক থেকে নিলে তো বাড়তি কোনো টাকাই খরচ হতো না—প্রতিবেদকের এমন কথা শুনে ওই পোশাককর্মী বলেন, ‘কখন ব্যাংকে যাবো, সময়ই তো পাই না। আবার কোন ব্যাংকে গেলে টাকা দিবো সেইটা তো জানি না। আইজকা ছুটি পাইলাম, কাল-পরশু বাড়ি যাইতে পারি। ছোট ছেলেমেয়ে আছে ওদের হাতে এই নতুন টাকা দিতে পারলে ওরা খুব খুশি হইবো। ’

নতুন বের হয়েছে মনে করে কয়েকটি ২৫ টাকার নোটও কিনেছেন আবুল বাসার। কিন্তু ওই নোটগুলো যে স্মারক নোট, শুধু সংগ্রহে রাখার জন্য, বিনিময় মূল্য নেই, তা তিনি জানতেন না।

গতকাল একইভাবে গুলিস্তানে নতুন টাকা কিনতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী মো. ইউসুুফ। জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, ‘ব্যাংক থেকে নতুন টাকা পাওয়া এত সহজ নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে নতুন টাকা নিতে হয়। এর থেকে ৭০ টাকা বেশি দিয়ে এখান থেকে ১০ টাকার ১০০টি নোটের একটি প্যাকেট নিলাম। তবে এখান থেকে টাকা কেনাটা আমি খুব একটা নিরাপদ মনে করি না। ’

এই ক্রেতার অভিমত শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে যদি নতুন টাকা পাওয়া যেত তাহলে আরো অনেক বেশি মানুষ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা নিত। ইউসুফের অভিযোগ, কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংক থেকে নতুন টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও ব্যাংকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয়।

গতকাল ছুটির দিনেও লোকজন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সামনে এসে ভিড় করে নতুন টাকার জন্য। সেখানে সেনাকল্যাণ ভবনের উল্টো দিকে নতুন টাকার কিছু ব্যবসায়ী ছোট টুলের ওপর সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছিলেন। এখানকার নতুন টাকার দামও গুলিস্তানের মতোই।

ঈদে সালামি হিসেবে নতুন টাকার চাহিদা মাথায় রেখে ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বছর গত ৩ জুন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব অফিসসহ রাজধানীর ২০টি ব্যাংক শাখা থেকে নতুন টাকা বিনিময় করা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য বছর ২ ও ৫ টাকার নোট বদলে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও এবার প্রথম থেকে ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট বদল করে দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার থেকে নতুন ২ ও ৫ টাকার নোট বদল করে দেওয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ টাকার নোটের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। যে কারণে এই দুটি মূল্যমানের নোটের দামও দিতে হচ্ছে অনেক বেশি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘২ ও ৫ টাকার নোটের অপব্যবহার বিষয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। এ কারণে এই দুটি নোট না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ’ এ বছর ঈদ উপলক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

জানা গেছে, ২ ও ৫ টাকার নতুন নোট মাদক সেবনে ব্যবহারের বিষয়ে তথ্য পেয়ে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে এই দুটি মূল্যমানের নোট বাজারে ছাড়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই কারণে এবার ঈদে নতুন টাকা ছাড়া হলেও এই দুটি মূল্যমানের নোট বিনিময় বন্ধ রাখা হয়। তবে শেষ দিকে এ থেকে সরে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে নতুন টাকা সংগ্রহ করে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এরা মূলত সারা বছর ধরেই পুরনো ছেঁড়া-ফাটা নোট বদলের ব্যবসা করে। ঈদ এলেইে এরা বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে নতুন টাকা সংগ্রহে নামে, ঈদের আগে এই নোটগুলো চড়া দামে বিক্রি হয় গুলিস্তান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সামনে।

২ ও ৫ টাকার নোটগুলো সরকারি নোট। এগুলোতে অর্থসচিবের স্বাক্ষর থাকে। ১০ থেকে ১০০০ টাকার নোটগুলো ব্যাংক নোট। এই নোটগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোতে প্রতিটি মূল্যমানের কাগুজে মুদ্রার একটি করে প্যাকেটে ১০০টি নোট থাকে। এ রকম ১০টি প্যাকেট থাকে একটি বান্ডেলে। অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণ প্যাকেটকে বান্ডেল বলে থাকেন।

        দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন । 

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com