মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল নয়াগাঁও গ্রামের এক কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগে সুনামগঞ্জের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি টিম বৃহস্পতিবার (২৭জুন) বিকাল ৫টায় লাশ উত্তোলন করেন। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, চিলাউড়া- হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল (নোয়াগাঁও) গ্রামের শ্রীকান্ত বিশ্বাসের ছেলে কিশোর রিংকন বিশ্বাস (১৬) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। গত সোমবার (২৪ জুন) রাতে নিহতের পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাস জগন্নাথপুর থানায় একটি অপঃমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (২৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আফছার উদ্দিন লাশের তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে আদালত জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রৌশন আহমেদকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সাধারণ শাখার স্থানীয় সরকার শাখা (মিডিয়া) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রৌশন আহমেদের নেতৃত্বে একটি টিম বিকাল ৫টায় ঘটনাস্থলে পৌছে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) সুভাশীষ ধর, থানার তদন্ত ওসি শুসংকর পাল, চিলাউড়া হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল, ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল আহমেদ, এস আই আফছার উদ্দিন, এস আই জিয়া উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক বৃন্দ।
খোজ খবর নিয়ে যানা যায়, নিহত কিশোর রিংকন বিশ্বাস। সে দীর্ঘদিন ধরে সাবেক ইউপি সদস্য সমধল গ্রামের প্রভাবশালী লুলু মিয়ার ফিসারিতে গরু রাখালি করতো। কিন্তু গত শনিবার তার রহস্যজনক মৃত্যু হলে বিভিন্নভাবে প্রচার কর হয় হার্ট অ্যাটাক, সাপে কেটে বা গাছ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের সন্দেহের মধ্যে প্রশাসনকে না জানিয়ে গত শনিবার বিকেলে নিহত কিশোরকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। রাতে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি রহস্যজনক। তাই উপযুক্ত তদন্ত করে ও মরদেহটি তুলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হোক। না প্রকাশে অনুচ্ছিক স্থানীয় একজন প্রতিবেশি জানান, সাবেক ইউপি সদস্য প্রভাবশালী লুলু মিয়ার আশে পাশে প্রচুর ইয়াবা বিক্রয় হয়। এখানে ইয়াবা সহজে পাওয়া যায়। তাদের অনেক লোক ইয়াবাতে আসক্ত থাকে।
নিহত কিশোরের পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাস জানান, আমার ছেলে রিংকন বিশ্বাস সাবেক ইউপি মেম্বার লুলু মিয়ার ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। সম্প্রতি বন্যার সময় আমরা চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি কার্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেই। তাই ছেলের সাথে আমাদের যোগাযোগ কম ছিল। কিন্তু গত শনিবার লুলু মিয়ার ভাগ্নে কামাল মিয়া সহ কয়েকজন লোক এসে আমাদের জানায় সমধল নদীর ওপারে গিয়ে ছেলেকে দেখার জন্য। তাদের কথায় আমরা গিয়ে দেখি ছেলেকে মৃত অবস্থায় একটি চৌকির মধ্যে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এসময় তার কপালের নিচে ডানদিকে আঘাতের চিহ্ন ও মুখ দিয়ে গোবর বের হতে দেখা যায়। কিন্তু শরীরের কোথাও গোবর দেখা যায়নি। পুরো শরীরে তেল মালিশের চিহ্ন পাওয়া যায়।
তার মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, লুলু মিয়া ও তার স্বজনেরা জানায়, আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে আমাদেরকে বলেন, লাশ সৎকার করার জন্য। এসময় তারা জানান, প্রশাসনের বিষয়টি তারা দেখবেন। তাই তাদের পরামর্শে মৃত সন্তানকে মাটি চাপা দেই।
এ ব্যাপারে লুলু মিয়ার ছোট ভাই জাকির হোসেন জানান, নিহত কিশোর রিংকন বিশ্বাস ৮ মাস ধরে আমাদের ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। কিন্তু গত শনিবার আম পাড়তে গিয়ে সে গাছ থেকে গোবরের স্তুপে পড়ে মারা যায়। তাই আমরা তার পরিবারকে বিষয়টি জানাই। ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল মিয়া জানান, খবর পাওয়ার পর তিনটার দিকে যাই। তাদের অভিযোগ না থাকায় আমি ও চেয়ারম্যান সাহেব লাশটি সৎকার করার জন্য বলি, আমরা থানায় ঘটনা জানায়নি।
চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, ঘটনার দিন অনুমান বিকেল তিনটায় নিহত কিশোরের মামা লুকেশ জানায়, আমার ভাগনা মারা গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খাটের ওপর লাশ।