বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
ইউএনও কার্যালয়ে তথ্য চাইতে গিয়ে দৈনিক দেশ রুপান্তরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে গ্রেফতার ও ছয় মাসের কারাদন্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা-উদ্বেগ জানিয়েছে বিএফইউজে ও ডিইউজে। আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম অবিলম্বে সাংবাদিক রানার নি:শর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, এ ধরণের নিপীড়ন সাংবাদিকের তথ্য অধিকারই খর্ব নয়,এটি মুক্ত সাংবাদিকতায় অন্তরায়।এভাবে কালাকানুন করে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ এবং সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার অব্যাহত থাকলে গণমাধ্যম তার অস্তিত্ব হারাতে বসবে।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, তথ্য অধিকার সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক অধিকার অংশের চিন্তা, বিবেক ও বাক স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেজন্য তথ্য অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকারও বটে।
তথ্য অধিকার আইনের একটি শক্তিশালী বিধান হলো, সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো সর্বোচ্চ পরিমাণ তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করবে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (ভলান্টারি ডিসক্লোজার); অর্থাৎ নাগরিক বা সাংবাদিকদের চাওয়ার অপেক্ষায় না থেকে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো নিজ নিজ দপ্তরের কাজকর্ম–সম্পর্কিত অধিকাংশ তথ্য নিজ নিজ ওয়েবসাইটে এবং অন্যান্য মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ করবে এবং নাগরিকদের তরফ থেকে যেকোনো তথ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুত থাকবে; সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানাবে না; বরং প্রশ্নের উত্তরের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করবে। নকলায় সরকারি কর্মকর্তারা সাংবাদিক রানার সাথে যে আচরণ করেছেন সেটি পুরোপুরি আইনের লংঘন। সরকারের নীতিনির্ধারক ও জনপ্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে তথ্য অধিকার আইনের মর্মকথা সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি জাগলে তাঁরা কখনোই তথ্যকে সরকারি সম্পত্তি মনে করতে পারতেন না, বরং স্বীকার করতেন যে তথ্যের মালিক জনগণ; তা গোপন রাখার অধিকার সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের প্রারম্ভিকায় দুর্নীতি হ্রাস ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ জনগণের তথ্য অধিকার। এ ছাড়া জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদে এবং জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদেও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের তথ্য অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। হালের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬-তে বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়নসহ সর্বস্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তথ্যে প্রবেশগম্যতা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক; এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তথ্য অধিকার আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতসব বিধিবিধান-আহ্বান সত্ত্বেও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণ বা গোপনের অপচেষ্টাকে দমন করা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে আইন থাকলে এর কার্যকরীতা খুব একটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে জনগন সুফলতো পাচ্ছে না উল্টো পদে পদে অপদস্ত হচ্ছে। বিচারহীনতার(ন্যায় বিচার) সংস্কৃতির কারণে দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
বিবৃতি তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে গোপনীয়তার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছতার সংস্কৃতিতে উত্তরণের আহবান জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সকল কালাকানুন বাতিলেরও দাবি জানান তারা।
উল্লেখ্য,সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা গত মঙ্গলবার তাঁর ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়–সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে নকলা ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী (সিএ) শীলার কাছে দিয়ে রিসিভড কপি (গ্রহণের অনুলিপি) চান। শীলা তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। শফিউজ্জামান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার শীলার কাছে অনুলিপি চান। তখন শীলা বলেন, ‘ইউএনওকে ছাড়া রিসিভড কপি দেওয়া যাবে না।’ পরে শফিউজ্জামান জেলা প্রশাসককে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। এতে ইউএনও আরও ক্ষুব্ধ হন।
একপর্যায়ে নকলা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ইউএনও এবং সিএ শীলার সঙ্গে অসদাচরণের কল্পিত অভিযোগে তাকে আটক করে। পরে নকলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ ওই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শফিউজ্জামানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।