রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
দেশে নদনদী দখলের যে একটি মহোৎসব চলছে, তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর বক্তব্যে। রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি যেসব তথ্য তুলে ধরেছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, নদী দখলের সঙ্গে সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ। সেই সঙ্গে খোদ নৌ-মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নদী রক্ষা কমিশনকে অকার্যকর বা নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ। মেঘনায় বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে একজন নারী মন্ত্রীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, হায়েনার দল থেকে নদীকে মুক্ত করতে পারছি না। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীকে লিজের নামে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করছে নৌ-মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন; এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রামে নদীর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সেখানে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের এসব অভিযোগ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সরকারি সংস্থাগুলো এ কমিশনের কার্যক্রমে কোনো সহযোগিতা তো করছেই না, উলটো নদী দখলে ইন্ধন জোগাচ্ছে। এটি একটি অপরাধ বলে মনে করি আমরা। আদালতের রায় অনুযায়ী জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন নদীর অভিভাবক। প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিটি সংস্থার উচিত নদী রক্ষায় তাকে সহযোগিতা করা। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। বরং যারা কমিশনকে সহযোগিতা করছে, তাদের শাস্তিমূলক বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে নদী দখলমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নদী অবমুক্ত করার জন্য কমিশন গঠন করেছেন, টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নদী দখল ও দূষণের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এ প্রবণতা রোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা।
দেশের বেশিরভাগ নদীর অবস্থা ভালো নেই। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী। বহু নদী হারিয়ে গেছে। দখল-দূষণের কারণে বেশিরভাগ নদনদী এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা। যারা যেভাবে পারছে, সেভাবেই নদীকে ব্যবহার করছে। নদী ভরাট করে দখলে মেতে উঠেছে অনেকে। বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ-এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই এখন। এদেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে যেন। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। দেশে নদী দখলের উৎসব আর চলতে দেওয়া যায় না। নিজেদের স্বার্থেই নদী রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে সব নদী। নদীর সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বস্তুত নদী বাঁচাতে দেশের প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে। নদী বাংলাদেশের প্রাণ। কাজেই দেশের প্রাণশক্তি রক্ষা করতে হলে নদী দখল বন্ধ এবং নদী দূষণ রোধ করতেই হবে।