সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১০ অপরাহ্ন
নবীনগর প্রতিনিধি, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। নবীনগর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন ৫ জানুয়ারি মামলা করলেও শুক্রবার (৭ জুলাই) বিষয়টি জানাজানি হয়।মামলার বিষয় টি জানাজানি হওয়ার পর সারা দেশ সহ উপজেলা ও জেলার সাংবাদিকরা ও সুশীল সমাজ তীব্র নিন্দা জানান।
এই মামলার সাত আসামি হলেন—সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল (দৈনিক ভোরের সময়), মাহাবুব আলম লিটন (দৈনিক সমকাল), মো. বাবুল (দৈনিক আমার সংবাদ), জ, ই বুলবুল (দৈনিক দেশ রূপান্তর), মো. সফর মিয়া (দৈনিক বর্তমান), দৈনিক সত্যের সন্ধ্যানে পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি (নাম জানা যায়নি) ও মমিনুল হক রুবেল (ঢাকা নিউজ)।
চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মামলাটি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজমের (সিএমপি) এসআই জুয়েল চৌধুরী শুক্রবার আসামিদের নাম ও ঠিকানা যাচাই করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানানোর জন্য নবীনগর থানাকে চিঠি দেন। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।
নবীনগর থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, কাউন্টার টেররিজম(সিএমপি) এর চিঠির ভিত্তিতে মামলায় আসামি হওয়া সকলের নাম ঠিকানা সনাক্ত করতে থানার এএসআই মাহমুদুল হককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নবীনগর পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নীলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও নবীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ করেন।এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত পূর্বক তার ভাতা স্থগিত করে। ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে সাত সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেন।
এরপরই ঐ সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন নীলুফার ইয়াসমিন।
মামলার প্রধান আসামি ও অভিযোগকারী সাংবাদিক সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল বলেন, ‘কাউন্সিলর নীলুফার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার একজন ভুয়া সন্তান। যার সব প্রমাণসহ আমি গত বছর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।এতে তদন্ত কমিটি গঠন হয়ে তার ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে, গত কয়দিন আগেও আমার অভিযোগের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মহোদয় উভয় পক্ষকে ডেকে বিস্তারিত শুনে তাকে শাসিয়েছে সঠিক কাগজপত্র দেয়ার জন্য। আর আমার অভিযোগের ভিত্তিতে আমিসহ আরও সাংবাদিকরা পত্রিকায় রিপোর্ট করেছে। আমাদের রিপোর্টে কোনো মিথ্যে তথ্য নেই।,আমাদের কাছে সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে।তিনি আরো বলেন, ’নীলুফার করা ডিজিটাল মামলাটি আমরা সবাই আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব।’
মামলার বাদী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘পত্রিকায় মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর তদন্তের স্বার্থে সাময়িকভাবে চলতি বছরের গোড়ার দিকে আমার ভাতা স্থগিত ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন দপ্তরে শুনানির পর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং ভাতা পুনরায় চালু হয়।এতে আমি আমার মানহানি হওয়ায় মামলা করেছি।
মামলায় আসমি হওয়া প্রবীণ সাংবাদিক নবীনগর প্রেসক্লাবের তিন তিন বারের সাবেক সভাপতি দৈনিক সমকালের মাহবুব আলম লিটন জানান,আমরা সাংবাদিকতার রীতিনীতি অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে নিউজ করেছি,বর্তমানে আমরা নবীনগরে দূর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করায় একটি মহল আমাদের কন্ঠরোধ করতে কাউন্সিলর দিয়ে এই মামলাটি করিয়েছে। আমরা মামলাটি আইনি মোকাবিলা করব।
নবীনগর থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম কে জসিম উদ্দিন জানান,, ‘মামলায় নবীনগর থানা প্রেসক্লাবের দুজনকে আসামি করা হয়েছে। সেজন্য আমরা মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। কেউ যদি মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিককে হয়রানি করে, তাহলে আমরা থানা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সেটি মোকাবিলা করব।
নবীনগর প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক সভাপতি সাংবাদিক জালাল উদ্দিন মনির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,’আমার জানামতে, সাংবাদিকরা তথ্য প্রমাণ রেখেই রিপোর্ট করে থাকেন। তাই কারও বিরুদ্ধে সত্য রিপোর্ট প্রকাশ হলেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তাই কোন সংবাদে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সরাসরি মামলায় না গিয়ে প্রেস কাউন্সিলে এর প্রতিকার চাইতে পারেন। আর সেটিই হওয়া উচিৎ ও বাঞ্ছনীয়