সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ আশরাফ উদ্দীন, কালের খবর :
দিনটি ছিল শুক্রবার রাত ২.১০বাজে রোজার দিন হঠাৎ দরজায় নক, ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করলাম কে বাইরে থেকে উত্তর আসল থানা থেকে আসছি পুলিশ। আমি আর কিছু না বলেই দরজা খুললাম মনের মধ্যে কোন প্রকার ভয় ছিল না কারণ জানা মতে আমি কোন অপরাধ করি নাই। আমার জন্য পুলিশ আসার কথাও না। পুলিশ ভেতরে জিজ্ঞেস করল তোমার নাম কি নাম বললাম। কথা বলে একটু পর জানতে পারলাম আমার ভাইয়ের উদ্দেশ্য আসছে কিন্তু ভাই ত বাসায় নাই অনেক দিন বিদেশ থাকে। পুলিশও জানে সে কথা। পুলিশ বলল আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে পাশের রুম থেকে মা আসল মা বলল ও কেনো যাবে। উত্তরে পুলিশ জানালো কাজ আছে সকালে চলে আসবে, এখন আমাদের সাথে যেতে হবে। কিছু না বলে আমি শাট টা নিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হই গেলাম।মোবাইল টা মাকে দিয়ে আমি ওদের সাথে হাটা শুরু করলাম। যেতে যেতে পুলিশ নরমালি নানান রকম কথা বলতেছে এটা বুঝাইতে চাইলে তেমন কোন সমস্যা নাই সকালেই বাসায় চলে যেতে পারব।থানার সামনে গাড়ী থেকে নামলাম কিছু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল আমাকে দেখে বলে উঠল কিরে উনিত ভালো মানুষ উত্তরে অফিসার বলে উঠল আমরাও জানি ভালো মানুষ। থানার ভেতরে ঢুকতেই অফিসার আমাকে উনার মোবাইল টা দিয়ে বল্লো কারও সাথে কথা বললে বল। আমি ফোন টা নিয়ে আম্মুর সাথে কথা বললাম। আম্মু বলে সমস্যা নাই চিন্তা করিস না। এরপর আমাকে থানা হাজতে ঢুকাল ভেতরে দেখি কয়েকটা চুর, কোথায় যেন চুরি করতে গিয়ে ছিল, ওখান থেকে ধরে নিয়ে আসছে। আরেকজন ভালো মানুষও ছিল বেলাল নাম। উনি আমাকে ডাক দিলেন জিজ্ঞেস করলেন কি সমস্যা উনাকে বিস্তারিত বললাম, উনি বল্লো আমারও একিই সমস্যা। উনার সাথে অনেক কথা হল রাতের বাকী সময় টুকু উনার সাথেই কথা বলে কাটাই দিলাম। শেষ রাত ছিল যেহেতু রোজার দিন ২২রমজান ছিল এক পুলিশ সদস্য এসে রাতের সেহরির কথা বললে আমি আর বেলাল ভাই খাবনা জানালাম। চুর গুলো খাইছে। আমরা দুজন খাই নাই। পরে কথা বলতে বলতে সকাল হলো আম্মু আর এলাকার বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি গণ আমার উদ্দেশ্য থানায় আসছে। আম্মুর চেহারায় কান্নার চাপ। চাচাত ভাই গুলো একে একে আসল সবাই। আমার সাথে কথা বলল। সবাই অনেক চেষ্টা করল কিন্তু পুলিশ আমাকে ছাড়বে না। কারাগারে পাঠাবে। দুপুরের দিকে বুঝলাম কারাগারে পাঠাবে। দুপুরে সবাইকে বের করে ছবি তুলল । তারপর একটা বাসে করে কারাগারের উদ্দেশ্য আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। আমি আর বেলাল ভাই পাশাপাশি ছিলাম পুলিশ গুলোও খারাপ ছিল না যেতে যেতে অনেক কথা হলো।৷ অবশেষে চিটাগং কোট এ নিয়ে গেল।ওখানে নাম ঠিকানা সব লিখার পর কোট হাজতে রাখল ওখানে দেখি অনেক মানুষ। যেহেতু অই দিন শনিবার কোট বন্ধ ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট ছিল অনেক লোক ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে বের হইয়ে গেল।বেলাল ভাইয়ের উকিল ছিল আগে থেকে রেডি করা বেলাল ভাইও বের হই গেল। আমি রয়ে গেলাম।বেলাল ভাই বের হওয়ার সময় আমাকে বলল ভাই আপনি চিন্তা করিয়েন না। আমি আপনার ফ্যামেলির সাথে কথা বলে আপনাকে বের করার চেষ্টা করব। ওখানে অবশ্যই কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে ছিল। সন্ধ্যায় ইফতার দিল। ইফতারের পর সবাইকে আবার হাতকড়া লাগাল জানলাম কারাগারে নিয়ে যাবে। একটু পর সবাইকে পুলিশ ভ্যান এ করে কারাগারের উদ্দেশ্য নিয়ে গেল।কারাগার গেইটে দেখি অনেক মানুষ সবাইকে লাইন করে দাড় করিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে দেখি অন্য রকম এক জগৎ ভয়ও পাইছিলাম খুব। তারপর আবারও ভেতরে লাইন করে সবাইকে বসাল কারা কতৃপক্ষ কিছুক্ষণ তার ভাষণ দিল। অনেক্ক্ষণ বসাই রাখার পর আমদানি নামক রুমে নিয়ে গেল।
রাতভর যন্ত্রণা আর কষ্টের মধ্যে পার হলো এই যেন রুম নর পুরাই একটি নরক। একরুমে এত মানুষ এর আগে কখনো দেখি নাই। যেহেতু রোজার দিন সেহরির সময় খাবার দেওয়া হলো। এত বিশ্বাদ খাবার মুখে দিতে যেন বমি আসে। পরের দিন সকাল সকাল উঠতে হলো নানান রকম যন্ত্রণার পরে হালদা ১০ নামক রুমে প্রেরণ করা হলো। নানান যন্ত্রণাময় এক জায়গা। সারাদিন পার করার পর বিকালে কেউ আমার নাম ধরে ডাকতে আসল বুঝতে পারলাম কেউ দেখা করতে আসছে, গিয়ে দেখি মান্না, রাসেল,বেলাল খুবই পরিচিত ৩টা মুখ। অনেক আকুতি মিনতি করে বলতে লাগলাম আমাকে এখান থেকে বের কর। উনারা বলল আগামীকাল সিউর বের করব। আচ্ছা কথাবার্তা শেষ করে চলে এলাম,। সন্ধ্যায় উনারা আমার জন্য খাবার পাঠাল। এমন এক যন্ত্রণাময় জায়গা খাওয়ার কোন প্রকার মন মানসিকতা ওখানে নাই।তারপরও বহু কষ্টে রাত পার করলাম। পরের দিন সকাল বেলা মনে হচ্ছিল আজকে মনে হয় জামিন হবে। দুপুর ৩টার সময় নাম ঘোষণা করল, দেখলাম আমার নামও আছ, বুঝতে পারলাম আমার জামিন হইছে। নিজের অজান্তে একটু ভালো লাগা কাজ করল। সকল প্রকার নিয়ম কাণুণ শেষ করতে করতে প্রায় ৫টা বেজে গেল। কারাগারের গেইটে বাবা, মা, সবাই অপেক্ষা করছিল। অবশেষে ৫টার সময় মুক্ত হলাম কারাগার নামক জাহান্নাম থেকে।