সিদ্ধিরগঞ্জের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতি বছরই এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের সঙ্গে ব্যবহার করছে ইন্টারন্যাশনাল, প্রি-ক্যাডেট, মডেল স্কুল ইত্যাদি। বেশির ভাগ স্কুলের ইংরেজি নামকরণ করা হচ্ছে। ‘বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক শিক্ষা’ প্রদানের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বছর শেষে দেখা যায়, ঐসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো অনুমোদিত স্কুল থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার নামে বছরের পর বছর এভাবে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত। এখানে ৭ থেকে ৮ লাখ লোক বসবাস করছে। সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেড ছাড়া ছোটো-বড়ো কয়েক শ’ কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে দিন দিন এ এলাকায় জনবসতি বাড়ছে। বেশির ভাগ লোক চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী হওয়ায় অভিভাবকেরা সন্তানদের পড়াশুনা করানোর জন্য ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ করে। প্রয়োজনের তুলনায় ভালো স্কুলের সংখ্যা কম থাকার সুযোগে ছোটো ছোটো গলির ভেতর কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে যত্রতত্র কিন্ডারগার্টেন এবং সঙ্গে স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করছে কিছু নামধারী ব্যবসায়ী।
খেলাধুলা বা পিটি করার মতো মাঠ নেই। বদ্ধ পরিবেশে পড়াশুনা করার কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে থাকে। বড়ো বড়ো সাইনবোর্ড ও ব্যানার নিয়ে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকের নেই প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল, মিজমিজি, সানারপাড়, নিমাইকাশারী, কদমতলী, গোদনাইল, জালকুড়ি, চৌধুরীবাড়ী, এনায়েত নগর এলাকায় এ ধরনের ২ শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে। কোনো কোনো কিন্ডারগার্টেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু থাকলেও ওপরের ক্লাশে পাঠদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে দ্বারস্থ হচ্ছে অনুমতি থাকা কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, উচ্চ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতি না থাকলেও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে স্কুলের সঙ্গে কলেজ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
পাইনাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত চৌধুরী জানান, সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ চিন্তা করে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অভিভাবকরা। প্রতি বছরই সেশন ফি ও নানা ধরনের চার্জসহ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কিন্ডারগার্টেনের লোকজন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভালো ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ার মান ভালো হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল হক বলেন, কিন্ডারগার্টেন চালুর বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় বাসাবাড়ি ও অলিগলিতে এধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে কিন্ডারগার্টেনের নামে কেউ বাণিজ্য করতে পারবে না।