রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন
ছয় বছরে তদন্তের ভার তিন সংস্থার হাতে দেয়া হলেও কেউই এখনও কুলকিনারা করতে পারেননি এ হত্যাকাণ্ডের। তদন্তের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চরম ব্যর্থতার উদাহরণ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলা।তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিলেও আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ বার্ষিকীর আগেও মেলেনি এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন। তারিখের পর তারিখ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন পেছানো হয়েছে ৫৪ বার। তদন্তের এই ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ তাদের পরিবার, স্বজন ও সহকর্মীরা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রাপ্তি নিয়ে হতাশ পরিবার ও সাংবাদিক নেতারা।
নিজের হতাশার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে সাগরের মা সালেহা মুনির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, এখন আমার মনে হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টা নয়, ৪৮ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার হবে না। এই মামলা নিয়ে নানা নাটক হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোনো একটি মহলকে বাঁচাতে মামলার তদন্ত হচ্ছে না। আমার মনে হয়, তারা হয়ত অনেক শক্তিশালী। তদন্তকারী কর্মকর্তারাও এখন আর সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না বলেও অভিযোগ করেন সালেহা মুনির।
এ ঘটনার বিচার এখনও না হওয়ায় হতাশ সাংবাদিক নেতারাও। গেল বছর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. ওমর ফারুক বলেছিলেন, আমরা হতাশ হলেও আশা ছাড়িনি এখনো। এমনও দেখা যায় কোনো কোনো মামলায় ৪০ বছর পরও অপরাধী চিহ্নিত হয়। সেই হিসেবে আমরা আন্দোলন করে যাব। কেউ যদি মনে করে থাকে কয়েক বছর পর আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়।
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সেই ধারাবাহিকতায় ১১ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের ষষ্ঠ বার্ষিকীতে সমাবেশ ডেকেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
রোববার সকাল ১১টায় রয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সমাবেশ। ওই সমাবেশে সাগর-রুনি পরিবারের সদস্য ও গণমাধ্যম নেতারা অংশগ্রহণ করবেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও শেষ না হওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুভ বলেন, আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই। অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এছাড়া সাগর সরওয়ার আর মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ মেলে। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে এসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পুলিশকে তদন্ত শেষ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেধে দেন। সেই ৪৮ ঘণ্টা আগামীকাল রোববার শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পেরুচ্ছে। ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনির হত্যা রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর ৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে একজনকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। পরে সেই ব্যক্তিকে ধরেও মামলার কোনো সুরাহা হয়নি।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পরে প্রথমে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ ও পরে ডিবি এই মামলার তদন্তভার পায়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় (২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল) হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্্যাব মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই থেকে র্যাব মামলাটি তদন্ত করছে। তদন্তভার পেয়েই ভিসেরা পরীক্ষার জন্য কবর থেকে সাগর-রুনির লাশ উত্তোলন করে র্যাব। তবে তেমন কোনো অগ্রগতিমূলক প্রতিবেদন দিতে পারেনি তারা। সর্বশেষ গেল বছরের ডিসেম্বরে আদালত মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ফলাফল এখনও শূন্য। বিচারপ্রাপ্তি তো দূরের কথা, তদন্তই শেষ করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত সংস্থা।
সম্পাদনায় : মো: শহিদুল ইসলাম