শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন
আবু নাইম শাহ, গোপালগঞ্জ থেকে , কালের খবর : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব । ড্রেজার মালিকরা গত ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে । এতে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি সহ ঘরবাড়ি ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু বলতে গেলে বলে, সরকারী রাস্তা নির্মাণ করছি, এলাকার মানুষকে প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়াও এলাকাবাসী বলেন- এই জমি থেকে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তাও নষ্ট করে দিচ্ছে ড্রেজারের লোকজন।
কোটালীপাড়া উপজেলার ঐতিহ্য আবাদী জমি। এই জমি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক মানুষ। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে এই আবাদী জমি।
কান্দির ড্রেজার মালিক সজল রায় ও উজ্জ্বল রায়, নাগরার আবু সাইদ, আমবাড়ীর জাহিদুল ইসলাম মোল্যা, পিঞ্জুরীর শামীম তালুকদার ও বাবু তালুকদার ,বড় দক্ষিণপাড়ের ইমরান শেখ, বানারজোড় আনিস হাওলাদার, আশুতিয়ার কাজল শেখ, তাড়াইলের বিধান বিশ্বাস সহ অনেকে বলেন, আমাদের ড্রেজার মালিকদের সমিতি আছে, আমরা প্রতি মাসে চাদা দেই ৫ শত টাকা , আমরা ১৫/ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সমিতিতে ভর্তি হই, আর এই দিয়ে সমিতির সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক / কোষাধ্যক্ষ প্রশাসন ম্যানেজ করে নেয় । এলাকাবাসীরা বাঁধা দিলে তাদেরকে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ড্রেজারের লোকজন বলে আমরা সরকারি অনুমতি নিয়ে বালি কাটতে আসছি। এলাকাবাসী বলেন আমাদের কথা তোয়াক্কা না করে, তারা বলে বালি আমরা রাস্তার কাজে খাটাচ্ছি। এইভাবে বালি কাটতে থাকলে এলাকার ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি সব বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দাবি অবৈধভাবে বালিকাটা বন্ধ হোক।
কোটালীপাড়ার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ কৃষক ও বিজ্ঞ মহল সাংবাদিকদের জানান, গ্রামের অধিকাংশ মানুষই গরিব। এই আবাদি জমি থেকে ফসল আবাদ করে আমাদের সংসার চলে। আর এই আবাদী ফসল থেকে প্রভাবশালীরা সব সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রাধাগঞ্জ ইউপি সদস্য কাকোন মৃধা, নিজেই চারটি ড্রেজার চালাচ্ছেন কুঞ্জুবন। বান্ধাবাড়ি ইউপি সদস্য মুকুল হাওলাদার, কুশলা ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ শেখ, হিরন ইউপি সদস্য আবু মুসা, রাধাগঞ্জ ইউপি সদস্য মহানন্দ সহ অনেকেই রাস্তার কাজ দেখিয়ে ও এখন বর্তমানে দেড় শতাধিক ড্রেজার দিয়ে রাস্তার কাজ ছাড়া ও অবৈধ ভাবে বালু বিক্রি করছে। যার ফলে কোটালীপাড়া বিভিন্ন জায়গার ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে ও অনেক ঘরবাড়ি ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বালু উত্তোলন বন্ধ না হয় তাহলে আগামীতে গ্রামের মানুষ বসবাস করতে পারবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার চেয়ারম্যান / মেম্বারা এই আবাদী জমি থেকে গত ২ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে ও প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ টাকার বালু নিয়ে যাচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু তারা চলমান কাজে খাটাচ্ছে ও বাইরে বিক্রি করছে।
কিছু অসাধু সহকারী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ ড্রেজার মালিক সমিতির বালু উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্ন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নজরে পড়লে সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের জানালে বলেন – দেখছি, কোনো অভিযোগ পাইনি, এভাবেই নিরব থাকেন।
এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ সোহেল হাওলাদারের ০১৭৩৫৭৩৫৯৫৫ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন অজুহাতের পর তিনি বলেন – আমার সাথে সাক্ষাতে কথা বলেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহীদ বলেন, কোনো ড্রেজার চলবে না, ড্রেজারের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স । যদি আপনাদের নজরে পড়ে তাহলে আমাকে জানাবেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো।