বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার দক্ষিণ কাইতলায় গ্রামে ছেলের বিরুদ্ধে এক বৃদ্ধ মায়ের অভিযোগ।
নবীনগর থানাধীন কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের কাইতলা গ্রামের মরহুম আলী আহাম্মদ ভূঁইয়ার স্ত্রী তোহেরা বেগম নিজ ছেলে মোঃ তাহের উদ্দিন ভূঁইয়া হিরু (৪২) এবং তোফায়েল আহাম্মদ ভূঁইয়া (৪৭) এর নামে নবীনগর থানায় ১৩/০৬/২০১৩ তারিখে অভিযোগ করেন।। ঘটনার তারিখ ও সময় ১১/০৬/২০১৯ । ঘটনার স্থান তোহেরা বেগমের নিজ বাড়িতে।
অভিযোগে তোহেরা বেগম উল্ল্যেখ করেন, তাঁর ছেলে তাহের উদ্দিন হিরু এবং তোফায়েল আহম্মেদ ভূঁইয়া অত্যন্ত খারাপ ও উশৃংখল প্রকৃতিক লোক। তারা (ছেলেরা) প্রবাসে ছিল এবং প্রবাসে থাকা অবস্থায় উনার কোন খোঁজ খবর রাখেনি এবং বরন পোষন দেয়নি ।
অভিযোগের তোহেরা বেগম আরও উল্ল্যেখ করেন, আমার স্বামী গত ২০০৯ সালে মৃত্যুবরন করেন। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর হইতে আমি তাহার নামীয় দোকান ভিটি ও সম্পত্তির আয় উপার্জন দিয়া জীবিকা নির্বাহ করি।বর্তমানে বিবাদীদ্বয় প্রবাস হইতে নিজ বাড়িতে আসিয়া অবস্থান করিতেছে। বিবাদীগন প্রবাস হইতে আসার পর থেকেই একচাটিয়া ভাবে আমার স্বামীর নামীয় সম্পত্তি ও বাড়ি তাহাদের নামে লিখিয়া দেওয়ার জন্য আমার উপর চাপ সৃষ্টি করতঃ আমাকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন শুরু করে। এছাড়াও বিবাদীদ্বয় আমার অপর ছেলে তোজাম্মেল ভূঁইয়াকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করিতেছে। ঘটনার তারিখ ও সময়ে বিবাদীদ্বয় সম্পত্তি ও বাড়ির বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া আমাকে বসত ঘর হইতে বাহির হইয়া যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আমি বাহির হইতে না চাইলে বিবাদীদ্বয় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে এবং মারধর করিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে। বিবাদীদ্বয় এহেন কর্মকান্ডে প্রতিয়মান হয় যে, তাহাদ্বয় যে কোন সময় আমাকে মারধর করিয়া বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দিবে।
তোহেরা বেগম এর থানার অভিযোগটি আমাদের প্রতিবেদক পাওয়ার পর উনার মুঠো ফোনে কথা বলে এর সত্যতা তিনি স্বীকার করে কান্না জড়িত কন্ঠে জানান বসত বাড়ীটি আমার নিজের নামে। তথাপিও আমার ছেলে হিরু এবং তোফায়েল এলাকার বিভিন্ন স্থানিয় মাতবর ও বর্তমান চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে আমাকে সম্পত্তি বন্টন করে দিতে বারবার চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি একদিন বাড়িতে পুলিশও নিয়ে এসে আমার সহজ সরল আরেক ছেলে তোজাম্মেলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই আমাকে এক মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে রেখে চাপ প্রয়োগ করছে। গত ২২ জুন ২০১৯ তারিখে ছেলে তাহের উদ্দিন হিরু এবং তোফায়েল গ্রামের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্থানীয় মাতবর এবং নবীনগর থানাধীন শিবপুর ফাঁড়ির থেকে পুলিশ এনে আমার বাড়িতে ছায়মানা টাঙ্গিয়ে তাদেরকে খাওয়ান। তখন পুলিশ সহ উপস্থিত সকলেই সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার জন্য আমাকে বলেন এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমার অন্যান্য ছেলে মেয়েকে উপস্থিত রাখতে বলেন। ঊনারা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সম্পত্তি বন্টন করে দিবেন। তাদের এই কথা শুনে আমি বাধ্য হয়ে আমার প্রবাসে থাকা আরেক ছেলে লিমনের কথা বলি। লিমনের অনুপস্থিতে কি করে সম্পত্তি ভাগ করে দিব। তখন উপস্থিত যারা ছিল তাঁরা আমাকে বলে আপনার ঐ ছেলের সাথে আমরা ফোনে কথা বলে নিব।
কান্না জড়িত কন্ঠে তোহেরা বেগম বলেন, বাবা আপনি কে আমি জানিনা। ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখেই উনার সাথে মুঠো ফোনে কথা বলছিলেন।
তিনি মুঠো ফোনে বলেন, আমার বয়স (৬৮) হয়ে গিয়েছে, এই সম্পত্তি কি আমি কবরে নিয়ে যাব? কেন তারা আমার সাথে এই রকম খারাপ আচরণ করছেন বুঝতে পারছিনা। অনেক কষ্ট করে গরমের জন্য পানির তৃষ্ণা মিটাইতে কিছু টাকা জমিয়ে একটা ফ্রীজ কিনেছি তাও আমার ছেলে হিরু নিয়ে গেছে। আমি যে ঘরে নামাজ পরতাম সেই ঘর থেকে অন্য ঘরে সরিয়ে দিয়েছে। আমি শান্তিমত নামাজও পড়তে পারি না। আমার ছেলে লিমনের একটা আলমারি ছিল সেইটাও সরিয়ে না নিলে ফেলে দিবে বলছে। আমি এবার রমজানে এত্তেকাফে ছিলাম সেখান থেকে এসে আজ পর্যন্ত একটু শান্তি পাই নাই। সবাইতো আমার সন্তান কার কাছে আমি তাদের বিচার দিব বলেই কাঁদতে লাগল তোহেরা বেগম ।
আমাদের প্রতিবেদকের মুঠো ফোনের কিছু প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার ছেলে তাহের উদ্দিন হিরু বর্তমান চেয়ারম্যান ও মাতবরদের টাকা খাওয়াইয়া ( ঘুষ দিয়ে) এই সব করাইতেছে। মাতবররা টাকা খেয়ে তার (হিরুর) পক্ষেই কথা বলে। আমার একার পক্ষে কি করার আছে। তাদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারমো না। দারাগা সাহেব বলেছে, খালাম্মা কি আর করবেন সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে দেওয়াই ভাল।
এই বিষয়ে আরও কিছু সত্যতার জন্য আমাদের প্রতিবেদক আবারও মুঠো ফোনে কথা বলেন তোহেরা বেগমের একজন মেয়ের সাথে । তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে রাজশাহীতে থাকেন। উনার কথাও তার মা তোহেরা বেগমের সাথে পুরোপুরি মিল রয়েছে।
তিনি তার মায়ের কথার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান, মাতবনদের টাকা দিয়ে আমার ভাই তাহের উদ্দিন হিরু এবং তোফায়েল মিলে এইসব করছে। কিন্তু কেউ সঠিক বিচার টুকু করছে না। তবে চেয়ারম্যান মাতবরদের মান রক্ষার্থে শত কষ্ট হলেও তাদের দেওয়া দশ দিনের ভিতরে আমরা উপস্থিত থাকার চেষ্টা করব। কিন্তু আমার আরেক ভাই লিমন প্রবাসে আছে। সে তিন মাস পর দেশে আসবে, তখনই যা করার করব। কিন্তু বসত ভিটা আমার মায়ের নামে থাকা সত্ত্বেও কোন শক্তির বলে আমার ভাই হিরু ও তোফায়েল এইসব করছে তা আমরাও বুঝতে পারছিনা
প্রতিবেদকের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তোহেরা বেগম বলেন, থানায় অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছি না। তাদের শক্তির কাছে আমি বড়ই অসহায়। এই বিষয়ে আপনারা যদি পারেন দয়া করে একজন মা হিসেবে আমাকে সহযোগীতা করেন।
(চলবে)