মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার নুরুল আবছার, কালের খবর :
কক্সবাজার রামু উপজেলা খুনিয়াপালং ইউনিয়নের এক পিতা হারা সন্তানের প্রতি বহুরুপী নারীর অর্থাৎ নিজ মায়ের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে সন্তান খালিদ মোহসিন লাভিদ। বাবা ফরিদুল আলম সিঙ্গাপুর প্রবাসে থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর নিজের মা আসমাউল হুসনা বেপরোয়া হয়ে নানা জায়গায় গিয়ে একাধিক বিয়ে করে। সাথে তিন বছরের শিশুকে নিয়ে চলে আসে কক্সবাজার লিংক রোড এলাকায়। সৎ পিতা আর বহুরূপী নারীর রোষানলের শিকার অবুঝ সন্তান….। কিন্তু রাতে দিতে স্থানীয় মানুষের অগোচরে গিয়ে ১০ বছরের সন্তানকে কখনো হাত পা কখনোও মূখ বেঁধে বেদম প্রহার করে নিজের মা ও সৎ পিতা মিলে। এমন ন্যাককারজনক ঘটনার বর্ণনা দিলেন রামু উপজেলা খুনিয়াপালং ইউনিয়নের খালিদ মোহসিন লাবিদ ও তার আত্মীয় স্বজনরা।
বারবার এসব নির্যাতনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অবুঝ শিশুটি পুরোনো বাবার বাড়ি অর্থাৎ তার দাদার বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু মা সবেক স্বামীর (ফরিদুল আলমের) ভাগে পাওয়া ছেলের সম্পত্তির লোভে দাদার বাড়ি থেকে চাপ প্রয়োগ করে এবং টেনে হেঁচড়ে মারধর করে নিয়ে যায়। সেখানে ছোট্ট শিশুকে চাপ প্রয়োগ করে সম্পত্তি খুঁজতে বাধ্য করান পাষণ্ড মা আসামাউল হুসনা । এমনকি নিজের সন্তানের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলেছে নানাভাবে নির্যাতন করে। এইভাবেই প্রতিদিন কোন না কোন নানা বাহানা তুলে নিজের পেটে জন্ম নেওয়া সন্তানকে মারধর করেন পাষণ্ড লোভী নারী আসমাউল হুসনা।
সর্বশেষ এই নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে গত চার পাঁচদিন আগে নিজের দাদার বাড়ি চলে আসে। কক্সবাজার থেকে ২৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে দাদার বাড়ি চলে আসায় ঘটে নানা বিপত্তি। নিজের মা সন্তানকে জোরপূর্বক দাদার বাড়ির লোকজন অপহরণ করে তুলে নিয়ে আসছে বলে সাজানো হয়েছে নতুন ফন্দি ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার রামু থানা ও হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে একাধিক অভিযোগ দিয়ে ঐ নারী নিজের সন্তান লাবিদের বিষয়টি পরিস্কার করতে পারেনি।
সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলার নাটক সাজিয়ে এজাহার জমা দেন এই লোভী নারী। কিন্তু মামলার এজাহার অনুযায়ী ও সাংবাদিকদেরকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে তলের বিড়াল।
রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের রাবেতা হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে, খালিদ মোহসিন লাবিদ তার দাদার বাড়ির ওঠানে হাসিমুখে কোলাহল মুক্ত জায়গায় খেলাধুলা করার দৃশ্য। শান্তিতে খেলাধুলা করতে পেরে মহা খুশি লাবিদ । কিন্তু দাদার বাড়ির লোকজন তথা নিজের চাচাদের নিয়ে লাবিদের মা মিথ্যা নাটক সাজানোর বিষয়টি পুরোটাই ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন স্থানীয় লোকজন।
পাশাপাশি খালিদ মোহসিন লাবিদ’র কাছ থেকে একাধিকবার জিজ্ঞেস করে জানা যায় যে, তার মা তাকে দাদার বাড়ি থেকে সম্পত্তি খুঁজতে বাধ্য করে বারবার মারধর করেন। আমাকে কখনো কামড় দেয় কখনোও হাত পা গাছের সাথে বেঁধে বড় বড় লাটি দিয়ে প্রহার করে। এবং সবসময় লাতি কিল ঘুষি মারে। এমনভাবে নির্যাতন করে যে আমি সহ্য করতে পারিনা। তাই আমি দাদুর বাড়ি চলে এসেছি। আমাকে কেউ জোরপূর্বক এখানে আনা হয়নি। আমি নিজের ইচ্ছায় কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে এসেছি। আমি আমার চাচু ও দাদিদের সাথে থাকতে চাই। আমাকে আমার মা মেরে ফেলবে। আমার মা মারাত্মক নির্যাতন করে। আমার মা বারবার বিয়ে করে করে ঐসব লোক দিয়ে আমাকে মারধর করায়। তাই আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার দাদুর পরিবারে থাততে ভালবাসি। আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাইনা।
দাদী ছফুরা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সিঙ্গাপুর থাকাবস্থায় দূর্ঘটনায় মারা যায়। আমার ছেলে বিদেশ থাকা অবস্থায় ও আমার ছেলের বউ আসমাউর হুসনা বেপরোয়া ছিল। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমার ছেলের জমানো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে। তার কাছে আমার সন্তানের ছেলে রয়েছে। যার নাম খালিদ মোহসিন লাবিদ। তিনি ছোট থেকে মায়ের সাথে থেকে এসেছে। কিন্তু ঐ নারী বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে করে করে আমার নাতিকে নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। আমার নাতি লাবিদ সহ্য করতে না পেরে আমার কাছে ও তার চাচাদের কাছে চলে আসে। আমরা চাই নাতি লাবিদ যেখানেই খুশি শান্তিতে থাকুক। আমার নাতির শান্তি মানেই আমার পুরো পরিবারের শান্তি। কিন্তু সম্পত্তি ভাগিয়ে নিতে এমন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া খুবই দুঃখজনক। একইভাবে লাবিদের চাচা আলমগীর ও জহুর আলমেরও একই কথা।
এবিষয়ে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ বলেন, লাবিদের দাদার পরিবারটি একটি সবচেয়ে স্বচ্ছ পরিবার। তার মা একটি চরিত্রহীনা নারী। তার নির্যাতন সইতে না পেরে দাদার বাড়ি চলে আসার কথা শুনেছি। তবে এর আগেও ঐ নারী অর্থাৎ আসমাউল হুসনার সম্পর্কে একাধিক বিচার করিয়েছি। কিন্তু মেয়েটি বারবার নিজের অবুঝ ছেলের প্রতি এমন অমানবিক নির্যাতন কেউ সহ্য করতে পারছেনা। মেয়েটি অবুঝ সন্তানের বাবার পাওয়া সম্পত্তি ভাগিয়ে নিতে এমন পায়তারা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।