বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
ঢাকা জেলা দক্ষিণ প্রতিনিধি, কালের খবর : ঢাকার দোহার উপজেলা মাহমুদপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের নয় নং ওয়ার্ডে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমির (টপ সয়েল) ভেকু ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করে বিক্রির মহোৎসব চলছে। আর এতে কৃষি ফসলের উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা। বিনষ্ট করছেন ৫ থেকে ৬ বিঘা কৃষি জমি ও পাশে থাকা এলজিইডি’র সড়ক। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষকেরা। এসব জমিতে বছরে মৌসুমে ধান, সরিষা, রসুন ও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। ২টি মাহেন্দ্রা ও ১টি ট্রাক্টরে মাটি যাচ্ছে পাশে থাকা PBC ইটভাটায়। এভাবেই উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে চলছে বেশ কয়েকটি বেকুসহ ড্রেজার। ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডে চকে ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন লিটন দেওয়ান এবং ঐ চকেই আরেক স্থানে মো:হোসেন সরাসরি কৃষি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধ ভাবে তোলছে মাটি । বেকুর মাটি যাচ্ছে PBC ইট ভাটায় আর ড্রেজার দিয়ে তোলা মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ভরাট এর কাজে।
এছাড়াও মাহমুদপুর ইউনিয়নে মাইলের পর মাইল ড্রেজার পাইপ সংযোগ দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে। ভেকুতে জমির টপ সয়েল ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফসলি জমিগুলোকে ১৫ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে। এতে আশ-পাশের ফসলী জমি ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে জলাশয়। যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া এই স্থানে বেকু দিয়ে মাটি কাটার দায়ে কয়েক মাস আগে দোহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মোবাশ্বের আলম এই স্থান থেকে একটি বেকু জব্দ করেন। এছাড়াও যে স্থানে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে সেখানে দুই মাস আগে অভিযান পরিচালনা করে দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুস্তাফিজুর রহমান সে সময় ঐ ড্রেজার এর হেন্ডেল নিয়ে আসে।
মাহমুদপুর ইউনিয়নের ঐ স্থানের পাশে থাকা জমির কৃষক মো: মীর আলী জানান, আমাদের এই চক থেকে একটানা কয়েক দিন মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানিও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। পরে প্রশাসন বেকু জব্দ করার পর কিছু দিন বন্ধ ছিল এখন আবার তারা সব কিছু মেনেজ করে চালু করেছে। আশেপাশের জমিগুলো ড্রেজিংয়ের গর্তে পড়ে যাওয়ার আতঙ্কে কৃষকরা নাম মাত্র টাকায় জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিশাল এ উপজেলার এই মাহমুদপুর গ্রামে দেদারসে চলছে ড্রেজার, ভেকু ও মাটিবাহী ট্রাক্টর। আর এতে আমাদের বাসার সামনে থাকা রাস্তায় মাটি পরে ধুলোয় পরিনত হচ্ছে সেই সাথে বৃষ্টি হলেতো কথাই নাই পুর পাকা রাস্তা কাঁদায় পরিনত হয়। আর এর মূল কারণ হচ্ছে পাশে থাক PBC ইট ভাটা যদি ভাটা না থাকে তাহলে আর এই সমস্যা হয়না।
ইট ভাটার মালিক পক্ষ লিটন দেওয়ানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা কামাল মাস্টার এর কাছে থেকে মাটি কিনে নিয়েছি সে জন্য তাকে আমরা টাকাও দিয়েছি। তার জমিন উঁচুনিচু ছিল সে জন্য আমরা সমান করে দেওয়ার জন্য বেকু দিয়ে কাটিতেছি।
মাটি কাটার বিষয় জমির মালিক কামাল মাস্টার এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি জমিতে ফসল উৎপাদন করবো বলে আমি লিটন দেওয়ানকে আমার জমি সমান করার জন্য দিয়ছি। আপনার জমির মাটি কেটে বালু বের করা হচ্ছে এ বিষয় প্রশ্ন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জমিনে যায়নি অনেক দিন হল তাই এ বিষয় কিছু জানি না তবে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি।
অন্য দিকে কৃষি জমি থেকে সরাসরি মাটি কাটার বিষয় মো: হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমিতো সব জায়গা মেনেজ করেছি তারপরও আপনারা কেন এসেছেন। আমি যে মাটি কাটতেছি সে মাটি স্কুল ও বাড়ি ভরার কাজে ব্যবহিত হচ্ছে।
দোহার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আমি সেখানে লোক পাঠিয়েছি পরাবর্তী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ‘মোবাশ্বের আলম বলেন, তাদেরকে পাওয়া গেলেই ধরা হবে। প্রশাসন আবারও অভিজান পরিচালনা করবে দ্রুত।