রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি, কালের খবর : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতির প্রদর্শনী দেখে ওই চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে মৎস্য চাষিরা। মোরেলগঞ্জ মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ীয়া গ্রামে খাঁচায় পরীক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়ার চাষ দেখে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলের চাষিদের মাঝে।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে স্বল্প ব্যয়ে কম সময়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প’-এর সহযোগিতায় বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে এভাবে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বাবু প্রণব কুমার বিস্বাস বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় গুয়াবাড়ীয়া গ্রামের ২০ জন প্রান্তিক চাষিকে একত্রিত করে একটি গ্রুপ তৈরি করেছি। তাদের নামে একটি যৌথ ব্যাংক হিসাব খুলে সেখান থেকে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করা হয়। মাছ বিক্রির লভ্যাংশও ওই হিসাবে জমা হয়। পরে ওখান থেকে চাষিরা টাকা ভাগ করে নেয়।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, এদের ওই এলাকার গুয়াবাড়ীয়া খালে উন্মুক্ত জলাশয়ে ১০টি খাঁচা তৈরি করে দেওয়া হয়। নেট ও নেটের জাল, বাঁশ ও প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে বিশেষভাবে এ খাঁচা তৈরি করা হয়। প্রতিটি খাঁচা ২০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া থাকে।
একটি খাঁচা তৈরি করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একবার তৈরি করলে ১০ বছর পর্যন্ত খাঁচাগুলো ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি খাঁচায় ৮০০ থেকে এক হাজার তেলাপিয়ার পোনা চাষ করা যায়। তিন মাস পরে পোনাগুলো বিক্রি করা যায়। এতে প্রতিটি খাঁচা থেকে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব হয়।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া গ্রামের একটি খালে ১০টি খাঁচার সমন্বয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তৈরি করা সমন্নিত মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় আমরা এলাকায় ১০টি খাঁচায় তেলাপিয়ার চাষ করি। খাঁচায় চাষ করার কারণে পরিমাণমতো খাবার দেওয়া যায়। মাছের কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যার ফলে লাভও ভালো হয়।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে চাষের কারণে মাছের মৃত্যুহার অনেক কম থাকে। এ জন্য খাঁচায় মাছ চাষ খুবই লাভজনক। মাত্র তিন মাসেই চাষিরা তাদের মাছ তুলতে পারেন। খাঁচায় মাছ চাষ করে বিনিয়োগের প্রায় ৪০ শতাংশ লাভ করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, চাষিদের মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার চারটি উপজেলার চারটি জলাশয়ে মোট ৪০টি খাঁচায় পরীক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়ার প্রদর্শনী খামার করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনী খামার দেখে অনেক চাষি উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।