শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধি, কালের খবর : বরিশালে অর্ধশত স্থানে নদী ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ
বরিশাল জেলার অর্ধশত পয়েন্টে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, গাছপালাসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব।
নদী ভাঙনে সহায়-সম্বল হারানো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে, অন্যের জমিতে খোলা আকাশের নিচে। তারা নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নদী ভাঙন প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
নদ-নদীর দেশ বরিশালে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু এবার ভাঙন তীব্র হয়েছে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। মধ্য আগস্টে বরিশালের বাবুগঞ্জের মহিষাদী এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় রাশিদা-মোশারফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন। এখনও সেখানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সংলগ্ন বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা। এছাড়া বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর পূর্বপ্রান্তও সুগন্ধা নদীর ভাঙনে হুমকিতে।
শুধু মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুই নয়, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত। গত কয়েক বছরে নগরীর রূপাতলী ধান গবেষণা সড়কের খেয়াঘাট সংলগ্ন ফকিরবাড়ি, সিকদার বাড়ি, খলিফা বাড়ি, মোল্লা বাড়ি ও খান বাড়ির বৃহদাংশ কীর্তনখোলার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনই ওই এলাকায় নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে আগামীতে দপদপিয়া সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত নদী ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দা মো. রফিক।
শুধু এই দুটি স্থানে নয়, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বাবুগঞ্জের রমজানকাঠী, উত্তর বাহেরচর, সুগন্ধা নদীর ভাঙনে বাবুগঞ্জের চরসাধুকাঠী (সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বাড়ি সংলগ্ন), আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ, মহিষাদী এলাকায় রাশিদা-মোশারফ একাডেমী ও ক্ষুদ্রকাঠী, আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে মীরগঞ্জ বাজার, জয়শ্রী নদীর ভাংগনে মৃধারহাট ও নোমরহাট, রাঙামাটি নদীর ভাংগনে বাকেরগঞ্জের দূর্গাপাশা ও বলাইকাঠী, কীর্তনখোলার ভাঙনে সদর উপজেলার চরকাউয়া ও সাতানী এবং মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনার ভাংগনে উলানিয়াসহ জেলার অর্ধশতাধিক স্থানে নদী ভাংগন তীব্র হয়েছে। নদী ভাঙনে এসব এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে বাবুগঞ্জের মহিষাদী এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙনের কবল থেকে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষায় সড়ক বিভাগ সেখানে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে ব্লক সংগ্রহ করে নগরীর রূপাতলী ধান গবেষণা সড়কের খেয়াঘাট এলাকার মানুষ নদী ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরও ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না। তাই প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের আশঙ্কায় দিনযাপন করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।
যদিও বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রমজান আলী প্রামানিক বলেছেন, পাউবোর প্রকৌশলীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তীব্র নদী ভাঙনকবলিত ৫০টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে। এসব স্থানে নদী ভাঙন প্রতিরোধের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি। অপরদিকে মেঘনা নদীর ভাঙনের কবল থেকে মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া রক্ষায় ৩৮৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষে শীঘ্র উলানিয়ায় নদী ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরুর কথা বলেছেন পাউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামানিক।