মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী প্রতিনিধি, কালের খবর :
‘বেশ কিছু রাস্তায় এখনো খানাখন্দ আছে’—বলছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। তিনি ‘বেশ কিছু রাস্তা’ বললেও বাস্তবে জেলার বেশির ভাগ রাস্তাই এখন খানাখন্দে ভর্তি।
রাজশাহীর মহাসড়ক থেকে শুরু করে উপজেলা এবং গ্রামপর্যায়ের বেশির ভাগ রাস্তার কার্পেটিং উঠে প্রায় মাটির রাস্তার চেহারা নিয়েছে। কিছুদিন আগে সংস্কার করা হয়েছে এমন কিছু রাস্তাও এখন ‘হাঁ’ করা গর্ত নিয়ে খারাপ অবস্থা থেকে জঘন্য অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কোনো কোনো রাস্তায় একদিকে কাজ চলছে, তো আরেকদিকে ভেঙেচুরে গেছে—এমন ঘটনাও ঘটেছে। ফলে রাজশাহীর ৯টি উপজেলার লাখ লাখ মানুষের সড়কপথে যাত্রায় নিরাপত্তা নেই। প্রায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছেও।
রাজশাহী জেলা শহর থেকে দুর্গাপুর উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৩১ কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে দুটি রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় উপজেলা সদরে। এর একটি রাস্তা হলো কাটাখালি-দুর্গাপুর আর অন্যটি শিবপুর-দুর্গাপুর। কিন্তু দুটি রাস্তার বেশির ভাগই খানাখন্দ আর ভাঙাচুরাই যেন বিধ্বস্ত হয়ে আছে।
এর মধ্যে কাটাখালি থেকে দুর্গাপুরের চৌপুখরিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং শিবপুর-দুর্গাপুর রাস্তার পালি থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারের অবস্থা বেশি খারাপ।
পুঠিয়ার মহেন্দা গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘কাটাখালি-দুর্গাপুর ২০ কিলোমিটার রাস্তার ১৫ কিলোমিটারই ভাঙা। রাস্তাটি গত বছরই সংস্কার করা হলে কয়েক দিন পরই খারাপ হয়ে যায়। গত বর্ষায় রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়লে মহেন্দ্রা এলাকার মানুষ কয়েকটি অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে কোনো মতে যান চলাচলের অবস্থা হয় গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটিতে। ’ দুর্গাপুরের কুহাড় গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, রাস্তাটির যেন বাপ-মা নেইই। কয়েক বছর পর পর নামেমাত্র সংস্কার করে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়। দুর্গাপুরের পালি বাজারের বাসিন্দা মুঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘বিশেষ করে পালি বাজার পার হয়ে সমিলের কাছে এবং সমিলের পশ্চিম পাশের কয়েকটি স্থানে একেবারে দুরাবস্থা। দুটি স্থানে বাধ্য হয়ে এলজিইডি অফিস থেকে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’
বাগমারার শামীম হোসেন জানান, এ উপজেলার মাথাভাঙা থেকে বাইপাড়া, মাদারীগঞ্জ থেকে মচমইল, মচমইল থেকে খালগা রাস্তাগুলোর করুণ দশা হলেও সংস্কারের উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। ’
রাজশাহী জেলা শহর থেকে তানোর উপজেলা সদরে যাতায়াতের অন্যতম রাস্তাটি বায়া থেকে শুরু করে কাশিম বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দে ভর্তি। পবার দুয়াড়ি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, তানোর উপজেলা সদরে যেতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট, লাগছে অন্তত এক ঘণ্টা।
রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর কাকনহাট পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তাটিরও অবস্থা বেহাল। একইভাবে মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা এবং পুঠিয়ার রাস্তাগুলোর বেশির ভাগ কার্পেটিং উঠে গেছে।
এদিকে কয়েকটি রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় পৌরসভাগুলো। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই কাজের মান খুবই খারাপ। দুর্গাপুরের সিংগা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, বহরমপুর থেকে সিংগা রাস্তাটি সংস্কার হতে না হতেই ভেঙে যাওয়ার কারণ নিম্নমানের কাজ।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা কালের খবরকে বলেন, ‘জেলায় বেশ কিছু রাস্তায় এখনো খানাখন্দ আছে। এসব রাস্তা সংস্কারের জন্য দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু রাস্তায় কাজও শুরু হয়েছে। তবে কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ’
কালের খবর -/কে/কে