রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিনিধি, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিএনপি’র গতকালের (২০ নভেম্বর) সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রথম দফায় সোমবার (১৮ নভেম্বর) দলটির বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। রক্তক্ষয়ী ওই মারামারির পর স্থানীয় প্রশাসন পৌর শহরে বৃহস্পতিবার (আজ) সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে।
কিন্তু উপজেলা বিএনপি ১৪৪ ধারার মধ্যেই শহরের বাইরে একটি গ্রামে বুধবার (২০ নভেম্বর) সম্মেলন সম্পন্ন করে।
কিন্তু সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সম্মেলন বিরোধী বিএনপির নেতাকর্মীদের সশস্ত্র হামলায় সম্মেলনে আগত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা তকদীর হোসেন মো. জসীম গুরুতর আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে।
আহত তকদীর হোসেন জসীমকে রাতেই ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
এদিকে আহত বিএনপি নেতা জসীমের রক্তাক্ত ছবির সংবাদ বুধবার রাতেই ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হলে বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
সংশ্লিটদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে বাঞ্ছারামপুর এসএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল (সম্মেলন) ডাকা হয়।
এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে প্রধান অতিথি করে এলাকায় ব্যাপক প্রচার করা হয়। কিন্তু সম্মেলনের প্রাক্কালে একই স্থানে উপজেলা বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেকের অনুসারী সমর্থকেরা ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আরেকটি আলোচনা সভার আহবান করে। এতে বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ অবস্থায় গত ১৮ নভেম্বর (সোমবার) উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে সম্মেলন বিরোধীতাকারী লোকজনের সঙ্গে অপরপক্ষ কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশের সমর্থকদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। হামলায় বেশ কিছু দোকানপাট ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সংঘর্ষের পর বিক্ষুব্ধ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ ও সদস্য সচিব একে এম ভিপি মুসা বুধবার (২০ নভেম্বর) যে কোন মূল্যে সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়।
অপরদিকে অপরপক্ষ সাবেক সাংসদ এম এ খালেকের অনুসারীরা সম্মেলন যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।
এদিকে প্রশাসন থেকে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কারণে কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতা মেহেদী হাসান পলাশের গ্রাম রাধানগরের জামিয়া মোহাম্মদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতিপক্ষের ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিরোধীতার মুখেও গতকাল বুধবার বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত রুহুল আমীন রিজভী না আসায় প্রধান অতিথি করা হয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়াকে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম ভিপি মুসার সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম প্রমুখ।
সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশকে সভাপতি এবং বর্তমান সদস্য সচিব এ. কে. এম. মুসাকে সাধারণ সম্পাদক ও সেলিম মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে উপজেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।’
এদিকে সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সম্মেলন বিরোধীদের সশস্ত্র হামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদীর হোসেন মোহাম্মদ জসীম গুরুতর আহত হন বলে খবর পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে রাতেই ঢাকায় এনে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ এ হামলার জন্য সাবেক সাংসদ এম এ খালেকের সমর্থকদের দায়ী করে বলেন,’কেন্দ্রীয় নেতা জসীম ভাইয়ের উপর বর্বরোচিত এ হামলার নিন্দা জানাই ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দেখতে চাই।’
তবে এম এ খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,’বুধবার আমি ঢাকায় ছিলাম। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতার উপর এ ধরণের হামলার আমিও তীব্র নিন্দা জানাই ও দোষীদের বিচার দাবি করছি। তবে এ সম্মেলন একটি পরিকল্পিত পাতানো সম্মেলন। জেলার নেতারা তাদের ইচ্ছামতো তৈরী এই হাস্যকর সম্মেলনের ঘোষিত কমিটি আমরা মানিনা। বিএনপির ৯০ শতাংশ নেতাকর্মী আমার সাথে আছে।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন,’৫ আগস্টের পর যারা পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে পুনর্বাসিত করতে বিএনপি সেজে এখন নানা গীত গাইছে, তারাই এই সম্মেলনকে নিয়ে নানা আবোল তাবোল বকছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্ত্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের উপস্থিতিতিতে সব বিধি বিধান মেনেই সম্মেলন সম্পন্ন করে তিন সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া আজ দুপুরে বলেন, ‘সম্মেলন নিয়ে যারা জঘণ্য হামলা করে কেন্দ্রীয় নেতাকে রক্তাক্ত করতে পারে, তাদের স্থান বিএনপিতে হবেনা। পুরো ঘটনা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে আমি লিখিতভাবে শিগগীরই জানাবো।”
তিনি জোর গলায় বলেন, ‘বিএনপির ইমেজকে ক্ষুন্ন হতে আমরা কোন ভাবেই দিবনা।”