শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন
।। এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর ।।
গত চার-পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা-ডিএনডির বাঁধের ভিতরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতায় মানুষের বসতবাড়ি, হাটবাজার, দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাস্তায় হাঁটুপানি। এতে নিচু এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছরে আ.লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতারা খালগুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এভাবে পানি নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাট এবং দখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বর্ষণ হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে ডিএনডির বেড়িবাঁধ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব। এবং ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান ভোক্তভুগীরা। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলার কারণেও খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে ডিএনডি বাঁধের ভেতরে ডেমরার মাতুয়াইল, কোনাপাড়া, বাঁশেরপুল, ডগাইর, ধিৎপুর, রাজাখালী, খলাপাড়া ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার সড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা লিংক রোডের সঙ্গে যুক্ত সদর উপজেলার প্রধান সড়ক সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন উপচে ময়লা-আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মো.আঁখি নুর চৌধুরী বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চলাচলে সবার কষ্ট হয়। মুদি ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম বলেন, খালগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ও অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে ময়লা আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা নয়ন আহমেদ বলেন, পানিনিষ্কাশনের খাল ময়লা আবর্জনায় ভরাট এবং অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে মাতুয়াইল, কোনাপাড়া, ও দক্ষিণ সস্তাপুর ছাড়াও গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সদরের পূর্ব ইসদাইর, লালপুর, সেহাচর, তক্কার মাঠ, ফতুল্লা রেলস্টেশন, পিলকুনী, পশ্চিম রামার বাগ, ভুঁইগড়, জালকুড়ি, বৃষ্টি ধারা, শান্তি ধারা, গিরিধারা, মামুদপুর, সানারপাড় ও তুষারধারাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, ডেমরার মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা মনসুর আহমেদ। তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পানিনিষ্কাশনের খাল ময়লা আবর্জনায় ভরাট এবং অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। খাল পরিষ্কার ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও গত আট বছরেও তা শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানোর পর আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।
ডিএনডি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে একনেকে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের কাজ পাস হলেও ২০১৭ সালে কাজ শুরু হয়। দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুরো অর্থ ছাড় না হওয়ায় (৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৩০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে) প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়ে ছিল। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে প্রকল্প ব্যয় ৫১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ভূমি অধিগ্রহণসহ ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা হয়েছে।
দুটি পাম্প হাউজ স্থাপনসহ প্রকল্পের ৭৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনডি প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালক ও রক্ষণাবেক্ষণ) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে আগামী ২০২৫ সালের জুনে শেষ করা সম্ভব হবে।