সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, কালের খবর :
চট্টগ্রামের পটিয়ায় দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া নবাব-মহব্বত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সামশুল হক চৌধুরী। তার দুই ভাই-মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব ও ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত। নবাব পেশায় দর্জি ও মহব্বত কৃষক হলেও ভাই সংসদ সদস্য হওয়ার পর পাল্টে যায় তাদের ভাগ্য। দুই ভাই মিলে পটিয়ায় গড়ে তোলেন অপরাধের সাম্রাজ্য। ভাই তিনবার সংসদ সদস্য ও হুইপ থাকাকালীন তাদের অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। উপজেলার গরু চোর চক্রের সঙ্গে সখ্য করে জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নাইখাইন এলাকায় অসহায় মানুষের জায়গা দখল করে একটি বিশাল ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলেন। এই ডেইরি ফার্মে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গরু চোরেরা গরু চুরি করে এনে বিক্রি করা হতো বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, নবাব দর্জি থেকে বনে যান পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য। গত ১৬ বছরে চট্টগ্রাম শহরে কিনে নেন কয়েকটি ফ্ল্যাটবাড়ি, অনেক জমি ও ব্যবসায়িক স্পেস। সরকারি সব টেন্ডার বাগিয়ে নিয়ে কমিশনে অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেন কাজ। তদবির বাণিজ্য, থানা কন্ট্রোল, মাটি বহনকারী প্রতি গাড়ি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা, বালু মহাল দখল, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, মাদক, অস্ত্রের সিণ্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো তারা। তাদের কথার বাইরে গেলে মামলা থেকে রেহাই পেতো না কেউ।
এ ছাড়াও এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে শতাধিক জায়গা জোরপূর্বক নিজেদের নামে লিখে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত ১০০টি দলিল তৈরি করে বলেও সূত্রে জানা যায়। তা ছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন হামলার শিকার ভুক্তভোগীর ভাই সামশুল হক চৌধুরীকে ১নং আসামি করে আদালতে মামলা করায় ধলঘাট ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. মিজানুর রহমান চৌধুরীকে চুরি মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এই ঘটনার নেপথ্যেও ছিল সাবেক হুইপের ভাই নবাব। শোভনদণ্ডী গ্রামের মাওলানা রফিক জানান, তাদের জায়গা দখলে নিতে মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছিলেন তারা। আমরা হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার ভাইদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। হিলচিয়া গ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিছ জানান, নবাব ও মহব্বত মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ফাঁসিয়ে দেন। এই শোষকদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোনো মামলাও তাদের বিরুদ্ধে হয়নি। উপজেলার সিনিয়র এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন চালিয়ে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। বিএনপি নেতাদের হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছেন। ছাত্রদের আন্দোলনে হামলায় তাদের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা হয়নি। এদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।