রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন
মিহিরুজ্জামান সাতক্ষীরা, কালের খবর :
ভৌগোলিক কারণে দেশে প্রথম আম পাকে সাতক্ষীরায়।তাই মৌসুমের প্রথম আম পেতে অপেক্ষায় থাকেন আমপ্রেমীরা। চলতি বছর জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ৯ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে সাতক্ষীরার গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপ ঘাস, বৈশাখী সহ আরও কয়েকটি প্রজাতির আম দেশের বাজারে উঠবে। জেলায় এবার ২৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,এ বছর সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। সব মিলে ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১০০ চাষি রয়েছেন।
জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর রপ্তানি হয় সাতক্ষীরা জেলার আম। সব মিলিয়ে এবার আম থেকে ২৫০ কোটি টাকার বেশি আয় হবে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬৮ হাজার ৮১৯ মেট্রিক টন। বিক্রি থেকে আয় হয় ২৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের আড়তদার নুরুজ্জামান বলেন, সাতক্ষীরার আম বিশ্ব বিখ্যাত,এ জেলার আম বিদেশে রপ্তানি হয়। তবে এ বছর আবহাওয়ার কারণে অনেক আম ঝরে গেছে। এখন যা আছে তা খুবই কম। গত বারের তুলনায় এ বছর আমের দাম একটু বেশি যাবে। তিনি আরো বলেন,আমাদের বাজার প্রস্তুত হয়ে গেছে আম বিক্রির জন্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারাও আসা শুরু করেছেন।
আম চাষি মিজানুর রহমান বলেন,আমার পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। ৫০টি আম গাছ লাগানো। এবার ২৫টি গাছে কিছু আম হয়েছে। বাকিগুলোতে তেমন আম হয়নি। তাপমাত্রার কারণে অর্ধেক গাছে আম হয়েছে, অর্ধেক গাছে হয়নি। এবার আমাদের মনে হয় পুঁজি থাকবে না।
উপজেলা কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান,আবহাওয়া এবং পরিবেশ গত কারণে অন্য জেলার চেয়ে সাতক্ষীরায় আম আগে পরিপক্ব হয়। এজন্য দেশের বাজারে সবার আগে এখানকার আম বিক্রি শুরু হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা আসা শুরু করেছেন। যারা আম ব্যবসায়ী ও চাষি রয়েছেন তাদেরকে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি সাতক্ষীরার আমের যে সুনাম রয়েছে সেই সুনাম ধরে রাখবেন। কোনো রাসায়নিক মিশ্রিত আম যাতে বাজারজাত না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি বাংলাদেশ সহ বিদেশি মানুষের সাতক্ষীরার ভালো আম খাওয়াতে পারব।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাতক্ষীরার হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া ও আমরুপালি স্বাদে-গুণেমানে অনন্য। এই বিশেষত্ব কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়।
জানা যায়,সাতক্ষীরা থেকে ২০১৫ সালে ২১ টন, ২০১৬ সালে ২৩ টন, ২০১৭ সালে ৩২ টন, ২০১৮ সালে ১৯ দশমিক ৫ টন, ২০১৯ সালে ১ টন, ২০২১ সালে ১১ দশমিক ৩৬ টন, ২০২২ সালে ২১ টন ও ২০২৩ সালে ১৫৩ টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়। এসব আমের অধিকাংশই রপ্তানি হয়েছে ইতালি, ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান,এ বছর জেলার ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। দেশীয় চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।
সাইফুল ইসলাম আরও জানান,যদিও প্রতিকূল আবহাওয়া ছিল। ন্যাচারাল সিলেকশন বলে একটি কথা রয়েছে,এ কারণে আম কম হলেও আমের সাইজ বড় হয়েছে। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। স্থানীয় জাত গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপ ঘাস, বৈশাখী সহ আরও কয়েকটি প্রজাতির আম দিয়ে ৯ তারিখ থেকে আমাদের জেলায় আম সংগ্রহ শুরু হবে।
পর্যায়ক্রমে ১১ মে গোবিন্দভোগ, ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ল্যাংড়া ও ১০ জুন আমরুপালি আম সংগ্রহ হবে। এই আমের যদি পরিপক্বতার নির্দেশক অনুযায়ী কৃষকরা আম সংগ্রহ করে তাহলে তারা যেমন লাভবান হবে, আমরাও তেমনি পরিপুষ্ট ও ভালো আম খেয়ে পরিতৃপ্ত হব। সাতক্ষীরায় আমের ক্যালেন্ডার ঘোষিত হয়েছে। আগামীতে যারা আম বিদেশে নেওয়ার জন্য আগ্রহী এমন ক্রেতা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে জানাতে পারব। আশা করছি বিদেশে কিছু হলেও আম রপ্তানি হবে।