সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ অপরাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : এক দিকে বাড়ছে দাম। একই সাথে বাড়ছে চাহিদা। এতে দেশের কৃষকরা বর্ধিত জমিতে মোটা দানা ফসল ভুট্রা চাষে উৎসাহ পাচ্ছে। অন্য যে কোন বছরের তুলনায় এ বছর আরও বেশি ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভুট্টা, যা একসময় বাংলাদেশের জন্য বিদেশী পণ্য ছিল। এখন ধানের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্যশস্য ভুট্রা। এ বছর ফসল কাটার সময় দাম ২৫ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড প্রতি কেজি ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) চলতি মাসের শুরুর দিকে পূর্বাভাস দিয়েছে যে দেশে ২০২২ সালে ৪৮ লাখ টন মোটা শস্য ভুট্রা উৎপাদন হবে। যা এক বছর আগের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।
পাঁচ বছরের আগে ভুট্রা উৎপাদন হয়েছিল ৩৭ লাখ টন। চলতি বছর ভুট্রা চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা ৫ বছর আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
এক গবেষনা বলঅ হয়েছে ভুট্টার লাভজনক দাম এবং শস্যের জন্য ক্রমাগত শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারনে সারাদেশে ভুট্রা চাষে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে ভুট্রা উৎপাদন বৃদ্ধির পাচ্ছে।
ভুট্টা অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমএবি) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুল হক বলেন, “ভুট্টা ফসলের দাম নিয়ে কৃষকরা সন্তুষ্ট। তাই আমরা আশা করছি উৎপাদন বাড়বে।”
হাঁস-মুরগি, মাছ ও গবাদি পশুর খাদ্যের প্রধান উপাদান ভুট্টার দাম বার্ষিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ুঠফশ বছর ফসল কাটার সময় প্রতি কেজি রেকর্ড ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
মার্কিন কৃষি বিভাগ বাংলাদেশের শস্য ও ফিড আপডেটের অক্টোবর সংখ্যায় বলেছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে, ভুট্টার পাইকারি ও খুচরা মূল্য প্রতি কিলোগ্রামে যথাক্রমে ৩২.৯ টাকা এবং ৩৪.৫ টাকায় পৌঁছেছিল, যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ দাম।
তথ্যে দেখা যায় ২০২২ সালের অক্টোবরে ভুট্টার পাইকারি এবং খুচরা মূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে প্রায় ২১ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ বেশি ছিল।
মিজান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরবরাহ কম থাকবে বলে আসন্ন ফসলের মৌসুমে ভুট্রার দাম বেশি থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পশু, পাখির খাদ্য তৈরি, মানুষের খাদ্য তৈরী এবং স্টার্চ তৈরির জন্য বাংলাদেশের প্রায় ৭০-৭৫ লাখ টন ভুট্টার প্রয়োজন হয়।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পোল্ট্রি ফার্মগুলি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফিড ভোক্তা। পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভুট্টা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন ফিড মিল প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চাহিদা অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটাতে প্রধানত ভারত, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা থেকে ২০-২৫ লাখ টন ভুট্টা আমদানি করে থাকে। আর বাকি প্রায় ৬০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত একটি গবেষণাপত্রে মিজান বলেন, ভুট্রা শস্য আমদানি করতে বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ৬৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়।
ভুট্টা, যা একসময় বাংলাদেশের জন্য বিদেশী ছিল, এখন ধানের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্যশস্য।
এক সমিক্ষায় বলা হয়েছে ভাল ফলনের সম্ভাবনা এবং উচ্চ বাজার মূল্যের কারণে দেশের কৃষকরা ভুট্টাকে একটি অর্থকরী ফসল হিসাবে বিবেচনা করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) আগের অর্থবছরের ৪.৬২ লাখ হেক্টর থেকে চলতি বছর ৪.৬৩ লাখ হেক্টর জমিতে ভাট্রা শস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে।
ডিএই এর ফিল্ড সার্ভিস উইং-এর মনিটরিং অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশনের অতিরিক্ত পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চলতি বছর এখন পর্যন্ত কৃষকরা ৩ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টা রোপণ করেছেন।
তিনি বলেন।”এখন পর্যন্ত ভুট্টার ক্ষেতগুলো অপূর্ব লাগছে। অনেক কৃষক অন্য ফসল থেকে ভুট্টা চাষ করেছেন। বিভিন্ন সংস্থার পতিত জমিতেও শস্য চাষ করা হয়েছে”। চাষিরা ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ভুট্রা শস্য রোপণ করবেন।
তিনি বলেন “আমরা উত্তর ও মধ্য জেলায় চরের জমিতে চাষাবাদে জোরালো প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি,” এ বছর চর এলাকায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঅ করা হচ্ছে। মূল জমিতেও ভুট্টার আবাদ বাড়বে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন “কৃষকরা এ বছর সময়মতো ভুট্টা রোপণ করছেন এবং আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূল বলে মনে হচ্ছে”।