মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন
কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ইয়াসিন মনি খান, কালের খবর : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের আকাবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর ও আক্কাছ হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীগণ আত্মগোপন থেকে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য উক্ত মামলার বাদী ও পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। মামলা না তুললে তারাও মামলা করবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় আকাবপুর গ্রামে নিহত পরিবার ও খুনের মামলার সাক্ষীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে আসামী পরিবারের পক্ষ থেকে পর পর কসবা থানায় তিনটি অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশি তদন্তে তাদের আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে, আক্কাছ হত্যা মামলার বাদী মোঃ ফারুক মিয়া জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নং-১৩৮৭।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছর পূর্বে জাহাঙ্গীর হত্যার জের ধরে গ্রামে বিবাদমান দু’পক্ষের মাঝে মামলা মোকদ্দমা চলছে। জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন তার চাচাতো ভাই আক্কাছ মিয়া। তিনি জাহাঙ্গীর হত্যা মামলাটি দেখভাল করতেন।স্থানীয় রাজনৈতিক পটভূমিতে জাহাঙ্গীর হত্যা মামলাটি সিআইডির নিকট হস্তান্তর করা হয়। সিআইডি এখনো ওই মামলার চার্জশিট প্রদান করতে পারে নি। এমনকি পুলিশ এ যাবত কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারে নি। জাহাঙ্গীর হত্যার পর আক্কাছ মিয়া নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২ অক্টোবর ২০২০ সালে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবু তাহেরসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
ফলে আসামী পক্ষ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিহত জাহাঙ্গীরের লোকদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় গত ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখে নিহত জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই ও জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী উপজেলা পিকআপ ভ্যান সমিতির সভাপতি মোঃ আক্কাছ মিয়া (৪৫)-কে হত্যা করে। আক্কাছ মিয়া ঘটনার দিন তার প্রথম স্ত্রীর কবর যিয়ারত করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাবেক কমিশনার আবু তাহেরের নেতৃত্বে মৃত আবদুল খালেকের ছেলে রহিম মিয়া (৪৫), শহিদ মিয়া (২৭), মজিদ মিয়া (৩৫), কাউসার মিয়া (২২), সাত্তার মিয়া (৩৭) এবং আবু তাহেরের ছেলে তারেক ও ভাতিজা রুবেল মিয়া দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় আক্কাছ মিয়ার উপর। আসামীরা এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। এ সময় তার আর্তচিৎকার শুনে তার ভাই হিরন মিয়া (৬০), রমজান মিয়া (৫৪) ও ভাতিজা শাকিল মিয়া (২৫) তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদের উপরও হামলা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে আক্কাছ মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিলে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর কসবা থানা পুলিশ জাহাঙ্গীর ও আক্কাছ হত্যার মূল হোতা আসামী আবদুর রহিমকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে রহিমকে কসবা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অন্যান্য আসামীরা ভারত সীমান্তের ভেতরে ও কসবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে রাতের আঁধারে গ্রামে মহড়া দিচ্ছে বলেও ভুক্তভোগীরা জানায়।
এ বিষয়ে কসবা-আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম জানান, আকাবপুরে জাহাঙ্গীর ও আক্কাছ হত্যা মামলার আসামীগণ মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ায় মামলার বাদী ফারুক মিয়া কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাহাঙ্গীর ও আক্কাছ হত্যার অন্যতম আসামী আবদুর রহিমকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।