রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও তার স্বজনরা প্রতিনিয়ত পড়ছেন দালালের খপ্পরে। করোনাকালেও থেমে নেই তাদের দৌরাত্ম্য। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে ওষুধ কিনতে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও দালালের ফাঁদে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকেই টার্গেট করা হয় রোগীদের। এরপর ওয়ার্ড পর্যন্ত পিছু নেয় এসব দালাল। ন্যায্যমূল্যে ওষুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে তাদেরকে (রোগীর স্বজনকে) নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে। যেখানে আদায় করা হয় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দাম। ৬০ দালালের একটি চক্র কাজ করেন ওষুধ বিক্রিতে। মেডিকেলের পূর্ব গেটে অবস্থিত ২৬ ফার্মেসির হয়ে কাজ করেন তারা। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের রেড জোনের ভেতরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
২৬ ফার্মেসির ৬০ দালাল : ২৬টি দোকানের হয়ে ৬০ জন দালাল বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। তাদের ডিউটি চলে রোস্টার ভিত্তিতে। যেসব ফার্মেসির হয়ে দালালরা কাজ করেন এগুলো হলো হীরা ফার্মেসির দালাল হলেন স্বপন, উত্তম ও মিলন। এটির মালিক নূর মোহাম্মদ। নোভা ফার্মেসির হয়ে নুর হোসেন ও পলাশ। নিশাদ ফার্মেসির হয়ে আশিক। নিশাদ ফার্মেসি ও নোভা ফার্মেসিও তত্ত্বাবধান করেন নূর মোহাম্মদ। এ ছাড়া সজীব ফার্মেসির হয়ে সজল ও ফরিদ, লাজ ফার্মেসির হয়ে হারুন ও সাহাবুদ্দিন, ফেনী ফার্মেসির হয়ে হানিফ, মিরু, সেলিম, অর্ক ফার্মেসির হয়ে সালাহউদ্দিন ও নয়ন, তাহা ফার্মেসির রাজু, লিটন ও বুলবুল, সিকদার ফার্মেসির রয়েল, মিন্টু ও দুলাল, জনতা ফার্মেসির জিকু ও বাবু, সানন্দা ফার্মেসির ওয়াসিম, রিনা ফার্মেসির সঞ্চয় ও নিতাই, ন্যাশনাল ফার্মেসির উত্তম ও তপন, জয় ফার্মেসির রুবেল ও উত্তম, মেডিসিন ফার্মেসির অনিল, নিলয়, মিতুল ও ইরানী, একুশে ফার্মেসির বাবু, সজীব ও জাহাঙ্গীর, সিটি ফার্মেসির শাহজাহান, ফারুক ও সাইফুল, বিকে ফার্মেসির উৎপল ও মোশারফ ওরফে সুমন, সাহা ফার্মেসির শয়ন, সবুজ ফার্মেসির জসিম, আনোয়ার, মৃদুল ও সুমন, সাহান ফার্মেসির নুনু বাবু ও নিমাই, জয়নাব ফার্মেসির কার্তিক ও ফারুক, সুমন ড্রাগ ফার্মেসির তপন ও ওমর, লোটাস ফার্মেসির শাকিল, জাহাঙ্গীর ও বাবু, নীহার ফার্মেসির সবুজ ও রাশেদ এবং রাঙ্গুনিয়া ফার্মেসির হয়ে কাজ করেন সুমন, এমদাদ ও জসিম।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, দালাল প্রতিরোধে হাসপাতালের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি কমিটি রয়েছে। তারা এ নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন।
এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা থাকলেও বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অধিকাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় হাসপাতাল ফটকের সামনের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের চেম্বার এবং ওয়ার্ডের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকেন প্রাইভেট ক্লিনিকের নিযুক্ত দালাল। চিকিৎসকরা রোগীদেরকে কোনো প্রকার পরীক্ষা দিলেই তারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে যায় নিজস্ব ক্লিনিকে। আর সেখানে ইচ্ছেমতো আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। এ ছাড়া হাসপাতালে নিযুক্ত টেকনিশিয়ানরাই নানা জটিলতা এবং বিড়ম্বনার কথা বলে বাইরের ক্লিনিক থেকে দ্রুত পরীক্ষার তাগিদ ও পরামর্শ দেন। এজন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ‘টোকেন মানি’ নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসকসহ ৯৩১টি পদের মধ্যে ২৮৩টি ফাঁকা। টেকনিশিয়ান সংকটে হাসপাতালে সিটিস্ক্যান মেশিন, এমআরআই, ডিজিটাল এক্স-রে ও শিশু বিভাগের অধিকাংশ মেশিন থাকলেও রোগীরা এসব পরীক্ষা করাতে পারছেন না।