ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী সহিংসতার অভিযোগে গত ৩০ এপ্রিল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান বামনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সোনাখালী এলাকার রাফিন জোমাদ্দার আকাশ । কারাগারে গিয়ে সব খাবার সামগ্রী কয়েকগুন অধিক দামে ক্রয় করতে হয়েছে তাকে । সম্প্রতি জামিনে বের হয়ে ৩০ জুন রাফিন বলেন, কারাগারে খাবারের মান খুবই নিম্ন । ভাত থেকে দুর্গন্ধ আসে । এক দিন মাছ ও এক দিন মাংস রান্না করে । তবে মাছ-মাংস শুধু নামেই, বাস্তবে দেখা যায় না । তাই বাধ্য হয়ে খাবার কিনে খেতে হয় । কারাগারের ক্যান্টিনে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি রান্না করে বিক্রি হয় ১৩শ’ টাকায় । রান্না করার পর সেই এক কেজি মুরগির পুরোটা তাদের দেয়া হয় না । তা থেকেও অন্যদের কাছে বিক্রি করা হয় । আমি বাধ্য হয়ে ৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে খাবার কিনতাম । গরুর মাংসের দাম রাখা হয় প্রতিকেজি ১৬শ’ টাকা । এক কাপ রং চা ১০ টাকা। একটি পরাটা (সাইজে ছোটো) তাও ১০ টাকা।
সম্প্রতি জামিন বের হয়ে আসা আরেক আসামি বামনার মিজানুর রহমান সুমন বলেন, কারাগারের ক্যান্টিনে সব কিছুর দাম ৫/৬ গুন । আমি অবাক হয়েছি প্রতিদিন চড়া দামে ক্যান্টিন থেকে খাবার বিক্রি করে মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকা বাণিজ্য করে কারা কর্তৃপক্ষ । ২৫ টাকার কোমল পানীয় বিক্রি করে ৫০ টাকায় । ৫০ টাকার এক প্যাকেট বেকারি বিস্কুট বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এক পিস ডিম ৬০ টাকায়, এক পিস পাঙ্গাস মাছ ১০০ টাকায় বিক্রি হয় । আর রান্না করা সরকারি খাবারের মান এতো খারাপ যে মুখে নিলে বমি চলে আসে বদ হজম হয় । যে দিন জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে যায়, শুধু ওই দিন মোটামুটি খাবার খাওয়ার উপযোগী থাকে । কারাগারে মানুষ যে কতটা অসহায় তা বলে বুঝানো যাবে না ।
জামিনে বের হওয়া হাজতি আসামি আজিম বলেন, সরকারিভাবে দেয়া খাবারের মান খুবই খারাপ । নামেমাত্র খাবার দেয় তারা। যাতে হাজতিরা বাধ্য হয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার ক্রয় করে । তবে ক্যান্টিনের খাবার ক্রয় করতে গেলে গলাকাটার মতো অবস্থা। এক কেজি ব্রয়লার ১৩শ’ টাকা । সব পণ্যের দাম অনেক বেশি। কারাগারে থাকা অবস্থায় এসবের প্রতিবাদও করা যায় না ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বরগুনা জেলা কারাগারের জেলার ইফতেখার ইউসুফ সঠিক জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমার অফিসে আইসেন সরাসরি কথা বলবো । জেলখানার একজন ডাক্তার আছে, তার সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছিলো। তিনি এই এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করছে। আপনি অফিসে আইসেন কথা হবে’।
বরগুনা জেল সুপার নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই যে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। যদি ভেতরে আসামিদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়া হয়, সেই বন্দিরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করুক, আমি ব্যবস্থা নেবো । কেউ যদি প্রমাণ সহকারে আমার কাছে অভিযোগ না করে তাহলে আমি কিভাবে ব্যবস্থা নেবো’।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি জেলারকে ডাকবো এবং তদন্ত করবো। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।