রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন
জামালপুর প্রতিনিধি, কালের খবরর : জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামে ঘর দেওয়ার কথা বলে গরিব নয়টি পরিবারের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুলাল উদ্দিন। এক বছর ধরে তিনি ঘরও দেননি টাকাও ফেরত দেননি।
সম্প্রতি ওই নয় পরিবারের সদস্যরা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, খাসপাড়া গ্রামের দিনমজুর মিস্টার আলী, হাফিজুর রহমান, শাহীন মিয়া, শহিদুল ইসলাম, মো. হুমায়ুন, আল আমিন, আব্দুল কদ্দুছ, কুতুব আলী ও আব্দুল জব্বারের কাছ থেকে স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দুলাল উদ্দিন এক বছর আগে সরকারি বরাদ্দের ঘর এনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে মোট ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন তারা তাদের ঘর না পেয়ে কষ্টের টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সরজমিনে দুর্গম খাসপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র রিকশাচলক মিস্টার আলীর স্ত্রী রাশেদা বেগম তিন শিশু সন্তান নিয়ে একটি ছোট চালাঘরে থাকেন।
রাশেদা বেগম জানান, স্বামীর দৈনিক আয়ের টাকায় তাদের সংসার চলে। একদিন রোজগার হলে খায়। না হলে না খেয়ে থাকতে হয়। তাদের সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে।
তিনি আরো বলেন, দুলাল মেম্বার ঘর দেওয়ার কথা বলে ঘরও দেয় না।ঘরের আশায় তো ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এক বছর হয়ে গেল। ঘরও দেয় না। টাকাও দেয় না। ঝড়ের মধ্যে বাচ্চা নিয়ে চৌকির নিচে লুকিয়ে ছিলাম। ঘরে পানি পড়ে। আমাদের টাকা ফেরত চাই।
একই অভিযোগ হতদরিদ্র কৃষিশ্রমিক হাফিজুর রহমানের। শোলার বেড়া আর টিনের চালা ঘরে স্ত্রী রূপালী আর দুই মেয়ে ও এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন। বৃষ্টির পানি জমে ঘরের মধ্যে পড়ে। শোলার বেড়া দিয়েও পানি যায় ভেতরে। অনেক কষ্টে থাকেন তারা।ঘর দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য দুলাল উদ্দিন তার কাছ থেকেও এক বছর আগে ১০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু তাকে ঘর করে দেওয়া হয়নি। টাকাও ফেরত পাননি। টাকা চাইতে গেলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. দুলাল উদ্দিনের সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হয়রানি করার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছে। আমি তাদের তালিকাও করিনি। ঘর দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও নেইনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য হতদরিদ্রদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। সকল ওয়ার্ড থেকে একটি তালিকা করে দিয়েছি। কিন্তু এক বছর হয়ে গেল এখনো কোনো ঘর বরাদ্দ আসেনি।
যারা অভিযোগ করেছে তাদের নাম তালিকায় আছে কিনা, তাদের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এটা তাদের এলাকার ব্যাপার।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. মোহাম্মদ মফিজুর রহমান হতদরিদ্রদের এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কালের খবরকে বলেন, ঘরের কথা বলে টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ থাকলে তাহলে বিষয়টিকে আইনের আওতায় আনা যেতো। আর এসব ব্যাপারে টাকা নিয়ে কেউ প্রমাণও রাখবে না। তবে এরকম অনেকেই করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে। আমি ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে বিষয়টি খোঁজ নেব।