সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির নির্বাচনে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও পেশি শক্তি প্রয়োগ করে পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে মর্মে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোন ফায়দা হলনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ আমলে না নিয়ে ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তর নারায়ণগঞ্জ এর কর্মকর্তারা নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তাদের মতামত পেশ করে সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করার পরও সমিতির সদস্যই না এমন লোকদের সমন্নয়ে কোন ভোট গ্রহন ছাড়াই পাতানো নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা করে নামে মাত্র নির্বাচিতদের একটি তালিকা নারায়ণগঞ্জ শ্রম অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে স্বঘোষিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক (নির্বাচন কমিশনার) আলহাজ্ব সামছুল ইসলাম তানভীর।
শনিবার (১০ মার্চ) ভোট গ্রহনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও স্বঘোষিত নির্বাচন কমিশনারগণ তাদের প্রহসন মূলক নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় গত ১ মার্চ কার্যকরি কমিটির ২৯ জনকে ২ বছরের জন্য নির্বাচিত ঘোষনা করে তাদের নামের তালিকা জমা দেয়।
স্বঘোষিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সামছুল ইসলাম তানভীর স্বাক্ষরিত মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির নির্বাচিত তালিকায় রয়েছেন, সভাপতি হাজী ইয়াছিন মিয়া, কার্যকরী-সভাপতি আমির হোসেন, সহ-সভাপতি হাজী নাজিম উদ্দিন, নূরুল হোসেন মোড়ল, মাওলানা আনোয়ার জাফরী, হাজী ইমাম হোসেন বেপারী, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল-মামুন, বাবুল মিয়া, মোঃ সিরাজ উদ্দৌলা, মোঃ আমিনুল হক রাজু, কোষাধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম মনজু, সহ-কোষাধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাক আহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু ছায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক খোকন আহমেদ,প্রচার সম্পাদক আবুল হাসেম,সহ-প্রচার সম্পাদক মোঃ মানিক মিয়া, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহম্মদ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাটোয়ারী, ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক মাসুদ হোসেন ও নির্বাহী সদস্য এম এ মতিন ভুঞা, মোঃ কমর আলী মাদবর, মোঃ আনিছুর রহমান,মোঃ জসিম উদ্দিন, মোতাহার মোল্লা, মোঃ লুৎফর রহমান শাহীন ও মোঃ মজিবর রহমান নিয়াজী।
অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচিত সভাপতি হাজী ইয়াছিন মিয়া, সহ-সভাপতি হাজী ইমাম হোসেন, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাটোয়ারী, নির্বাহী সদস্য মোঃ আনিছুর রহমান, মোঃ মজিবর রহমান নিয়াজী, মোঃ জসিম উদ্দিন, ও মোঃ কমর আলী মাদবর এই ৭ জন মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির সদস্যই না। তারা নির্বাচন কমিশনারকে ম্যানেজ করে ভূয়া সদস্য সেজে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় বিজয়ী হয়েছেন। এনিয়ে শুরু হয়েছে চরম ক্ষোভ।
জানা গেছে, মিতালী মার্কেটের নেতৃত্বের বিরোধ আদালতে গেলে মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন (নং-৫৪১৭/১৬) প্রদত্ত রায়ে অত্র সমিতির কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত বছরের ২২ অক্টোবর ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
সে নির্দেশনা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ শ্রম অধিদপ্তর একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর আলহাজ্ব শামছুল ইসলাম (তানভীর) আহবায়ক, মোঃ বেলায়েত হোসেন সদস্য সচিব, মোঃ তনাই মোল্লা, হাজী এমদাদ আলী ও আলহাজ্ব হাবিবুর রহমানকে সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশনার চুড়ান্ত করে একটি সুন্দন নির্বাচন না করে নিজেরাই নির্বাচন কমিশনার বনে যায়।
তারা ১০ মার্চ ভোট গ্রহনের দিন ঠিক করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন । কিন্তু নির্বাচনী কাজ কোথায় বসে চালায় তা সদস্যরা জানেনা। তাই তারা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি জানায়। তাছাড়া মার্কেটের ৬ হাজার ২৩৬ জন সদস্য থাকার পরও মাত্র ৫৫২ জনকে ভোটার করে মনগড়া একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এতে দেখা দেয় চরম বিরোধ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে মার্কেটে অরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনে একটি পক্ষ ছাড়া আর কেহ মনোনয়ন পত্র কিনতে বা জমা দিতে পারেনি। কত তারিখে কোথায় বসে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই করা হয়েছে তাও কারো জানা নেই। প্রতীক বরাদ্দের তারিখ জানা থাকলেও নির্ধারিত তারিখে নির্বাচনার কমিশনের কোন সদস্য সমিতির অফিসে যায়নি।
১০ মার্চ ভোট গ্রহনের দিন ঠিক করা থাকলেও ভোট গ্রহন হয়েছে কিনা তা মার্কেটের সদস্যরা জানেনা। বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হলেও কোথায় বসে তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে তা বলতে পারছেনা মার্কেটের কোন ব্যবসায়ী বা সমিতির সদস্যরা। শুধু নারায়ণগঞ্জ শ্রম দপ্তরে বিজয়ীদের একটি তালিকা জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনার। তাও ওই তালিকা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ৫ জনের মধ্যে স্বাক্ষর রয়েছে মাত্র সামছুল আলম তানভীর অর্থাৎ এক জনের। কিসের নির্বাচন কিসের বিজয়ী এই নিয়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
অপর দিকে মিতালী মার্কেটের দোকানদার সমিতির অবৈধ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে গত ৮ মার্চ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেছে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে ইচ্ছুক সদস্য মোঃ জামান মিয়া।
তিনি তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন, শ্রম দপ্তর দ্বারা গঠিত আহবায়ক কমিটি নিয়ম কানন উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াজ উদ্দিন যেমন নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান সাজিয়া পাতানো নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল ঠিক অনুরূপ মিতালী মার্কেটের দোকানদার সমিতির ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি নিজেরাই নির্বাচন কমিশন সাজিয়া পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের পায়তারা করছে।
তারা জালিয়াতি ভাবে একটি ভুয়া মিথ্যা ও প্রতারনামূলক নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করে পিছনের তারিখ দিয়ে। সভাপতি প্রার্থী ইয়াছিন মিয়া একাই ৬০ টি মনোনয়ন পত্র কিনে নেয়। আর কাউকে মনোনয়ন পত্র কিনতে দেয়নি। এমন বিভিন্ন অভিযোগ তুলা হয়েছে আবেদনে। আবেদনটি সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করে প্রহসন মূলক পাতানো এই নির্বাচন বাতিল করে সন্দুর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করার জন্য শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন মিতালী মার্কেটের হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা।