কুমিল্লা প্রতিনিধি, কালের খবর : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ৪৪ কিমি. জুড়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। কুমিল্লার অন্য উপজেলার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক উর্বর এ চৌদ্দগ্রাম। নানা মেরুকরণে কুমিল্লার রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু কুমিল্লার-১১ সংসদীয় আসন চৌদ্দগ্রাম। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা গঠিত। এখানে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এখানে বর্তমানে খুবই দুর্বল। বিএনপিতে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। জামায়াত এখানে গোপনে গোপনে দল পরিচালনা করছে আর জাতীয় পার্টি নিষ্ক্রিয়।
আওয়ামী লীগ: চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে অনেক শক্তিশালী। এখানে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হকের একক নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত সব কমিটি স্থানীয় এমপির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দলের কোনো পর্যায়ে নেই দৃশ্যমান কোনো ন্যূনতম গ্রুপিং। স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচিই এখানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে আসছে। এ উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন। উপজেলা চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সদস্য, পৌরসভার মেয়র, অধিকাংশ কাউন্সিলর, ১৩ ইউপির চেয়ারম্যান এবং অধিকাংশের বেশি মেম্বার রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো কর্মসূচি তারা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নির্দেশক্রমে বা অনুমতি নিয়ে এক সঙ্গে করে আসছেন। গেল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৭৮টি ভোটের সকল ভোটই পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ থাকার এটি একটি উদাহরণ বলে জানান ১নং কাশিনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুস সোবহান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দলে কোনো দ্বন্দ্ব গ্রুপিং কিছুই নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের নেতা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এমপির নেতৃত্বে কাজ করছি। আগামী নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হলে মুজিবুল হক এমপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আবার এমপি নির্বাচিত হবেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন চৌধুরী সেলিম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সব অঙ্গসংগঠন মুজিবুল হকের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের সংগঠন এখন অনেক শক্তিশালী।
বিএনপি: কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র চৌদ্দগ্রাম উপজেলাতেই দেশের অন্যতম শক্তিশালী দল বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই দুর্বল। দেশের এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ১০টি সংসদীয় নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া আর কোনো সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ তো দূরের কথা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেনি। এই উপজেলায় বিএনপির বিশাল কর্মী সমর্থক থাকলেও শুধুমাত্র সঠিক নেতৃত্বের কারণে সংগঠন হিসেবে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। গ্রুপিং লবিংসহ নানা ধারা উপধারায় বিভক্ত রয়েছে এখানে বিএনপি।
বর্তমানে চৌদ্দগ্রামে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী নাসিমুল হক, বর্তমান আহ্বায়ক কামরুল হুদা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাহের পলাশী এবং বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান মোল্লা এই তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। তবে কাজী নাসিমুল হক মাঝে মাঝে চৌদ্দগ্রামে গিয়ে অবশ্য নিজ উদ্যোগে কিছু অনুষ্ঠান করে আসলেও সাংগঠনিক তৎপরতা বলতে যা বুঝায় তা হয় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
এখানে মুলত কামরুল হুদা বনাম তাহের পলাশী-হিরন মোল্লার মধ্যে গ্রুপিং বিদ্যমান রয়েছে। ২০০১ সাল ও ২০০৮ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট হওয়ার পর এখানে দলটির গোটা মেরুদণ্ডটিই ভেঙে যায়। জোটগত নির্বাচন হলে জামায়াত এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রার্থী হয়। ফলে যেহেতু নির্বাচন এলে জামায়াত জোটের হিসেবে আসনটি পাবে, এই বিবেচনায় এখানে বিএনপির কোনো নেতাই রাজনৈতিক বিনিয়োগ করতে রাজি নন। ২০০১ সালে এখানে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এমপি হওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেক দূরে ঠেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে বিএনপির মধ্যে। তবে বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদার নেতৃত্বে যে বিএনপি রয়েছে তাতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে চলেছে বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কও ভালো নয়।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা বলেন, আগামী নির্বাচনে এখানে আর জামায়াতকে ছাড় দেয়া হবে না। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি নির্বাচন করবে। আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নাই। আগে চৌদ্দগ্রামে বিএনপি দুর্বল ছিল এখন তা নেই, চৌদ্দগ্রামে আমাদের সব কমিটি আছে, আমাদের সব অঙ্গসংগঠন দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখন চৌদ্দগ্রামে বিএনপি এককভাবেই জয়লাভ করবে।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরন বলেন, চৌদ্দগ্রামে কামরুল হুদা যে কমিটি করেছে তা তার পকেট কমিটি। এই কমিটির সঙ্গে চৌদ্দগ্রামের ত্যাগী নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।
জামায়াত ইসলামী: চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯টি জেলার মধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত যে দুটি আসনে চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। অপরটি হলো চট্টগ্রামের সাতকানিয়া। এ ছাড়া এই বিভাগে আর কোথায়ও তাদের প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখনো তৈরি হয়নি বলে খোদ তাদের নেতাকর্মীরাই জানান। এবারো কুমিল্লার এই চৌদ্দগ্রামেই তাদের আশা-ভরসা। তাদের প্রার্থীও চূড়ান্ত। সাবেক এমপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চৌদ্দগ্রামে কোনঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত। গত ১০ বছর ধরে তাদের প্রকাশ্য কোনো স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে উপজেলার জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতনের কারণে তারা চৌদ্দগ্রামে দাঁড়াতেই পারছে না। এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শাহাব উদ্দিন জানান, বর্তমান সরকারের আমলে হামলা, মামলা ও নানাবিধ নির্যাতনে পড়ে এলাকায় থাকতে পারছি না। ফলে সাংগঠনিক কাজকর্মে সরাসরি ব্যাঘাত ঘটছে, কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক কর্যক্রম নিয়মিতভাবে চলছে। চৌদ্দগ্রামে জামায়াত ইমলামী সব সময় শক্তিশালী।
জাতীয় পার্টি: চৌদ্দগ্রামে জাপার কোনো কার্যক্রম নাই বললে চলে। ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট কাজী জাফর আহমেদ মারা গেলে জাতীয় পার্টির (জাফর) চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এক ধরনের নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দেয়। অন্য গ্রুপের নেতা আইসিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাপার কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুর রহমান জাপা এরশাদ গ্রুপ করলেও এলাকায় জাপার সাংগঠনিক কার্যক্রমও দৃশ্যমান নয়।
জাপার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সভাপতি আবুল কাশেম জানান, আমাদের তেমন কোনো দলীয় কার্যক্রম নেই তবে যোগাযোগ আছে, কেউ তো আর অন্য দলে যোগ দেয়নি।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি