রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : শীত মৌসুমের শুরুতেই খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এখন চলছে গাছ ঝোঁড়া, পরিস্কার ও নল লাগানোর কাজ। ক’দিন পরেই যখন শীত বাড়তে থাকবে, তখন শুরু হবে খেজুর গাছের বুক চিড়ে সুস্বাধু রস সংগ্রহ। তাই গাছিরা এখন খেজুর গাছ গুলো প্রস্তুত ও পরিচর্যা করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর এ কর্মযজ্ঞ চলছে চলনবিল অধ্যূষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের ঝোঁপ-ঝাড়, ভিটে, জমির আইল, রাস্তার ধার ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ গুলোতে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানিয়েছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, বসতবাড়ি, পুকুর পাড়ে ও পরিত্যাক্ত ভিটে-ভাটিতে অযন্ত অবহেলায় বেড়ে ওঠা ছোট-বড় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ মে.টন রস সংগ্রহ হয়ে থাকে। আর ওই রস থেকে তৈরি হয় প্রায় ১৮ থেকে ২০ মে.টন খেজুর গুড়।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, বসতবাড়ি, পুকুর পাড়ে ও পরিত্যাক্ত ভিটে-ভাটিতে বেড়ে ওঠা ছোট-বড় খেজুর গাছ গুলোর ডাল পালা পরিস্কার ও নল (চুঙ্গি) লাগানোর কাজ করছেন গাছিরা। আর এ কাজ স্থানীয় গাছিদের পাশাপাশি রাজশাহী জেলার বাঘা ও চারঘাট, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলা থেকে আসা প্রায় ৩০থেকে ৩৫টি গাছির দল। ইতিমধ্যে গাছির দল গুলো উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ভাটি স্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও তারা রস থেকে গুড় তৈরীর জন্য জ্বালানী হিসেবে সংগ্রহ করছেন নাড়া (খড়) ও গার্মেন্টের বর্জ্য ঝুট। এখন খেজুর গাছ গুলো রসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরীর কাজ শুরু করবেন এমনটাই জানালেন রাজশাহীর চারঘাট থেকে আসা গাছি মোঃ সবুজ হোসেন (৩৪)।
তাড়াশ উপজেলার ভাদাশ গ্রামের গাছি মোঃ মুকুল হোসেন বলেন, শীতের শুরুতেই এলাকার খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে গাছ প্রতি ৩ কেজি থেকে সাড়ে ৩ কেজি গুড়ের বিনিময়ে খেজুর গাছ গুলো লীজ নেয়া হয়েছে। এখন খেজুর গাছ গুলোর ডাল পালা ঝোড়া ও পরিস্কার করা হচ্ছে। যাতে শীত বাড়ার সাথে সাথে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পাটালী ও ঝোলা গুড় তৈরী করা যায়।
এদিকে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার তুলশীপুর (হরিপুর) গ্রামের গাছি মোঃ পলাশ হোসেন জানান, এ বছর তাড়াশ উপজেলায় রাজশাহী অঞ্চল থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টি গাছির দল এসেছে। কার্তিক মাসের প্রথমেই এসে আগে এলাকার মাঠ থেকে খড় সংগ্রহ করে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হত।
কিন্তু বর্তমানে এলাকায় জ্বালানীর সংকট থাকায় গুড় তৈরীর জন্য জ্বালানী হিসেবে গার্মেন্টের বর্জ্য ঝুট কিনে আনতে হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর আগামী ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুর গুড় তৈরী সম্ভব হবে। উপজেলার রানীরহাটের স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ী মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বছরের শুরুতেই শীতের আগাম র্বাতা পাওয়া যাচ্ছে। সুস্বাদু খেজুর গুড় এখনও বাজারে আসেনি। তবে কিছু দিনের মধ্যেই খেজুর গুড় বাজারে আসতে শুরু করবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে তৈরীকৃত গুড় সবার কাছেই বেশ সমাদৃত। খেজুর রস থেকে কৃষকের বাড়তি আয় হয়। সে জন্য কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে, ভিটেতে এবং আবাদী অনাবাদি জমির আইলে থাকা খেজুর গাছের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।