শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন । আরজেএফ’র উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন। কালের খবর মসজিদ উন্নয়নের কাজে অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর সাতক্ষীরায় ভারত থেকে অবৈধ পথে ফেরার সময় চার বাংলাদেশী আটক। কালের শেখ হাসিনার গাড়িবহরে মামলার সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার। কালের খবর পূর্বগ্রাম ব্লাড ডোনার গ্রুপের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর ব্রয়লারের চেয়ে চাহিদা বেশি বাউ মুরগির, খুশি খামারিরা নবীনগরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই সহোদর চাচাতো বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু। কালের খবর প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ। অটো মালিক, শ্রমিক সমিতির চেক বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান-দর্শনার্থীদের ভীড়। কালের খবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান-দর্শনার্থীদের ভীড়। কালের খবর

মোহাঃ মাইনুল ইসলাম লাল্টু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :  তেভাগা আন্দোলনের পটভূমি রানী ইলা মিত্রের স্মৃতি বিজড়িত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার আল্পনা বাড়ির পর এবার ‘স্বপ্নের বাড়ি’র সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নে কাজলকেশর গ্রামে গৃহবধু সাহিদা খাতুন মাটির এ বাড়িটির নাম রেখেছেন “স্বপ্নের বাড়ি”। দুর থেকে দেখলে বাড়িটির বিশেষত্ব বোঝার কোন উপায় নেই। তবে যতই কাছাকাছি হবেন, ততই বাড়িটির ভেতর দেখার মোহ তৈরি হবে। বাড়িটি দেখতে আসা কয়েকজন উৎসুক ব্যক্তিকে দেখা গেল খুঁটিয়ে দেয়ালে আঁকা চিত্রগুলোকে অবলোকন করতে। অপরদিকে, বাড়ির আঙিনায় থাকা বাহারি ফুলের গাছ দেয়ালের চিত্রগুলোকে অন্যরকম মাত্রা যুগিয়েছে।
এই ‘স্বপের বাড়ি‘র কারিগর হলেন, সাহিদা খাতুন। যিনি নিজের মনের মাধুরী দিয়ে পুরো শিল্প সত্ত¡া ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছেন তার স্বপ্নের বাড়িকে। প্রায় ১৫ কাঠা জমির মধ্যে ১০ কাঠাজুড়ে এ মাটির বাড়ি তৈরী করেছেন। রড সিমেন্ট কিংবা ইট দিয়ে তৈরী নয়, তবে কাদা মাটি দিয়ে তৈরী মাটির এ বাড়ি। আর মাটির বাড়িকেও যে শিল্পমল্ডিত করে তোলা যায়, তার অনুধাবন করা যায় ‘স্বপ্নের বাড়িটি দেখে। সাহিদা খাতুন মনের মাধুরি মিশিয়ে পরিপাটি করেই সাজিয়ে তুলেছেন নিজের বাড়িটিকে। তার স্বামী মমিনুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক ও মৎস্য চাষী। অবসর সময়ে ভূটভূটি চালান তিনি। স্ত্রী সাহিদা খাতুন তার অবসর সময়ে সংসারের কাজের পাশাপাশি এই শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অর্থ নয়, শৈল্পিক মন থাকলেই স্বপ্নের বাড়ি তৈরী করা সম্ভব।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর বিল্লী সড়কের “কাজল কেসর গ্রামে স্বপ্নের বাড়ি” নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিঃ মিঃ পথ। প্রত্যন্ত এলাকায় কাজের ফাকে অবসর সময়ে ধীরে ধীরে বাড়িটিকে সাজিয়েছেন সাহিদা খাতুন, সময় লেগেছে প্রায় ১০ বছর। ২০১৩ সালে তিনি মাটির দোতালা বাড়ি তৈরী করেন, তখন থেকেই তার নেশা বাড়িটি স্বপ্নে বাড়ি হিসেবে তৈরী করা। বাড়ির বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটি টিনের চালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর বাড়িটি কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে অন্যরকম দৃশ্য। বাড়ির আঙিনায় বাহারী রংগের ন্যাচেরাল ফুলের গাছ ও লতা পাতা। বারান্দায় টিনের ছাইনীর নীচ থেকে নেমে আসা লতা গুলো এতাটাই দৃষ্টিনন্দন করেছে যা দেখলে সকলের মন কাড়ে।
মনের মাধুরী আর শৈল্পিক চিন্তা চেতনা দিয়ে সাজানো বাড়ির প্রবেশমুখে দেয়ালে দেয়ালে সাহিদা খাতুনের হাতের রংতুলির ছোয়া দিয়ে তৈরি করে রেখেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ছবি। আরো রয়েছে গ্রামবাংলার আবহমান চিত্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, বাংলাদেশের মানচিত্র, শহীদ মিনার, শীত মৌসুমের খেজুর গাছে টাঙানো হাঁড়ি, দেশীয় ফলমুল। এছাড়াও জাতীয় ফুল, ফল ও বিভিন্ন রকমের গ্রামীণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন রঙতুলির আঁচড়ে এ স্বপ্নের বাড়িতে। বাদ যায়নি রাজশাহীর পানের বরজের দৃশ্যটিও।
ইতোমধ্যেই সাহিদা খাতুনের স্বপ্নের বাড়ির কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখতে আসছেন অনেকেই। স্বপ্নের বাড়িটি দেখতে আসা নাচোলের লেখক আলাউদ্দিন আহম্মেদ বটু বলেন, এই রকম বাড়ি আমার জীবনে দেখিনি। তিনি মন্তব্য করে বলেন এই “স্বপ্নের বাড়িটি” টিকইলের আলপনা বাড়িকেও হার মানিয়েছে। আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি; কিন্তু এইরকম বাড়ি দেখিনি। এলাকার ইউপি সদস্য এবং কাজল কেসর গ্রামের তোসলিম উদ্দিন বলেন, সাহিদা খাতুন স্বচ্ছল পরিবারের বউ নয় তারপরেও যে স্বপ্নের বাড়ি তৈরী করেছেন এটা আমার এলাকার গর্ভ। তিনি আরো বলেন, নাচোল উপজেলার মধ্যে শুধু নেজামপুর ইউনিয়নে যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে তা অন্যান্য ইউনিয়নে নেই। এই ইউনিয়নে রয়েছে আল্পনা বাড়ি/ আল্পনা গ্রাম যা ২০১৯. সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুরুল হক জেলার ১ হাজার ১২৩ টি গ্রামের মধ্যে ১নং গ্রাম (আলপনা গ্রাম) ঘোষনা করেন। পাশের গ্রামে রয়েছে ৫০০ বছরের তেতুল গাছ এবং স্বপ্ন পল্লী পার্ক। নাচোল-আমনুরা সড়কে ইলামিত্র গেট ও নেজামপুর রেল স্টেশনের পাশে ইলামিত্র পাঠাগার। কেন্দুয়া পঞ্চনন্দ স্কুলের পাশে রয়েছে ইলামিত্র স্মৃতিসৌধ এবং রাওতাড়ায় রয়েছে ইলামিত্র মঠ। তিনি আরো বলেন, গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের চাইতে সাহিদা খাতুনের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম। নিজের মনের মধ্যে কল্পনা না থাকলে এইরকমভাবে ডিজাইন করা সম্ভব নয়। আমি চাই আমার এলাকায় সাহিদাকে দেখে আশপাশের অন্যরাও যদি তাদের বাড়িটিকে সাজিয়ে রাখে, তাহলে এই এলাকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অনেকেই দেখতে আসবে।
স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কারিগর সাহিদা খাতুন বলেন, ২০০৫ সাথে এসএসসি পাশ করার পর পরই নিজ গ্রামে মোমিনুর রহমানের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার ২টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর তার চিন্তা সামর্থ্যের মধ্যেই, হোক না তা মাটির বাড়ি, সুন্দর করেই বাড়ি বানাব। আমি নিজ হাতে বিভিন্ন চিত্রকর্ম এঁকে বাড়িটি সাজিয়েছি। বাড়ির আঙিনাটাও বিভিন্ন রকমের ফুলগাছ দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি। পরিবারের সকলের সহযোগিতায় বাড়িটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারছি। তিনি বলেন, বাড়িটি দেখে যখন কেউ ভালো বলে, তখন নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। সাহিদা বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্বপ্নের বাড়িটি আরো দৃষ্টিনন্দন করা সম্ভব। তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাড়িটির পাশে পুকুর ও পুকুর পাড়ে ছোট্ট পরিসরে একটি পিকনিক স্পট করা তার শেষ ইচ্ছে রয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজেই আঁকিয়ে বাড়িটি এ পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ কাজে তার স্বামী ও সন্তানেরা তাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে আসছেন, কোনো দিন বাধা দেননি। সন্তানরাও তাকে সহযোগিতা করে সব সময়। দু’টি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। সাহিদা খাতুন বলেন, বাড়িটি দেখতে অনেকেই দুর দুরন্ত থেকে আসেন। অনেকে তাদেরকে মতামত পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়ে থাকেন। সেই মতামত পরামর্শগুলো নিয়েই আগামী দিনে আরো সুন্দর করে বাড়ির চিত্রকর্ম তৈরি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ‘স্বপ্নের বাড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা সাহিদা খাতুন।#

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটিস্টিক শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় এঞ্জেলস গার্ডেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃবছর ছয়েক আগের কথা। ট্রেনে করে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসছিলেন আমিনুল ইসলাম। বগির এক কোনায় বসে কাঁদছিল এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী। তাকে দেখে নিজের ছেলের মুখ ভেসে উঠল আমিনুলের সামনে। তাঁর ২২ বছরের ছেলেটাও অটিজমে ভুগছেন। কাছে গিয়ে জানতে পারলেন, মেয়েটির মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। বাবা বিয়ে করেছেন আগেই। মা সম্প্রতি অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ট্রেনে ফেলে চলে গেছেন।কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে নামেন আমিনুল। এরপর যান সমাজসেবা অধিদপ্তরে। স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিনুলকেই বললেন শিশুটির অভিভাবকদের খুঁজে বের করতে। পুলিশের সহায়তায় সেই কিশোরীকে তাঁর নানির কাছে পৌঁছে দেন আমিনুল। কিন্তু নানি প্রথমে তাকে গ্রহণ করতে চাননি। অনেক বোঝানোর পর গ্রহণ করলেও অখুশি ছিলেন। ওই ঘটনার পরই প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা পেয়ে বসে আমিনুলকে।আরও কয়েকজন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বছর দুয়েক আগে অবশেষে আশ্রয়কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাট এলাকার আমিনুল ইসলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সার্কিট হাউস মোড়ে ‘এঞ্জেলস গার্ডেন’ নামের আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এখন বসবাস করছে ১০ অটিস্টিক শিশু-কিশোর। নিরাপদ আশ্রয়ে সেখানে হেসেখেলে দিন কাটছে তাদের।আশ্রয়কেন্দ্রটির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদ বললেন, এখানে থাকা শিশুরা আগে ঘরের কোণে একা একা নিরানন্দে সময় পার করত। এখানে সবাই একসঙ্গে থেকে হইহুল্লোড় করে। নাচ-গান করে। ছবি আঁকে। দল বেঁধে বাইরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। আনোয়ার জাহিদ বলেন, পরিবারে যাদের আশ্রয়ের সমস্যা রয়েছে এবং খাওয়াদাওয়া ও চিকিৎসার সমস্যা আছে, মূলত তাদের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছে এঞ্জেলস গার্ডেন। পরিবারে আশ্রয় আছে, সামর্থ্যও আছে, কিন্তু দেখাশেনার লোক নেই—এমন শিশু-কিশোরদেরও আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এখানে।এঞ্জেলস গার্ডেনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটিস্টিক শিশুদের আশ্রয় দিয়ে কাজ করা একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এঞ্জেলস গার্ডেন। এর প্রতিষ্ঠাতাদের চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদ ও অন্যরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সঙ্গে জড়িত বলে জানেন। প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে। শিগগিরই পেয়ে যাবে।
১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, নয়জন বিভিন্ন বয়সী অটিস্টিক শিশু-কিশোর বসে আছে। হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের (ডাইনিং রুম) মেঝেময় ঘুরে বেড়াচ্ছে পাঁচ বছরের টুকটুকি। দুর্বোধ্য শব্দ করে হাসিমুখে আনন্দউচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। সে দাঁড়াতে পারে না। মা শ্যামলী এসে তাকে ধরে সামলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সে কিছুতেই থেমে থাকতে চায় না। অবশেষে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন মা।
এখানকার তত্ত¡াবধায়ক ফাতেমা বেগম (৬৫) বলেন, ‘এই টুকটুকি বাড়িময় এভাবেই ঘুরে বেরিয়ে বাড়িটাকে মাথায় তুলে রাখে। স্পষ্টই বোঝা যায় তার উল্লাস।’এরপর সাউন্ড বক্সে গান ছাড়লেন ফাতেমা বেগম। সঙ্গে সঙ্গে কিশোর রিফাত, সবুজ ও ইমন তালে তালে নাচা শুরু করে। থামতেই চায় না। অন্যদিকে বৃত্ত, রাফিয়া ও খাদিজা বায়না ধরেছে, তারা গান গেয়ে শোনাবে।ফাতেমা বলেন, ‘সাউন্ড বক্সে সারা দিন গান বাজিয়ে নাচতেই যেন কয়েকজন শিশুর যত আনন্দ। আমরাও চেষ্টা করি তাদের আনন্দে রাখার।’ টুকটুকির মা শ্যামলী বলেন, টুকটুকির প্রতি অবহেলা সহ্য করতে না পেরে এখানে এসে তিন মাস আগে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি না হলেও স্বামী আর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন না। ১০-১২ বছরের আরও একটি ছেলে আছে। তাকে মায়ের কাছে রেখে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মা-মেয়ের ভরণপোষণ হচ্ছে। অন্য শিশুদেরও দেখাশোনা করেন। এ জন্য তাকে বেতন দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।বাড়িতে আশ্রয় আছে কিন্তু দেখাশোনার কেউ নেই, এঞ্জেলস গার্ডেনে আশ্রয় নেওয়া এমন দুজন শিশুও আছে। তাদের একজন নিশা। প্রায় ১৫ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নেন তাকে। কিছুদিন পর জানতে পারেন মেয়েটি বিশেষ চাহিদার। তবু মায়ায় জড়িয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। মেয়েটি কথা বলতে পারে না। নিজের সব কাজে দরকার হয় মায়ের সহায়তার।সম্প্রতি সেই মা মারা গেলে মেয়েকে নিয়ে অকূলপাথারে পড়েন বাবা অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক নাইমুল হক। এঞ্জেলস গার্ডেনের কথা শুনে নিয়ে আসেন সেখানে। নাইমুল হকের ভাষায়, যে মেয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে চাইত না, সে এখন গার্ডেনের সবার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই বেড়াতে যায়। হাসিখুশি দেখা যায় তাকে। তিনি বলেন, ‘আমার এই মেয়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে এঞ্জেলস গার্ডেন। আর আমার কী যে উপকার হয়েছে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এর উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। আমিও তাঁদের পাশে থাকতে চাই।’যেভাবে গড়ে উঠল এঞ্জেলস গার্ডেন ট্রেনের সেই প্রতিবন্ধী কিশোরীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমিনুল ইসলাম। প্রস্তাব শুনে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় থাকা একখন্ড জমি দিতে রাজি হন চেয়ারম্যান। পরে অজ্ঞাত কারণে তা দেওয়া হয়নি।এরপর তিনি যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদের কাছে। তাঁরও একটি অটিস্টিক মেয়ে আছে। তিনিও চান এসব অসহায় ও নিরাশ্রয় শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে। এ দুজনের সঙ্গে যোগ দেন জহিরুল ইসলাম। আরও কিছু শুভানুধ্যায়ীর সহায়তায় আনোয়ার জাহিদের নিজস্ব ভবনের চার কক্ষবিশিষ্ট নিচতলায় এই তিনজন মিলে গড়ে তোলেন এঞ্জেলস গার্ডেন। আমিনুলের ট্রেনে দেখা সেই কিশোরীকে খুঁজে বের করে তাকে আশ্রয় দিয়ে শুরু হয় এঞ্জেলস গার্ডেনের যাত্রা। বর্তমানে এখানে থাকা ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে।আনোয়ার জাহিদ বলেন, নিজস্ব প্রশস্ত জমির ওপর নির্মাণ করা ভবনে একদিন এঞ্জেলস গার্ডেনের স্থায়ী ঠিকানা হবে, এমন লক্ষ্য নিয়েই তাঁরা কাজ করছেন। জমির ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকলেও ভবন নির্মাণে হৃদয়বান বিত্তশালী মানুষের সহযোগিতা দরকার বলে জানান তিনি।
আমিনুল ইসলাম সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগারিক। বহু বছর থেকে গরিব বয়স্ক লোকদের চোখের ছানি অস্ত্রোপচারে সহায়তা ছাড়াও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন। তাঁকে নিয়ে প্রথম আলোতে ‘পরোপকারী পরমবন্ধু’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আনোয়ার জাহিদ শহরের সেবা ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত। মহানন্দা প্রবীণ নিবাস নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, অন্ধ হাফেজদের আবাসস্থল প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও সম্পৃক্ত তিনি। তাঁদের সঙ্গে গোড়া থেকেই আছেন জহিরুল ইসলাম। তিনি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। তিনি বৃদ্ধাশ্রম, সদর হাসপাতালে গরিব রোগীদের সঙ্গে থাকাসহ নানা মানবিক কাজে জড়িত।১১ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি থাকলেও এ তিনজনই হচ্ছেন এঞ্জেলস গার্ডেনের মূল চালিকা শক্তি। কমিটির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম।আনোয়ার জাহিদ জানান, শিশুদের দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে তিনজনকে। খাওয়া খরচসহ পরিচালনা ব্যয় হয় মাসে ৫০ হাজার টাকা। তাঁদের এবং বন্ধু-স্বজনদের আর্থিক সহায়তায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।এঞ্জেলস গার্ডেনের সাফল্য কামনা করে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, বিশেষ চাহিদার এমন শিশুদের নিয়ে সমাজে কাজ করার লোকের অভাব। কাজটাও খুব কঠিন। আনোয়ার জাহিদ ও তাঁর সঙ্গীরা কঠিন কাজটিই বেছে নিয়েছেন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com