মোঃ ইসমাইল হুসাইন কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি কুষ্টিয়া ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩। কালের খবর : কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে একটি কক্ষে আটকে রেখে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সাথে ধারণ করা ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মোহসীন রিট আবেদন দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবির) ভাইস চ্যাঞ্চেলর (ভিসি), বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবির) প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী নিজে।
রিট দায়েরের পর হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিথ বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। আদালত শুনানির জন্য আগামীকাল আসতে বলেছেন।
এর আগে সকালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন। তখন আদালত আইনজীবীদের লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় রিটটি করা হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে এবং ভিডিও ধারণ করেছে অভিযুক্তরা। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাত ৮টায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম দফায় র্যাগিং করে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে হলের প্রভোস্টের সহযোগিতায় তখন সেটা সম্ভব হয়নি।
পরদিন রোববার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭-৮ জন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এসময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি তাকে ময়লা গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই ছাত্রীকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে পুনরায় মারতে থাকেন তাকে। এরপর জোর করে তার ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমাকে গত রোববার গণরুমে ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে। আমার শরীরে এখনো ব্যাথা করছে। জীবন বাঁচাতে পরদিন সোমবার ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে আসি। আমি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
নির্যাতনকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী বলেন, ‘সে আমার নাম করে আমাকেই ভয় দেখাচ্ছিল। এজন্য তাকে বোঝানো হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আমরা এমন ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয় এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের কাছে তার শাস্তির দাবি জানাবো এবং আমরা সাংগঠনিকভাবেও ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি একটি প্রোগ্রামে আছি। অফিসে গিয়ে লিখিত অভিযোগটি দেখব। এরপর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি