রাজধানীর ডেমরায় বামৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ জরাজীর্ণ ভবনে গত কয়েক বছর ধরে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ পাঠদান। এখানে বর্তমানে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে মাত্র ৫ জন শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
ভবনটি ২৮ বছর আগে নির্মিত। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এ বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনটির পরিবর্তে এখানে সরকারিভাবে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক। একইসঙ্গে শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রয়োজনীয় শেণিকক্ষ বৃদ্ধিসহ শিক্ষক নিয়োগের দাবিও জানান তারা।
বিদ্যালয়টিতে প্রতি বছর জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাশের রেকর্ড থাকলেও সংশ্লিষ্ট সবাই রয়েছেন চরম অবহেলার মধ্যে।
সূত্রে জানা গেছে, ডেমরার বামৈল এলাকায় বিগত ১৯৮২ সালে প্রথমে বেসরকারিভাবে বামৈল রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে ৪ কাঠার কিছু বেশি জায়গায় টিনশেডের ৩টি কক্ষ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৩ কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। দিনে দিনে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে ২০০৩ সালে ভবনটিকে দোতলায় উন্নীত করা হয়। বিদ্যালয়টিতে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরবর্তীতে আরও দুটি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয় টিনের চাল দিয়ে, যা দিয়ে কোনো রকমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্মিত রাস্তা থেকে স্কুল ভবনের নিচতলাটি নিচু হওয়ায় বর্তমানে সেটি একেবারে অকেজো। বর্তমানে ৮ কক্ষবিশিষ্ট দোতলা ভবন হলেও বিদ্যালয়ের পাঠদান করার মতো রয়েছে ৪ শেণিকক্ষ। তাই শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকটের কারণে দুই শিফটে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিযোগ, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হলেও এর অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এখানে খেলাধুলা ও চিত্ত-বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই বলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত শ্রেণিকক্ষ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে তারা চরম আতংকের মধ্যে সময় পার করে।
এদিকে শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, বিদ্যালয়টিতে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন হলেও তার কোনো ব্যবস্থাই নেই। একইসঙ্গে ১৪-১৫টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হলেও পাঠদান চলছে ৫টি কক্ষে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রবীণ শিক্ষিকা মোছা. ফজিলাতুন্নেসা বলেন, আমি ২৬ বছর ধরে এখানে শিক্ষকতা করে আসছি ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিন ভয়ের মধ্যে থাকি কখন জানি কী বিপদ হয় জরাজীর্ণ ভবনে। তাছাড়া এখানে প্রচণ্ড গরমে ক্লাশ নিতেও কষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরাও গরমের মধ্যে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসতে হয় বলে শিক্ষা গ্রহণে অমনোযোগী হয়ে পড়ে তারা। তাই দ্রুত এখানে নতুন আধুনিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাজিব ও সুমাইরা জানায়, স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। তারা একসঙ্গে দুই শ্রেণিতে পড়ান। এতে আমরা ঠিকমতো পড়া বুঝি না।এদিকে পুরাতন ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ক্লাশ করতে হয়।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, বামৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ শ্রেণিকক্ষের অভাব রয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই নিচতলায় পানি জমে থাকার কারণে ক্লাশ নেওয়া যায় না। শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতায় একের অধিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংযোজন করে ক্লাশ নিতে হয় বলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটছে। যেখানে বর্তমান সরকার সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর সেখানে শিক্ষক সংকট ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে এখানে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না। তাই এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে প্রতি নিয়ত।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন বলেন, এখানে নতুন একটি ৬তলা ভবনের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা মাটি পরীক্ষা নিয়ে গেছে ২ বছর আগে। তারপরে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে আয়া ও বিদ্যালয়ের যাবতীয় আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করছি।
এ বিষয়ে ডেমরা প্রাথমিক শিক্ষা থানা কর্মকর্তা কেএম সাইদা ইরানী বলেন, বামৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের প্রস্তাবনার তদারকি করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে নতুন ভবনের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিতে একটি দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। আসলে সরকারি কাজে একটু দেরিতে হলে ভালো কিছু পাওয়া যায়। আর প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু নতুন করে জাতীয়করণ করা হয়েছে তাই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তদারকিও করা হচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ আসলে সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। তাছাড়া আমাদের বদলি নিয়ে একটু সমস্যা রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য স্কুল থেকে পদ কেটে এনে সমন্বয় করা চেষ্টা করব। শিক্ষকের অনেক পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষকের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এলজিআরডির নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর উদ্দিন বলেন, আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পের আওতায় এনে ইতোমধ্যে ডিজাইন করছি। আর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেবেন। শিগগিরই এ বিদ্যালয়টি নতুনভাবে তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি