অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের কাছে স্বর্ণ আমদানির নেই কোনো রসিদ। বাজারের স্বর্ণের দোকানগুলোয় চুরি-ডাকাতির স্বর্ণই বেশি বিক্রি হয়। এসব অবৈধ স্বর্ণ দিয়েই তৈরি হচ্ছে নানা শৌখিন অলংকার। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আসা স্বর্ণ বিদেশ থেকে গোপনে এনে বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে স্বর্ণ ক্রয়ের নেই কোনো রসিদ। আবার বাজারের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী স্বর্ণ বন্ধক রেখে লাখে সাড়ে চার হাজার টাকা করে মাসে সুদ নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা স্বর্ণ বিক্রি হয় বাজারের দোকানগুলোয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন বছরে নামমাত্র ৫/১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দেন। বেশির ভাগ দোকানদার কোনো ভ্যাটের তোয়াক্কা করেন না। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, শুধু ছলিমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সই তাদের ব্যবসা করার একমাত্র সনদ। দীর্ঘদিন ধরে ছলিমগঞ্জ বাজারে এত বড় অবৈধ স্বর্ণের কারবার হলেও প্রশাসন ও রাজস্ব বিভাগের লোকজন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। অবৈধ স্বর্ণ বেচাকেনায় আলোচনায় রয়েছে বণিক শিল্পালয়ের কর্ণধার স্বপন বণিক ও কাজল বণিক, স্বপন শিল্পালয়ের শম্ভু বণিক, অরূপ শিল্পালয়ের অজয় বণিক, আল আমিন বারভী শিল্পালয়ের পিন্টু দেবনাথ, আদি কালার গোল্ড ছলিমগঞ্জের মিঠু বণিক, জয় মা স্বর্ণ শিল্পালয়ের মানিক বণিক, সংগীতা শিল্পালয়ের জীবন ভৌমিক, নকুল শিল্পালয়ের নকুল বণিক, জান্তা স্বর্ণ শিল্পালয়ের কানাই সূত্রধর, মা শিল্পালয়ের বিজয় সরকার, রাজলক্ষ্মী শিল্পালয়ের তাপস দাস ও দীলিপ দাস, রাহুল শিল্পালয়ের নিতাই দেবনাথ, শ্যাম সুন্দর শিল্পালয়ের বিশু বণিক, স্বর্ণ শিল্পালয়ের চন্দন দেবনাথ, অঞ্জলি শিল্পালয়ের সজল বণিক, লতা শিল্পালয়ের বৃন্দাবন বর্মণ, নাথ শিল্পালয়ের মিঠু দেবনাথ, জয় মা স্বর্ণ শিল্পালয়ের সুজিত দেবনাথ, মা মণি শিল্পালয়ের তপন দেবনাথ, মানিক শিল্পালয়ের রতন ঘোষ এবং অন্তর শিল্পালয়ের শ্রীবাস পাল। এসব প্রতিষ্ঠানে ভেজাল ও খাদ স্বর্ণ মিশিয়ে স্বর্ণালংকার বানানোর অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। বাজারে ৮০টি স্বর্ণ কেনাবেচা ও বানানোর দোকান রয়েছে।
সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে ক্রেতা-বিক্রেতা ও চোর-ডাকাত চক্রদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে এই বাজার। বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি হওয়া অবৈধ স্বর্ণ এখানে নিরাপদে বিক্রি করা খুবই সহজ। কিছু কিছু অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গ্রাহকদের সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণা করে বিদেশ থেকে ক্যারেট আমদানির নাম করে ভেজাল স্বর্ণ বিক্রি করছে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী কমিশনার ও বিভাগীয় কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘নবীনগরের ছলিমগঞ্জ বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমার দপ্তরের কেউ মাসোহারা নেয় না। এ অভিযোগটি সঠিক নয়। তুলনামূলক তেমন ভ্যাট আদায় হয় না, এটা সঠিক। যেহেতু বিষয়টি শুনলাম, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
ছলিমগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এসএম বাদল মাহমুদ বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এবং বিদেশ থেকে লোক মারফত স্বর্ণগুলো কিনে থাকেন। তাই তারা স্বর্ণ কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। অনেকেই এখানে স্বর্ণ বিক্রি করে। তবে কে ডাকাত, কে চোর-বোঝা বড় কঠিন। যে পরিমাণ স্বর্ণ বেচাকেনা হয়, সেই পরিমাণ সরকারি ভ্যাট দেওয়া হয় না, এটা সত্য।’
বাজারের অন্যতম স্বর্ণ ব্যবসায়ী অজয় দেবনাথ ভ্যাট দেওয়া ও বৈধভাবে স্বর্ণ কেনার কথা বললেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কোনো ভেজাল বা অবৈধ স্বর্ণ বেচাকেনা করি না। চুরি-ডাকাতির স্বর্ণ বেচাকেনা করি না, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিয়মনীতি মেনেই ব্যবসা করি।’ ছলিমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ছলিমগঞ্জ বাজার স্বর্ণের ব্যবসায়ীদের ইউনিয়ন অফিসের ট্রেড লাইসেন্সের চার্জ দিতেই মন খারাপ হয়ে যায়। তারা ভ্যাট দেওয়া তো প্রশ্নই আসে না।’ নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ বলেন, ছলিমগঞ্জ বাজারে চুরি-ডাকাতির বা বিদেশ থেকে অবৈধভাবে আনা স্বর্ণ বেচাকেনা হয় কি না, তা জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে অনুসন্ধান করে দেখব।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি