বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর ইপিজেড থানা কমিউনিটি পুলিশিং এর উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর শাহজাদপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উড়ে গেল সি লাইন বাসের ছাদ, ১জন নিহত। কালের খবর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার আত্মহত্যা। কালের খবর
এই ‘মানবিক’ জনগণ কেন বারবার হেরে যায়?

এই ‘মানবিক’ জনগণ কেন বারবার হেরে যায়?

সীতাকুন্ড থেকে মো. আশরাফ, কালের খবর ঃ

এ দেশের যে কোনো বিপদ-আপদে দুর্নিবারের মতো এগিয়ে এসেছে তরুণ-যুবারা, শ্রমিক-খেটে খাওয়া মানুষ, আপামর জনগণ। সেটি রাজনৈতিক সংকট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক। সর্বশেষ গোটা করোনাকালে মানুষের সহায়তায় টিকেছিল মানুষ। অল্প বয়সে মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসের দেখার সুযোগ হয়েছিল আটানব্বইয়ের দেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যায়। চট্টগ্রাম শহরের পাড়ায় পাড়ায় গলিতে গলিতে ঘুরে ঘুরে তরুণ দলের ত্রাণ সংগ্রহের তুমুলযজ্ঞ এখনও আলোড়িত করে। তাদেরকে দেখে মনে হতো নজরুলের কবিতার সেই ‘অগ্রপথিক’-কে: ‘প্রাণ-চঞ্চল প্রাচী-র তরুণ,​​ কর্মবীর,/ হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির!’ পরবর্তীতে আমরাও উত্তরবঙ্গের বন্যায়, ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড বাঁশখালীর উপকূলে, রাঙামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় কিংবা গণহত্যার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে কখনও ত্রাণ নিয়ে কখনও ওষুধপত্র নিয়ে কখনও শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম, নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনের পর দিন ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখেছি আমাদের বন্ধুদের। চট্টগ্রাম শহরে পাহাড়ধস থেকে শুরু করে বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ছুটে যেতে এক মুহূর্তও দ্বিধাগ্রস্ত মনে হতো না তাদের। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও; শুধু তরুণ-যুবারা নয়, আপামর জনগণ। অনেক দিন পর চট্টগ্রামে মানুষের আরেক মানবিক স্ফুলিঙ্গ দেখলাম আমরা।

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে যেভাবে মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানুষের ছুটে গেল, তা এক কথায় অভাবনীয়। আগুনের ফুলকির মতো জেগে ওঠা যাকে বলে। সিভিল সার্জন অসহায় হয়ে আবেদন জানালেন, সাথে সাথেই শহরের অসংখ্য চিকিৎসক ও নার্স ছুটে গেলেন হাসপাতালে। ফায়ার সার্ভিস আবেদন জানাল, শত শত অ্যাম্বুলেন্সে ছুটে গেল সীতাকুণ্ডের ডিপোতে। হতাহতদের চাপে হাসপাতাল জায়গা হচ্ছিল না, তাদের জায়গা ছেড়ে দিল অন্য রোগীরা, জড়াজড়ি করে বারান্দার মেঝেতে আশ্রয় নিল তারা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও বিনা মূল্যে চিকিৎসা খরচের ঘোষণা দিয়ে দিয়ে ডেকে নিল হতাহতদের।

গোটা সময়টাতে অভূতপূর্ব এক জনজোয়ার আমরা দেখতে পেলাম চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে। অ্যাম্বুলেন্সের পর অ্যাম্বুলেন্সে আসছে হতাহতদের নিয়ে। কারও হাত উড়ে গেছে কারও পা উড়ে গেছে। সবারই ক্ষতবিক্ষত শরীর। রক্ত লাগবে, রক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল রক্ত দিতে ছুটে যাওয়ার আহ্বান। নিঃস্বার্থভাবে, চাহিবা মাত্র, অকাতরে বিলিয়ে দিতে এই একটি জিনিসই সম্ভবত আছে মানুষের। পঙ্গপালের মতো মানুষের মিছিল হাজির হলো ইমার্জেন্সির সামনে। ঘুম বাদ দিয়ে বয়স্ক দম্পতি ছুটে আসল। আসল রিকশাওয়ালা, হকার, দোকানদার, ছাত্ররা। গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসল বাস ভর্তি করে, ট্রাক ভর্তি করে। চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছুটে আসল। হাটহাজারি মাদ্রাসার ছাত্ররা আসল দৌড়ে। নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট দেখা দিলে নিমেষেই ঘুচে গেল। বিনা মূল্যে রাইড অ্যাপসের চালকেরা, রিকশা-সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা কত রক্তদাতাকে হাসপাতাল অবধি পৌঁছে দিল। জন্মদিনের কেক ফেলে ছুটে আসা তরুণ দাঁড়িয়ে গেল প্ল্যাকার্ড নিয়ে—কোনো প্রকার ওষুধ প্রয়োজন হলে বলুন। কিছু ফার্মেসি ওষুধ ফ্রি করে দেয়—যা লাগে নিয়ে যান। আগুনে পোড়া হতাহতদের জন্য পানি লাগবে। শত শত মানুষ পানির বোতল নিয়ে, টিস্যু পেপার নিয়ে ছুটল।

হতাহত ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে অন্য এক ভোর শুরু হয়। মানুষের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তবুও মানুষের আকুতির শেষ নেই। একের পর এক দল হাজারি লেনের ওষুধ পট্টিতে ছুটে যায়। কোনো দল গামছা-লুঙ্গি নিয়ে আসে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের মেয়েরা হাজির খাবার নিয়ে। ফেসবুকে ঘোষণা, পোড়া মানুষের ক্ষতস্থান শুকাতে টেবিল ফ্যান লাগবে, অল্প সময়ের মধ্যে তাও জোগাড় হয়ে গেল। ঘটনার দুই দিন ধরে আমরা এমন দৃশ্য দেখি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে, ফোনে ফোনে বিপুল ফান্ড জোগাড় করে একের পর এক দল ছুটে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে। পৃথিবীর সব রাস্তা যেন এসে মিশে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের গেটের সামনে এসে।

সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ছুটে যাওয়া আরেক দল মানুষের কথা না বললেই নয়। বিস্ফোরণের প্রথম ধাক্কায় উড়ে গেছে আমার ফায়ার ফাইটাররা। ডিপোর গেট তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় নিরাপত্তাকর্মীরা। ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতবিহ্বল পরিস্থিতির মধ্যেও স্থানীয় মানুষ গেট ভেঙে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে এসেছে। হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়েছে। এক চা দোকানি একাই ত্রিশজন হতাহতকে বের করে নিয়ে এসেছেন। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন: ‘…এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও,/ মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।’ বিস্ফোরণের ধাক্কায় মুহূর্তে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের পাশে সেভাবেই তো দাঁড়াল মানুষ।

এ শুধু চট্টগ্রাম নয়, একই চিত্র আমরা দেখেছিলাম ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে। পোশাক কারখানার এ ঘটনার ভয়াবহতা ও বিপুল প্রাণহানি গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পোশাকশ্রমিকদের বের করে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হাতুড়ি, শাবল, কোদাল হাতে। করাত দিয়ে কেটে কেটে চাপা পড়া মানুষকে উদ্ধার করেছিল, বের করে এনেছিল কত লাশ। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে জ্বলতে থাকা লঞ্চ থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে নৌকা নিয়ে ছুটে গিয়েছিল কত মানুষ। মানুষের এই ‘অতি-মানবীয়’ হয়ে ওঠার দৃশ্য আমরা তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডে দেখতে পাই, পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ড ও রাসায়নিক গোডাউনে বিস্ফোরণেও।

নিভু নিভু রাজনৈতিক সহনশীলতা, পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি, বাকস্বাধীনতাহীনতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সামাজিক অস্থিরতা, নারীর প্রতি বিদ্বেষ, শ্রমিকের অধিকারহীনতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ওঠে যাওয়া, সড়কে নৈরাজ্যের মধ্যে একেকটা দুর্যোগ যেন আমাদের নতুন করে জাগিয়ে তুলে। যেন, ‘নতুন করিয়া ক্লান্ত ধরার মৃত শিরায়/ স্পন্দন জাগে আমাদের তরে,​​ নব আশায়।’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহনের চালক-হেলপারদের বিরোধ, চিকিৎসকের সঙ্গে সাংবাদিকদের

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com