রাজধানীর বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সময়মতো গ্যাস না থাকায় বাসায় মেহমান এলে কঠিন লজ্জায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে আনতে হয়। অনেকে কেরোসিনের স্টোভ ব্যবহার করেও রান্নার কাজ সারেন। অথচ গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে সারা বছর। গ্যাসের এমন সংকটের স্থায়ী সমাধান চান তারা।
ডেমরার উত্তর-পশ্চিম সানারপাড়ের বাসিন্দা হাজী জায়দুল ইসলাম দিনকালকে বলেন, আমার বাসা ডগাইর পশ্চিম সানারপাড়ের চৌরাস্তায়।এছাড়া ও ডগাইর নতুন পাড়াসহ এই এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। আমরা প্রতি মাসে বিল দেওয়ার পরও আলাদা সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। বছরের পর বছর এমন কষ্ট করেই যাচ্ছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশেরপুল, ডেমরা ও মাতুয়াইলের মাদ্রাসা, ডেমরা বাজার, মোমেনবাগ, মদিনাবাগ, শাহজালাল রোড, কোনাপাড়া, ডগাইর, বড়ভাঙ্গা, কোদালদোয়া, পূর্ব-পশ্চিম বক্সনগর, নিমাইকাশারী, নুরবাগ, বামৈল, আমুলিয়া মেন্দিপুর, সালামবাগ, পূর্ব ডগাইর নয়াপাড়া, কোনাপাড়া সিরাজউদ্দীন রোড। ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পশ্চম সানারপাড় এলাকা, ৬২নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, এবং খিলগাঁও, রামপুরা ও সবুজবাগ থানার, নাসিরাবাদ, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, নন্দিপাড়া, মাদারটেক, বাসাব, গোড়ান, বনশ্রী, ও আফতাবনগরসহ প্রায় সব জায়গায়ই গ্যাসের সংকট দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মিরপুরসহ অনেক এলাকার অবস্থাও প্রায় একইরকম। ডিএনসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমার ওয়ার্ডের পূর্ব রামপুরা জামতলায় গ্যাসের সমস্যা প্রকট। আমার বাসায়ই সকাল ৮টায় গ্যাস উধাও হয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার পর আবার গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ থাকে খুব কম। এই সমস্যাটা সারা বছরই থাকে।
মাদারটেক-নন্দী পাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহীনি রাবেয়া বেগম দিনকালকে বলেন, আমাদের আশপাশের এলাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে কথা বলতে বলতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এখন আলাদা চুলা ও সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করছি।
ডিএনসিসি ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ দিনকালকে বলেন, আমার ওয়ার্ডটি উত্তরার তুরাগ থানায়। এখানে প্রায়ই গ্যাসের চাপ কমে যায়। কোনো কোনো সময় সারাদিনও গ্যাস থাকে না। গভীর রাতে গ্যাস আসে। ফলে বাসিন্দাদের রান্নাবান্নায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।
এসব এলাকার বিভিন্ন কারখানা মালিকরা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে তাদের চলমান শিল্প উৎপাদন ইতোমধ্যেই তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, দেশের সর্বত্র ২০ থেকে ৩০ বছর আগে যত গ্রাহক চাহিদার ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক গ্যাসের বিতরণ পাইপ বসানো হয়েছিল বর্তমানে সেই চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।
পর্যায়ক্রমে যোগ হয়েছে ছোট, বড় ও মাঝারি অনেক শিল্প-কারখানার চাহিদা। প্রায় প্রতিটি এলাকায় বৈধ-অবৈধ গ্রাহকও বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন তিতাস গ্যাসের গ্রাহক চাহিদার চেয়ে সরবরাহের পরিমাণ অন্তত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম।
সূত্র আরও জানায়, সারা দেশে প্রতিদিন গ্যাসের গ্রাহক চাহিদা অন্তত ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ গ্রাহক চাহিদা পূরণ করতে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তিতাস গ্যাস আওতাভুক্ত এলাকায় প্রতিদিন গ্যাসের গ্রাহক চাহিদা রয়েছে অন্তত ২২০০ মিলিয়ন ঘটনফুট। এক্ষেত্রে বর্তমানে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ, ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান, ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর একইরকম তথ্য দিয়ে বলেন, মাসে মাসে গ্যাস বিল দিয়েও এলাকার মানুষকে গ্যাস সংকটের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বারবার তিতাসে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের জনসংযোগ বিভাগের ম্যানেজার মির্জা মাহবুব মোবাইল ফোনে দিনকালকে বলেন, আগের তুলনায় গ্যাসের চাহিদা অনেকগুণ বেড়েছে। তাছাড়া অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। সরকারিভাবে গ্যাসের নতুন নতুন উৎসের সন্ধান চলছে। নতুন উৎসের ব্যবস্থা হলে সংকট অনেকটা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি