মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার, কালের খবর :
পাঠক __ শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সিক্ত নয়া দিগন্ত। ১৮,তম বর্ষে পদার্পণ করলো।
কঠিনেরও কঠিন সময় পার করছে দেশের গণমাধ্যম। তা প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক সব মাধ্যমেই। দৈনিক নয়াদিগন্তের জন্য সময়টা আরো কঠিন।২০০৪ সাল থেকে সুনির্দিষ্ট কতোগুলো অঙ্গীকারও প্রত্যয় নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের পথচলা শুরু। চরম কঠিন সময়ও বৈরি পরিস্থিতিতেও পত্রিকাটি তার অঙ্গীকার থেকে একটুও সরেনি। বহু বাধা-বিপত্তির মাঝে তার দর্শন ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা সফল করতে গিয়ে পদে-পদে তিক্ত অভিজ্ঞতা নেয়া ছাড়া যেন গত্যান্তরও নেই প্রতিষ্ঠানটির।
রাজনৈতিক ভাবাদর্শ এবং রাষ্ট্রীয় নীতি ছাড়াও বৈশ্বিক মহামারি করোনা দুনিয়ার গণমাধ্যম জগতকে খাদে ফেলেছে। জীবনের সঙ্গে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করেছে সংবাদকর্মীদের। সংবাদপত্র,টেলিভিশন,রেডিও, অনলাইনসহ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এমন কঠিন সময়ে আর পড়েনি। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মালিকসহ সংবাদকর্মীদের অনেকে। মারাও গেছেন বেশ কয়েকজন। টেলিভিশনগুলোর অবস্থাও করুণ।পত্রিকাগুলোর সার্কুলেশনের সঙ্গে মার্কেটিংয়ে খরার টান।টেলিভিশনগুলোরও তাই। বলা বাহুল্র বিজ্ঞাপনই সংবাদপত্র,টেরীভিশনসহ গণমাধ্যমের আয়ের বড় উৎস। সেখানে এক সঙ্গীন দশা।
বিজ্ঞাপনও আয়ের পথ হারিয়ে সংবাদপত্রও গণমাধ্যমগুলো আজ গভীর সংকটে পড়েছে। এমন করুণ পরিস্থিতি গণমাধ্যমের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। জীবনের ঝুঁকিও বিড়ম্বনা নিয়ে তথ্য সরবরাহের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন চাকরিরতরা। ভালো বেতন পাওয়া সংবাদকর্মীর সংখ্যা কম। সীমিত বেতন-ভাতা দিয়ে অনেক সাংবাদিক পরিবার পরিজন নিয়ে টানাপড়েনে দিন পার করেন। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে বেশ ধকল সইতে হচ্ছে তাদের। সাংবাদিকদের কেউ কেউ গণমাধ্যমে মূল দায়িত্বে নিবেদিত থাকার বাইরেও একটু সচ্ছলতার আশায় টুকটাক নানা কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। বর্তমানে তাও বন্ধ। তারওপর এই দুর্যোগেও কারণে-অকারণে মামলা, আটক, হয়রানির শিকার সাংবাদিকরা। চলছে নানান উপায়ে হয়রানি। সব মিলিয়ে মিডিয়ার জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে।
এ খাদ থেকে ওঠা বা ঘুরে দাঁড়ানোর পথ নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। সংবাদপত্রও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মূল আয় বিজ্ঞাপন। করোনার মন্দার কারণে বিজ্ঞাপনের প্রবাহ কমে গেছে। পাশাপাশি বকেয়া বিলের প্রাপ্তিও অনিশ্চিত। তা প্রিন্টও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আর্থিক সংকটকে আরো তেজি করেছে। আশ্বাসের পরও সংবাদপত্রও গণমাধ্যমে কর্মরতদের দিকে রাষ্ট্রীয় মহল থেকে মানবিক হবার শুভলক্ষণ এখনো নেই। করোনার আগ থেকেই কমে গেছে সরকারি বিজ্ঞাপন। বেসরকারি খাতেও তাই। চলমান এই সংকটের সহজ কোনো সমাধান নেই। সংবাদপত্র অর্থনীতিও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল শিল্প। অর্থনীতি সচল হলে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হলে সংবাদপত্রশিল্প হয়তো ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে বলে অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্পও নেই।
বিশ্বায়নও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারি সেখানে আরো মাত্রা যোগ করেছে। সংবাদপত্রশিল্পকে ফেলেছে আরেক ভয়াবহতায়। পত্রিকাগুলোর মাসিক বেতন ব্যয়, অফিস ভাড়া, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পত্রিকা পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য সব ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেড়েছে। ছোট-বড়, সাময়িক-দীর্ঘমেয়াদি মিলিয়ে নানা ধরনের সংকটকে সঙ্গী করেই চলতে হয় গণমাধ্যমকে। সংবাদপত্রের ইতিহাস তাই বলে। অন্যভাবে বলা হয়, সংকট বা দুর্গতি নিয়েই গণমাধ্যমের জন্ম। যুদ্ধ-মহামারিসহ কালে কালে নানা ধরনের সংকট-দুর্যোগ মোকাবেলা করেই টিকে ছিল সংবাদপত্র। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নয়া দিগন্তের ভাগ্য আরো করুণ। প্রতিকূলতার মাঝে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা গত কয়েক বছরে পত্রিকাটির সাংবাদিক-কর্মচারীসহ কর্তৃপক্ষের হয়েছে তা ভবিষ্যতে তাদেরকে আরো সামনে নেবে । সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আগামীর পথচলার ইতিহাস কিন্তু তাই বলে।
নানা বাধা-জটিলতার মধ্যেও গত দুই দশকে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে একটা নীরব পরিবর্তন এসেছিল। বেসরকারি টেলিভিশন-রেডিও’র সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এখন ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন চালু রয়েছে। সম্প্রচারের অপেক্ষায় আরো ১৫টি। ২৬টি বেসরকারি রেডিও চালু রয়েছে। প্রত্যেক জেলায় রয়েছে কমিউনিটি রেডিও । সরকারি বিজ্ঞাপন তালিকাভুক্ত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সংখ্যা ৭০৭টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ৩৬৫টি, মফস্বল থেকে প্রকাশিত ৩৪৭টি পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। এর মধ্যে দৈনিক রয়েছে ৫১২টি।
পাঠক __ শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সিক্ত নয়া দিগন্ত।
সত্যের পথে অবিচল থাকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নয়া দিগন্ত ১৮ তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে গতকাল লেখক, - পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় নয়া দিগন্ত অফিস। কেউ কেউ ফুল হাতে আবার কেউ মিস্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন পত্রিকার সাংবাদিক কর্মকর্তা - কর্মচারীদের । সকালে পত্রিকার বোর্ডরুমে কেক কেটে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়। এ সময় সেখানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা নয়া দিগন্তের সত্য প্রকাশের সাহসের প্রশংসা করে আগামীতে ও এ ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানান ।।
এদিকে বর্তমানে গণমাধ্যমে আয়ের উৎস সংকট অবস্থা খুব বিরাজ করছে । এগুলোতে
অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকাও টিভি চ্যানেল নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলও সংবাদপত্রের বিভিন্ন বিভাগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। নিয়মিত বেতন হয় না বেশিরভাগ টেলিভিশনও সংবাদপত্রে।
চাকরি হারানো বা বেতন নিয়ে করোনার আগে থেকেই সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমগুলোতে এই সংকট ছিল। করোনার মতো মহামারির সময়ে এসে সংকট আরো প্রকটতর রূপ নিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য কোনো সহযোগিতা ছাড়াই দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদেরও পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে না তাকিয়ে করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সংবাদ সরবরাহে নিয়োজিত থেকেছে। করোনা মহামারীসহ এমন নিষ্ঠুর পরিস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমের আগাম আভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি না থাকার সত্যতা লুকানোর মতো নয়। করোনায় অতিমাত্রায় গণ্ডিবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজস্ব সোর্স কমে গেছে সংবাদকর্মীদের। ফলে অন্যদের তথ্যের উপরই বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ কমে গেছে। থমকে গেছে অনুসন্ধানী সংবাদকর্ম। তা গত ক’দিন ধরে সাংবাদিকতার তাল-লয় পাল্টে দিয়েছে। গোটা বিশ্বেই ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন জনপ্রিয়। অবস্থার অনিবার্যতায় ফেসবুক,গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তফাৎ প্যাঁচিয়ে গেছে। ফেসবুকের কোনো সম্পাদক না থাকায় এর কর্তৃপক্ষ নেই। জবাবদিহিতা নেই। দায়িত্বশীলতাও নেই। ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরে বেড়ায় অনেক ফেক নিউজ, ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য। এই চাপে মূলধারার গণমাধ্যমও আক্রান্ত। তা পেশাদার গণমাধ্যমের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিউজ পোর্টাল বাংলা পোস্ট | প্রাবন্ধিক | ও সদস্য ডিইউজে |
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি